কলকাতা, 21 নভেম্বর: হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক রাখার কাজ করে পেসমেকার ৷ একে বিকল্প হৃদযন্ত্র হিসেবেই দেখেন অনেকে ৷ তবে এই যন্ত্রের কারণে রোগীকে নানা ঝক্কিও পোহাতে হয় ৷ এমআরআইয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পেসমেকার ৷ সমস্যা তৈরি হয় বিমান যাত্রা-সহ বিভিন্ন কাজে ৷ মুশকিল আসানে এবার চলে এল কৃত্রিম পেসমেকার ৷ এর আগে, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দিল্লি-সহ ভারতের কিছু রাজ্যে এই যন্ত্রের ব্যবহার দেখা গিয়েছে ৷ তবে এবার তা পূর্ব ভারতে প্রথম ব্যবহার করা হল কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ৷
65 বছরের এক বৃদ্ধার ডায়াবেটিস ছিল । এর সঙ্গে তাঁর হৃদযন্ত্রেও সমস্যা দেখা দেয় । তবে ওই মহিলা পেসমেকার বসানোর ক্ষেত্রে একটু ইতস্তত বোধ করছিলেন । বড় একটা যন্ত্র শরীরে বসবে, অস্ত্রোপচারের দাগ থেকে যাবে, এসব সাত-পাঁচ ভেবে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না ৷ তবে তাঁর সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে দেন চিকিৎসকরা ৷ ওই বেসরকারি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রকাশকুমার হাজরা ওই বৃদ্ধাকে বলেন, কোনও রকম তার ছাড়া এক পেসমেকারের কথা । যা শরীরে বসানোর জন্য কোনও অস্ত্রোপচারের দাগও থাকবে না ৷ এর গুনাগুন শোনামাত্রই সেটি বসাতে রাজি হয়ে যায় বৃদ্ধার পরিবার ।
তবে এই তার ছাড়া পেসমেকার আসলে কী ? চিকিৎসক প্রকাশকুমার হাজরা বলেন, "পুরনো পদ্ধতিতে পেসমেকার বসানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় সংক্রমণের ভয় থাকে । এখানে তার কোনও জায়গা নেই । কারণ এটা একেবারে হার্ট অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের ভিতরে চলে যায় । এর পরে ওটা একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায় । যদি কেউ এমআরআই বা এক্স-রে করাতে যান, তখন যদি ভালো ভাবে না-দেখা হয়, তাহলে কারও পক্ষে বোঝাই সম্ভব নয় যে শরীরে পেসমেকার যন্ত্রটি রয়েছে ।" চিকিৎসক হাজরাকে এই কাজে সাহায্য করেছেন ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সুমন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং চিকিৎসক সৌম্যকান্তি দত্ত ।
তবে শুধুমাত্র এই বেসরকারি হাসপাতাল নয়, কলকাতার আরও একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার গতকাল করেছেন আরও একজন বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক দিলীপ কুমার । তিনি বলেন, "এটা একটা ক্যাপসুলের মতো । পায়ে একটা ছোট ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় । তারপর একটা ক্যাথিটারের ভিতর দিয়ে এটি হার্টের ডান দিকের নিলয় বা ভেন্ট্রিকলে চলে যায় । ফলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে ।" এই যন্ত্রের আরও একটি সুবিধা হল ব্লুটুথ । এই প্রযুক্তি থাকার ফলে রোগী বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে থাকুন, এটি অ্যাডজাস্ট করা সম্ভব ।
এই পেসমেকারের ওজনও খুবই কম, সাধারণ পেসমেকারের থেকে এটি অনেক হালকা । ওজন মাত্র 2.4 গ্রাম । সাধারণ পেসমেকারের ওজন প্রায় 20 গ্রাম । আর এই কৃত্রিম পেসমেকার শরীরে বসাতে সময় লাগে মাত্র 20 মিনিট । এই পেসমেকারের মেয়াদ 20 থেকে 25 বছর। যেখানে সাধারণ পেসমেকারের মেয়াদ থাকে আট থেকে 10 বছর । বয়সের দিক থেকেও এই পেসমেকার বসানোর ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই ।
তবে এই তারবিহীন কৃত্রিম যন্ত্রের একটাই সমস্যা, এর জন্য খরচটা সাধারণের থেকে অনেকটাই বেশি । সাধারণ পেসমেকার বসাতে খরচ হয় 3-4 লাখ । তবে এই পেসমেকার বসাতে খরচ হয় প্রায় 17 লাখ ।