মালদা, 22 জুন: ফর্ম ফিল-আপ করেননি, পরীক্ষাও দেননি ৷ অথচ পিএসসি-র ওয়েবসাইটে ফুড ইনস্পেক্টর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁর নাম ৷ ঘটনায় রীতিমতো হতবাক হয়ে চাঁচল থানার দ্বারস্থ মালতিপুর এলাকার যুবক গোলাম সারওয়ার আলম সিদ্দিকী ৷ নিয়োগ মাফিয়াদের হাত যে কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তার প্রমাণ মালতিপুরের গোলাম ৷ এদিকে ফোনে বারবার আসছে টাকার দাবি ৷ টাকা না-দিলে মিলছে খুনের হুমকি ৷ তাই আর দেরি না-করে সোজা চাঁচল থানায় ছোটেন তিনি ৷ পুরো ঘটনা তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বেকার যুবক ৷
গোলাম বলেন, "পরিমল কুণ্ডু নামে এক প্রাথমিক শিক্ষক 2017 থেকে 2020 সাল পর্যন্ত মালতিপুরে কর্মরত ছিলেন ৷ তাঁর বাড়ি নদিয়ার ভীমপুরে ৷ মালতিপুরে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ৷ তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, তিনি নাকি টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন ৷ আমি তাঁকে নিজের চাকরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলি ৷ হঠাৎ তিনি একদিন মেসেজ করে আমাকে জানান, তাঁর কাছে ফুড ইনস্পেক্টরের চাকরির খবর রয়েছে ৷ সাতদিনের মধ্যে চাকরিতে জয়েন করিয়ে দেবেন ৷ চাকরিতে যোগদানের পর তিনি আমার কাছ থেকে টাকা নেবেন ৷ বিষয়টি আমার ঠিক মনে হয়নি ৷ এমনটা যে হতে পারে তা আমার কল্পনাতেও ছিল না ৷ তাই আমি তাঁকে চ্যালেঞ্জ করি ৷ তাঁকে বলি, আগে কোয়ালিফাই হিসাবে আমার নাম তালিকায় তুলুন ৷ তারপর টাকা দেব ৷"
গোলাম আরও বলেন, "এই চাকরির জন্য তাঁর সঙ্গে সাত লক্ষ টাকার রফাও করি আমি ৷ পরিমল কুণ্ডু দাবি করেন, 2018 সালের ফুড এসআই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনি আমার নাম কোয়ালিফাই হিসাবে তালিকায় তুলে দেবেন ৷ গত 14 জুন ওই তালিকায় তিনি সত্যিই আমার নাম তুলে দেন ৷ তা দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ ৷ পিএসসির সেই ওয়েবসাইট সঠিক কি না, তা নিয়ে আমি মাস্টারমশাইকে প্রশ্ন করি ৷ তিনি আমাকে যে কারও কাছে ওই ওয়েবসাইট দেখিয়ে নিতে বলেন ৷ তিনি আরও বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে আমার জয়েনিং লেটার চলে আসবে ৷"
গোলাম জানান, "তিনি (পরিমল কুণ্ডু) আমাকে 50 শতাংশ টাকা পাঠাতে বলেন ৷ বাকি টাকা আমি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর নেবেন বলে জানান ৷ কিন্তু আমি তাঁকে কোনও টাকা পাঠাইনি ৷ তারপর থেকেই তিনি প্রতিনিয়ত আমাকে ফোন করছেন ৷ টাকা না-দিলে খুনের হুমকি দিচ্ছেন ৷ আমি জীবনে কোনওদিন এই নিয়োগ পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করিনি ৷ তারপরেও এই জালিয়াতি ৷ একদিকে খুনের হুমকি, অন্যদিকে এমন জালিয়াতি ৷ আমি ভয় পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি ৷ এই ঘটনার তদন্ত আমি পুলিশকে সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি ৷"
জানা গিয়েছে চাঁচল থানায় সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন গোলাম ৷ পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে ৷ পরিমল কুণ্ডু নামে ওই ব্যক্তিকে ধরতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৷ গুরুত্ব সহকারে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷