বনগাঁ, 19 ফেব্রুয়ারি: অন্তঃসত্ত্বা হয়েও উচ্চমাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে খামতি রাখেননি ৷ আর এ বার সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পরদিনই হাসপাতালের বেডে শুয়ে উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিলেন নাজমা মণ্ডল ৷ পুত্রসন্তানের আগমনে আবেগে ভেসে যাওয়া নয়, অস্ত্রোপচারের যন্ত্রণায় বিছানায় সিঁটিয়ে যাওয়া নয়, বরং আপাতত এ সব ভুলে একমাত্র উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়াকেই ধ্যান-জ্ঞান করেছেন তিনি ৷ তাই কাকুতি-মিনতি করে ডাক্তারদের অনুমতি আদায় করে নিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের এইচডিইউ ইউনিটে শুয়ে পরীক্ষা দিলেন সত্য মা হওয়া নাজমা ৷
নাজমা উত্তর 24 পরগণার বনগাঁর ঘাটবাওড় অঞ্চল আদর্শ বিদ্যালয়ের ছাত্রী । পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের পর তিনি পড়াশোনা বন্ধ করেননি । সংসারের সমস্ত কাজ সামলে সময় পেলেই বই নিয়ে পড়তে বসে যেতেন । সামনেই যখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, তখন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন নাজমা ৷ তবে তাতেও থেমে থাকেনি পরীক্ষার প্রস্তুতি ৷
তাঁর পরীক্ষা পড়ে বনগাঁ শক্তিগড় হাইস্কুলে । শুক্রবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে তিনি খুব কষ্ট করেই বাংলা পরীক্ষা দিতে যান ৷ কিন্তু তার পরের দিন, অর্থাৎ গত শনিবার প্রসববেদনা শুরু হলে, তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন । রবিবার সিজারের মাধ্যমে তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্ঞান ফিরতেই নাজমার চিন্তা শুরু হয়ে যায় পরীক্ষা নিয়ে ৷ তিনি চিকিৎসকদের জিজ্ঞেস করেন যে, পরীক্ষা দিতে পারবেন কি না ৷ তিনি পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্কুল এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হয় ৷ নাজমার উৎসাহ দেখে কোনও পক্ষই তাঁকে না করতে পারেননি ৷ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে হাসপাতালের এইচডিইউ ইউনিটের বিছানায় শুয়ে যাতে নাজমা পরীক্ষা দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হয় ৷ সেই মতোই সোমবার হাসপাতালের বেডে শুয়েই ইংরজি পরীক্ষা দেন এই তরুণী-মা ।
নাজমার ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় খুশি তাঁর পরিবার । তাঁর শাশুড়ি মরিয়ম মণ্ডল বলেন, "বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে বউমা ৷ ও এখন পরীক্ষা দিচ্ছে ৷ তাতেও আমরা খুশি, পাশ করলে আরও খুশি হব ।"
নাজমার ইচ্ছেশক্তি ও মনের জোরকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই । তিনি বলেন, "মা এবং শিশু দুজনেই ভালো আছে । সিজার করার পরে জ্ঞান ফিরতেই নাজমা ডাক্তারদের জানায় যে সে পরীক্ষা দিতে চায় ৷ আমরা সেই মতো প্রশাসনিক স্তরে কথা বলে নাজমার পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি ।"
আরও পড়ুন: