দুর্গাপুর, 26 জুন: প্রথমে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে আনা ৷ তারপর তাঁদের বিয়ে দিয়ে ভিন রাজ্যে পাচার ৷ এভাবে নারীপাচারের ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বেনাচিতি এলাকায় ৷ ইতিমধ্যে এই পাচারচক্রের প্রধান অভিযুক্ত রঞ্জন মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ তিনি সেপকো টাউনশিপের বাসিন্দা ৷ এর সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও 2 জনকে ৷
জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে উত্তর 24 পরগনার বসিরহাটের মিনাখাঁ থেকে 18 বছরের একটি ছাত্রী নিখোঁজ হয়ে যান ৷ বসিরহাট থানায় নিখোঁজের একটি অভিযোগ দায়ের করে তাঁর পরিবার ৷ অভিযোগ, পুলিশের তদন্ত চলাকালীন ভুয়ো উকিল সেজে ওই যুবতীর বাবাকে মূল অভিযুক্ত ফোন করে ৷ ফোনে যুবতীর জন্মের শংসাপত্র চাওয়া হয় ৷ শংসাপত্র না পাঠালে তাঁর মেয়ের রেজিস্ট্রি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান হয় ৷ তবে যুবতীর বাবার সন্দেহ হওয়ায় তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন ৷ কয়েকদিন আগে যুবতীর মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে দুর্গাপুরের ধুনরাপ্লটের খোঁজ পান তদন্তকারী পুলিশ কর্মীরা ।
এরপর সোমবার রাতে যুবতীর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে দুর্গাপুর পৌঁছন বসিরহাট জেলা পুলিশের একটি দল ৷ মঙ্গলবার দিনভর তল্লাশি চালানোর পর বিকেলে ধুনরাপ্লটের একটি ভাড়াবাড়ির সন্ধান পায় পুলিশ ৷ সেই সময় সেখানেই উপস্থিত ছিলেন এই ঘটনার প্রধান চক্রী রঞ্জন ৷
পুলিশের অনুমান, এই ভাড়া বাড়ি থেকে পাচারের কাজ চালাতেন অভিযুক্ত রঞ্জন ৷ কিন্তু সেখানে নিজেকে হিউম্যান রাইটসের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন রঞ্জন ৷ এদিকে, ঘটনাটি জানাজানি হতেই স্থানীয়রা রঞ্জনের উপর চড়াও হয় ৷ শুরু হয় গণপিটুনি। এরই মধ্যে ভাড়াবাড়ির মালিক নাটু গড়াই এবং প্রবীর দাস নামের আরও এক স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ এরপর ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে বাঁচিয়ে রঞ্জনকে গ্রেফতার করা হয় ৷
সূত্রের খবর, অভিযুক্ত রঞ্জন মুখোপাধ্যায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে এই ভাড়াবাড়িতে নিয়ে আসত । তারপর তাঁদের বিয়ে দিয়ে নবদম্পতিকে বিভিন্ন রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হত বলে জানিয়েছে পুলিশ । এই পাচারকাণ্ডে ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে ওই যুবতীর সন্ধানে তল্লাশি চালানো হবে বলে জানিয়েছে বসিরহাট পুলিশ । পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর ৷
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, "বসিরহাট জেলা পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটরও তদন্ত চলছে ৷ এই চক্রে এখানে আর কারা কারা যুক্ত আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।"