আসানসোল, 24 ডিসেম্বর: বিশেষভাবে সক্ষম যুবতীকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল আসানসোল আদালত । সালানপুরের বাসিন্দা অভিযুক্ত রবি তুড়ি ওরফে গুটুকে অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের (দ্বিতীয়) বিচারক তানিয়া ঘোষ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনান ।
এর পাশাপাশি ওই যুবককে 20 হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে । বিচারক নির্যাতিতার পরিবারকে 5 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন । যা রাজ্য সরকারের ভিকটিম ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে দেওয়া হবে ।
কী হয়েছিল ?
সরকার পক্ষের আইনজীবী তাপস উকিল জানিয়েছেন, 2020 সালের জুলাই মাসে ওই যুবতী হঠাৎ প্রচণ্ড পেটে ব্যথা অনুভব করেন । তাঁর পরিবারের লোকেরা তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানতে পারা যায়, যুবতী 4-5 মাসের অন্তঃসত্ত্বা । এরপর পরিবারের লোকেরা তাঁকে বাড়িতে এসে জানতে চান, কীভাবে এই ঘটনা ঘটল । যুবতী তখন জানান, পাড়ার ছেলে রবি তুড়ি তাঁকে রেললাইনের ধারে নিয়ে গিয়ে অনেক কিছু করেছিল । পরিবারের লোকেরা এরপর সালানপুর থানায় অভিযোগ করে ।
20 জুলাই গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত রবি তুড়ি । ওই যুবতীর পরিবার পুলিশকে জানিয়েছিল, যুবতীর 'আইকিউ' খুবই কম । তাই তার সঙ্গে কী ঘটছে, সেটা সে বুঝতে পারেনি । এরপর চিকিৎসকরা ওই যুবতীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন । পাশাপাশি যুবতীর মানসিক রোগের পরীক্ষা করেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডিপি রায় চৌধুরী । শুধু তাই নয়, বিচারকের নির্দেশে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকলজি বিভাগের দুই অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক ওই যুবতীকে পরীক্ষা করে জানান, যুবতীর পরিবারের দাবি সঠিক । যুবতীর আইকিউ লেভেল যথেষ্টই কম ।
অন্যদিকে পুলিশ দাবি করে, অভিযুক্ত যুবক পুলিশের কাছে তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেছে । পাশাপাশি যুবতী একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন । আদালতের নির্দেশে সেই সন্তানের ময়নাতদন্ত হয় । সেই সন্তানের রক্তের নমুনার সঙ্গে অভিযুক্ত যুবকের রক্তের নমুনা মিলিয়ে দেখা হয় । তাতে মিল পাওয়া যায় । সেটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে দাখিল হয় কোর্টে । আর এরপরেই পুলিশ দ্রুত চার্জশিট দেয় । জেল হেফাজতে অভিযুক্ত থাকাকালীনই ট্রায়াল শুরু হয়ে যায় । তাই আর ওই যুবক জেল থেকে ছাড়া পায়নি ।
মামলা চলাকালীন আদালতে তিন চিকিৎসক-সহ মোট 15 জন সাক্ষ্যদান করেছেন । সব দিক বিবেচনা করে অভিযুক্ত যুবক রবি তুড়িকে দোষী বলে সাব্যস্ত করেন আসানসোল অতিরিক্ত দায়রা আদালত (দুই)-এর বিচারক তানিয়া ঘোষ । এরপরেই দোষীকে যাবজ্জীবন কারদণ্ডের সাজা শোনান তিনি । এখনও বিচার পায়নি আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসক তরুণী । সেখানে নিম্ন আদালতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে এমন একটা রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলে মনে করছে ওয়াকিবহালমহল ।