মেদিনীপুর, 4 ফেব্রুয়ারি: সন্তানকে মানুষ করার ক্ষমতা নেই ৷ তাই সদ্যোজাতকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন মা ৷ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী - সবারই অভিযোগ, নিজের অষ্টম কন্যাসন্তানকে বেআইনিভাবে এক ব্যক্তিকে দিয়ে দিয়েছেন এক মহিলা । যদিও তাঁর দাবি, তিনি কোলের সন্তানকে বিক্রি করেননি ৷ শুধু বাচ্চার ভবিষ্য়তের কথা ভেবে পরিচিত একজনের হাতে সন্তানকে তুলে দিয়েছেন ৷ যদিও ওই মহিলার কথায় অনেক অসঙ্গতি দেখা গিয়েছে ৷
এই বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, "এইভাবে কেউ বাচ্চা কারওকে দিতে পারে না । এটা ক্রিমিনাল অফেন্স এবং অভিযোগের ভিত্তিতে তা প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত করা উচিত ।"
ঘটনাক্রমে জানা যায়, মেদিনীপুর শহর থেকে কিছু দূরেই ফুলপাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা শিবানী সিং ও অমর দাস । অমর দাস পেশায় মজুর এবং শিবানী সিং পরিচারিকার কাজ করেন । অমর দাস মাস দুয়েক আগে সদর ব্লকের ফুলপাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া নিয়ে আসেন । আর তারপরেই জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে একটি শিশুকন্যার জন্ম দেন শিবানী সিং । শিবানী ও অমরের এটা অষ্টম শিশু । যার জন্ম হয়েছে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ।
বাড়িতেই শিশুটির জন্ম হয় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী । সম্প্রতি গত দু-তিন দিন ধরেই শিশুটির কোনও খোঁজ খবর না পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয় ৷ তাঁরা শিশুটির মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানতে পারে, শিশুটি হাতবদল হয়ে গিয়েছে । পাড়া প্রতিবেশীদের দাবি, শিশুটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অন্যত্র । যদিও বাচ্চার মায়ের দাবি, কোনও বাচ্চাকেই তিনি বিক্রি করেননি । বাচ্চাকে মানুষ করতে পারবেন না বলেই পরিচিত এক দাদাকে দিয়ে দিয়েছেন ।
এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকা জুড়ে । মেদিনীপুর সদর ব্লকের ফুলপাহাড়ি এলাকায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী প্রত্যেকেই জানেন যে, বাচ্চা যাঁর বাড়িতে হয়েছিল সেই বাড়িতে নেই । বাচ্চাটি হাতবদল হয়েছে । কিন্তু সবাই সব জেনেও কোনও উদ্যোগ নেননি বাচ্চাটি উদ্ধারেরর ৷ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী প্রত্যেকেরই দাবি, পুরো বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত । স্থানীয় প্রশাসনকে সবকিছু জানিয়ে যতাযথ তদন্ত চাইছেন স্থানীয় মানুষজনও ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মা শিবানী সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করালে তিনি বলেন, "কারও কাছে সাহায্য চাইনি বরং অষ্টম শিশুকন্যা হওয়ার পর আরামবাগের এক পাতানো দাদার কাছে দিয়ে এসেছি । যদিও তিনি বকলমে স্বীকার করেন দাদা তাঁর নিজের না । বরং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ । তবে সদ্যোজাতকে কেন তাঁকে দেওয়া হল, সে প্রশ্ন এড়িয়েছেন শিবানী । যদিও কটাক্ষের সুরে শিবানী বলেন, এখানে প্রচুর বাচ্চা বেচাকেনা হয় । অনেকে বাচ্চা জঙ্গলে ফেলে দেয় সেগুলো নজর দেয় না প্রশাসন ।
যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় রবি নন্দী বলেন, ওই মহিলা এখানকার না ৷ ও অন্য কোথাও থেকে এসে ভাড়ায় থাকে । ওর যখন বাচ্চা হয় আমরা সবাই দেখতে গিয়েছিলাম কিন্তু তার পর কয়েক দিনের মধ্যেই আর ওই বাচ্চাকে দেখতে পাইনি । ওর সদ্যজাত শিশুকে অন্য কোথাও বিক্রি করে দিয়েছে বলেই আমাদের মত । এ বিষয়ে প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য দীপালি রায় বলেন, "যখন হয়েছিল তখন আমরা দেখে এসেছি এবং ছবিও তুলে এনেছি ৷ কিন্তু সম্প্রতি আর বাচ্চাটাকে দেখতে পাচ্ছি না। ওই মহিলা এখানকার না, ওর আধারে কার্ড ভোটার কার্ড কিছুই নেই । আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানাব । অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মৌসুমী দত্ত বলেন, "আমরা বাচ্চাটিকে জন্ম হওয়ার সময় দেখে এসেছিলাম এবং ওই মহিলাকে বলেছিলাম বাচ্চাকে কোনওভাবে কারওকে না দিতে । এখন কয়েকদিন বাচ্চাকে দেখতে পাচ্ছি না । ওই মহিলা পরিষ্কারভাবে কিছু বলছে না ৷ আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব ৷"
যদিও এ বিষয়ে জেলা মুখ স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য শংকর সড়ঙ্গীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "এইভাবে সদ্যোজাত শিশু কারওকে দেওয়া যায় না, এটা ক্রিমিনাল অফেন্স । বাচ্চা কারওকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি পোর্টাল রয়েছে, সেখানে গিয়ে আবেদন করতে হয় । সেই আবেদনের ভিত্তিতে কিছু ফর্মালিটি রয়েছে সেগুলো পূরণ করে সরকারি হিসাবেই বাচ্চা দত্তক নেওয়া যায় । যদি ওই মহিলা এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে পুলিশকে বলব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার ।"
আরও পড়ুন: