কলকাতা, 3 ডিসেম্বর: ওয়াকফ বিল সংশোধনীর নামে দেশের ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এমনই অভিযোগ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার দাবি,যখন এই ধরনের বিল আনা হচ্ছে, তখন কেন্দ্রের দায়িত্ব রাজ্যের সঙ্গে সেটা নিয়ে আলোচনা করা। আমাদের তো কিছু জানানোই হয়নি। কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে আমরা কয়েকটা সংশোধনী দিয়েছিলাম, জানি না সেগুলো বিলে যোগ করা হয়েছে কি না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় বলি, ধর্ম যার যার, উৎসব আপনার। আমি বুঝতে পারছি না একটা সম্প্রদায়ের উপর ওদের এত রাগ কিসের!
তিনি বলেন, যারা হঠাৎ করে রং বদলেছেন তারা আজ নানা কথা বলছেন। নামাজ পড়লেই কোথাও, সেটা ওয়াকফ সম্পত্তি বলা হচ্ছে, এটা কেউ বলে থাকলে মিথ্যা বলা হচ্ছে। ওয়াকাফ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সবটাই মিস লিডিং, ডিস্টোর্টিং। বলছেন, যেখানেই হাত দেবেন সেটাই নাকি ওয়াকফ। এটা নাকি আমাদের সাংসদ বলেছেন। এত বড় বাজে কথা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার চায় বাজেট অধিবেশনে এই দিন পাস করাতে। বাজেট ফেব্রুয়ারিতে। তার আগে এই বিল নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলবেন না? আর সময় কোথায়? আমরা একটা বিজ্ঞাপন দেখে অবজেকশন পাঠিয়েছিলাম। জানি না সেটা নিয়েছে কিনা। তিনি বলেন, জয়েন্ট পার্লামেন্টি কমিটিতে গিয়েছে আমাদের আন্দোলনের প্রতিবাদের কারণে। না হলে আলোচনাই হতো না। তার পরও এই কমিটির সফর আমাদের সাংসদ রা বয়কট করেছে। তাদের সফরগুলোই বাতিল হয়ে গেছে। কলকাতায় আসার কথা ছিল। কেন এলেন না! কলকাতাকে এত ভয়? কেউ কিছু বলতে পারতো আপনারা এলে। নিশ্চয়ই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।"
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, আপনাকে কেউ পছন্দ করে না বলেই অশান্তি লাগাতে হবে! সংখ্যালঘু লোকেরাই থাকবে তো এই ওয়াকফের কমটিতে। এটা ওদের অধিকার। আপনি তা কেড়ে নিতে চাইছেন। ওদের জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, বালাজি ট্রাস্টের কত সম্পত্তি আছে সেটা দখল করতে পারবেন? বুকের পাটা আছে। পারবেন বেলুড় মঠে কত জমি আছে, সেখানে হস্তক্ষেপ করতে? খ্রিস্টানদের সম্পত্তি দখল করতে পারবেন? শিখদের গোল্ডেন টেম্পলের জমি দখল করতে পারবেন, বুকের পাটা আছে? সংখ্যালঘুদের উপর রাগ কেন?
মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, একটা সম্প্রদায়ের ওপর এত রাগ কেন আপনাদের? তারা কালো নাকি! ওয়াকফ প্রপার্টি নিয়ে আপনাদের এত রাগ কেন? 1954, 1975 সালে অ্যামেন্ডমেন্ট আনা হয়েছিল। আর এখানে এটা বিল নয়। এটা একটা রেজোলিউশন। তিনি বলেন,বাংলায় মনে রাখবেন হিন্দুরা মেজরিটি, মুসলিমরা মাইনরিটি। আমি বিশ্বাস করি, মেজরিটিরা প্রটেক্ট করবে মাইনরিটিদের। আর মাইনরিটিরা সম্মান করবে মেজরিটিদের।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এদিন লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার কথায়, আপনাদের কি লোকসভায় টু থার্ড মেজরিটি আছে? রাজ্যসভায় আছে? দেখবেন সংবিধান পাল্টাতে গেলে দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি প্রয়োজন হয়। পারবেন না। দেশে আইন আদালত রয়েছে, সংবিধান রয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, এনআরসি-সিএএ প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়াকফ ভুলে যান, সিএএ তে কেন মুসলিমদের বাদ দেওয়া হল। এনআরসি তে কেন এত নাম বাদ দেওয়া হল? সেখানে তো অনেক হিন্দু, নেপালি নামও বাদ দেওয়া হয়েছে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড করার কথা বলছেন কেন? যা আছে অ্যাজ ইট ইজ, এটা তো আমি পরিবর্তন করতে পারি না। এটা তো সংবিধানে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওয়াকফ নিয়ে আলোচনায় প্রথম দিনে শেষে অংশগ্রহণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীকালও এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা করলেন। আজ বক্তব্য রাখবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এখন দেখার তিনি এসব অভিযোগের পাল্টা কী জবাব দেন।