মগরাহাট ও কলকাতা, 14 ডিসেম্বর: গল্ফগ্রিন খুন-কাণ্ডে অবশেষে মিলল মহিলার দেহের বাকি অংশ ৷ রিজেন্ট কলোনিতে একটি বাড়ির পিছনে জঙ্গল থেকে দেহাংশগুলো উদ্ধার করেছে কলকাতা পুলিশ ৷
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, মুণ্ড, গলা থেকে কোমড় এবং দুই পা, দেহটি ঠান্ডা মাথায় তিনটি ভাগে খন্ড করা হয় ৷ আগেই গ্রাহামস রোড থেকে মহিলার মুণ্ড উদ্ধার হয়েছিল ৷ এবার রিজেন্ট কলোনি থেকে মিলল শরীরের নিম্নাংশ ।
এই ঘটনায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মহিলার দেহ টুকরো টুকরো করা হয় ৷ সেই অস্ত্র এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেননি তদন্তকারীরা । সেটির খোঁজ চলছে ৷ এর জন্য ঘটনার মূল অভিযুক্ত আতিকুর রহমানকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পুনর্নির্মাণ করতে চান তদন্তকারীরা ।
গল্ফগ্রিনে আবর্জনার স্তূপ থেকে মহিলার কাটা মুণ্ড উদ্ধারের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জামাইবাবুকে শনিবারই গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ ৷ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে টানা জেরা করা হয় ৷ এরপরেই মহিলার বাকি দেহাংশের খোঁজ পেলেন লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা ।
অভিযুক্তকে প্রাথমিকভাবে জেরা করে জানা গিয়েছে, ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে ওই মহিলাকে প্রথমে খুন করা হয় । পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ধর থেকে দেহ আলাদা করে দেওয়া হয় । এরপর মুণ্ড একটি প্লাস্টিকে মুড়ে গল্ফগ্রিনে আবর্জনার স্তূপ ফেলে আসেন অভিযুক্ত । পরে ওই মহিলার বাকি দেহ খণ্ড করে রিজেন্ট কলোনিতে জঙ্গলের মধ্যে ফেলা হয় ।
মৃতের পরিবার সূত্রে খবর, দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করতে আসেন খাতেজা বিবি ৷ সেখানেই মর্মান্তিক পরিণতি হল মগরাহাটের পৈলান পাড়ার বাসিন্দা । স্বামীর সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে থাকতেন না তিনি । বাপের বাড়িতে থেকেই নিজের দুই সন্তানকে মানুষ করছিলেন খাতেজা বিবি ।
আরও জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে খাতেজাকে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ খুঁজে দেন তাঁর জামাইবাবু আতিকুর রহমানই । প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার কাজে গিয়েছিলেন খাতেজা । এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি ৷ পরিবারের লোকজন উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন ৷ বারবার খাতেজা বিবির মোবাইলে ফোন করলে সেটি সুইচড অফ বলে । এরপর জামাইবাবুকে ফোন করে ঘটনাটি জানানো হয় ৷ এরপর তিনি নাকি খোঁজখবর শুরু করেন মহিলার ।
শুক্রবার রাতে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, কলকাতার গল্ফগ্রিনে আবর্জনার স্তূপে খাতেজা বিবির কাটা মুণ্ড উদ্ধার হয় । এরপর পুলিশ সেই কাটা মুণ্ডর ছবি পরিবারকে দেখায় ৷ সেই ছবি দেখে পরিবারের লোক চিনতে পারে মৃত মহিলা খাতেজা বিবিই । এই ঘটনার তদন্ত নেমে শুক্রবার রাতে ডায়মন্ড হারবার থানার অন্তর্গত পঞ্চগ্রাম এলাকা থেকে আতিকুর রহমানকে আটক করা হয় । এরপর ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ ধৃতকে লালবাজারের হাতে তুলে দেয় ।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, খাতেজা বিবি কোনোভাবে বছর খানেক আগে পেশায় রংয়ের মিস্ত্রি আতিকুর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন । এরপর পরিবারের চাপে বিগত তিন মাস ধরে তিনি সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন । এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আতিকুর রহমান । সেই আক্রোশ থেকেই খুন বলে প্রাথমিক অনুমান ।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসএসডি) বিদিশা কলিতা বলেন, ‘‘মহিলার প্রতি ধৃতের একটা ফিলিংস ছিল । কিন্তু মহিলা তাতে কোনোভাবেই রাজি ছিলেন না । 12 তারিখ কাজের শেষে মহিলা বাড়ি যেতে চাইলেও ধৃত তাঁকে আটকে দেয় । পরে সে মহিলাকে খুন করে । সে রংমিস্ত্রির কাজ করতো । ফলে মহিলাকে খুন করে তার দেহ টকরো করে রঙের বস্তায় দেহাংশ মুড়ে ফেলে দেয় । আমরা তাকে আগামিকাল (রবিবার) আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এই ঘটনায় আরও তদন্ত পক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাব ।’’
এ বিষয়ে নিহত গৃহবধূর পরিবারের সদস্য শামীম পৈলান বলেন, "বেশ কয়েক বছর আগে সংসার চালানোর জন্য কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করত খাতেজা বিবি । জামাইবাবু এই কাজ খুঁজে দিয়েছিল তাঁকে । গত বৃহস্পতিবার প্রতিদিনের মতোই কাজে গিয়েছিল ৷ এরপর আর বাড়ি ফিরেনি ৷ আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি । তাও কোনও সন্ধান পায়নি । এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের কাছে খবর আসে যে উনি মারা গিয়েছেন । কী কারণে মারা গেল তা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ । আমরা চাই এই খুনের পিছনে যে বা যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে পুলিশ প্রশাসন গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক ।"