গাইঘাটা, 29 ডিসেম্বর: বেহালায় ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে জাল পাসপোর্টের ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন মনোজ গুপ্ত ! শনিবার মধ্যরাতে তাঁকে উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটা থেকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা ৷ গাইঘাটার যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন মনোজ, সেখান থেকেও উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ অভিযোগ, তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এক মহিলা ৷ সেটা তাঁর নিজের বাড়ি নয়, ভাড়াবাড়ি ৷ সেখানে তিনি ছেলেকে নিয়ে থাকেন ৷
রবিবার মহিলার বাড়িতে গেলে তিনি দাবি করেন, মনোজ গুপ্তকে তিনি চেনেন না ৷ ওই ব্যক্তি কে, কী কাজ করতেন কিছুই নাকি জানেন না তিনি ৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা জানিয়েছেন, "গত পরশু আমার সম্পর্কে এক ভাই ওই ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন ৷ ভাই বলেছিল, দু’দিন থাকবেন তিনি ৷ পারিবারিক সমস্যার কারণে দু’দিনের জন্য থাকতে দিতে ৷ ভাইকে বিশ্বাস করেই ওঁকে আমার ভাড়া একটা ঘরে থাকতে দিয়েছিলাম ৷"
কে মহিলার সেই ভাই ! মহিলা জানান, "আমার ভাইয়ের নাম তপন ভদ্র ৷ চাঁদপাড়া বাজারে সোনার দোকান রয়েছে ৷ বাকিটা ওঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন ৷ ওই লোকটা কী করত, কোথায় বাড়ি আমি জানি না ৷" উল্লেখ্য, মহিলা যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তার মালিকের নাম বিশ্বজিৎ দাস ৷ তিনি বাইরে থাকেন ৷ ওই বাড়িতে দু’টি ভাড়াটিয়া বসিয়েছেন তিনি ৷
তবে, পুলিশ যখন শনিবার রাত বারোটা নাগাদ ওই বাড়িতে হানা দেয়, তখন মহিলা কিছুই বুঝতে পারেননি বলে দাবি করেছেন ৷ তাঁর কথায়, "পুলিশ লোকটা জিজ্ঞেস করেছিল, তাঁর বান্ধবী কোথায় রয়েছে ? তাঁর ঠিকানা বলতে ৷ আর ওঁকে নিয়ে চলে যায় ৷" এদিকে, যে ভাইয়ের কথা মহিলা জানিয়েছিলেন সেই তপন ভদ্রর ফোন সুইচ অফ ৷ দোকানও বন্ধ ৷ বাড়িতে গেলে তাঁর স্ত্রী স্বপ্না ভদ্র বলেন, "মনোজ গুপ্ত নামে কাউকে আমরা চিনি না ৷ আমাদের বাড়িতেও কখনও এমন নামের কেউ আসেনি ৷"
এই ঘটনায় হতবাক আশেপাশের বাসিন্দারাও ৷ দেবাশিস ঘোষ নামে এক প্রতিবেশী বলেন, "বিশ্বজিৎ দাস বাড়িতে থাকেন না ৷ দু'টি পরিবার তাঁর বাড়িতে ভাড়া থাকে ৷ দিনের অধিকাংশ সময় বাড়ির গেট তালা বন্ধ থাকে ৷ ফলে এলাকার মানুষের ওই বাড়িতে যাওয়া আসা নেই ৷"
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে অচেনা কাউকে এভাবে আশ্রয় দিতে পারেন একজন ৷ তাও আবার যেখানে ছেলেকে নিয়ে তিনি একা থাকেন ৷ এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে ৷ উল্লেখ্য, এই গাইঘাটার বিস্তীর্ণ এলাকা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ৷ যার অনেক অংশে কাঁটাতারের বেড়াও নেই ৷ বিএসএফের নজরদারি এড়িয়ে এই এলাকা দিয়ে অতীতেও অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছে ৷
তাহলে কি মনোজ গুপ্ত আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালানোর পরিকল্পনা করছিলেন ৷ আর সেই কারণেই কি অপরিচিত মহিলার ভাড়াবাড়িতে দু’দিনের জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন ৷ এমন নানা প্রশ্ন উঠছে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৷ যদিও, পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে ৷