কলকাতা, 30 সেপ্টেম্বর: ট্যাংরার শীল লেনের দাস বাড়ির পুজো এবছর 18'তে পা দিল ৷ দাস বাড়িতে মা দুর্গা পূজিত হন কন্যা রূপে। প্রতিবছর কৃষ্ণপক্ষের আদ্রা নক্ষত্র মেনে দেবীর বোধন হয় অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে এই পুজো শুরু হয় ৷ সেমতো এবার গত 25 সেপ্টেম্বর থকে মা দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠেছে দাস পরিবার ৷ এই পুজো চলে দুর্গানবমী পর্যন্ত। এই পুজোর উদ্যোক্তা বাড়ির দুই সন্তান প্রসেনজিৎ দাস এবং চিকিৎসক মৌমিতা দাস।
পুরোহিত বাড়িরই ছেলে প্রসেনজিৎ দাস ৷ তিনি পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। আগে তাঁর দিদি চিকিৎসক মৌমিতা দাসও ভাইয়ের সঙ্গে পৌরহিত্য করতেন ৷ তবে, বিয়ের পর তিনি আর তা করেন না। থাকেন নেপথ্যে।
এই পুজোয় কোনও স্বপ্নাদেশের কাহিনি নেই। যা রয়েছে সেটা হল ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতিকে ধরে রাখা। প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি দুই ভাই, বোন সংস্কৃত শিখতে শুরু করেন। ঝোঁক ছিল পূজা অর্চনায়। তাই পুজোর রীতি-প্রথা জানতে পুরাণ, বেদ ও উপনিষদ পড়তে শুরু করেন দু'জনে।
পুজোর নিয়ম আলাদা-
প্রসেনজিৎ দাস বলেন, "আমরা পুজো নিয়ে পড়াশোনা করেছি। অনেক বই রয়েছে দুর্গাপুজো নিয়ে। এক এক বার এক এক বই (রঘুনন্দনের দুর্গা উৎসব তত্ত্ব)-য়ের মতে আমরা পুজো করি। সেই বইতে ঠিক যেভাবে দেবীকে বর্ণনা করা আছে, সেভাবেই সেজে ওঠেন মা। আচার নিয়মেও থাকে বইয়েরই নির্দেশ। এবারের সিংহটা দেখলে আপনার ঘোড়া মনে হবে।"
পুজোর বিশেষত্ব সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, "আগে দেবীর মূর্তি কাঠের কিংবা অষ্ঠধাতু দিয়ে তৈরি হতো। তখন আসল সিংহের রূপ তাতে দেওয়া সম্ভব হতো না। যে বই মেনে এবারের পুজো সেই বই বহু প্রাচীন। তাই সেখানে এরকমই সিংহ ছিল। শাস্ত্রবিধি মেনেই তৈরি হয়েছে এই মূর্তি ৷ দেবী এখানে বাড়িতে ষোড়শ উপাচারে পূজিতা হন, যার মধ্যে রয়েছে মধুপর্ক, মাল্য, কাজল, রক্তচন্দন ৷"
পুজোর বিশেষত্ব-
পরিবারের সদস্যদের থেকে কথা বলে জানা গেল, সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধিপুজো ও নবমীতে চারটি বলি হয় দাস বাড়িতে। চালকুমড়ো বলি হয় ৷ সন্ধিপুজোর সময় যখন বলি হয় তখন কাউকে মায়ের সামনে বসতে দেওয়া হয় না। মায়ের তখন রুদ্র মূর্তি।
নবমীতে কুমারী পুজোও হয়। আর দশমীতে পান্তা আর কচুর লতি নিবেদন করা হয় মাকে। বর্তমানে বাড়ির সদস্যরা আনন্দ পালিত রোডে থাকলেও পুজো হয় শীল লেনে দাসদের দুই পুরুষের আদি বাড়িতেই। সেখানে বাড়ির দেবতা রাধা-কৃষ্ণের ঘরের পাশেই দুর্গাপুজোর স্থান।