আসানসোল, 4 জানুয়ারি: একদিকে অভিনেতা দেবের 'খাদান' সিনেমা নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই ৷ আর ঠিক তখনই আসানসোলে বেআইনি কয়লা খাদানের র্যাট হোলে পড়ে আবারও মানুষের মৃত্যু ৷ শুক্রবারের সেই ঘটনায় ইসিএলের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ কেন ইসিএলের মাইনস রেসকিউ টিমের দক্ষ উদ্ধারকারীরা খাদানে নামলেন না ? কেন স্থানীয়দের খাদানে নেমে দেহ উদ্ধার করতে হল ?
কোলিয়ারির বাসিন্দাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, বারবার এমন ঘটনা ঘটলেও, কেন উদ্ধারকাজ দেরিতে শুরু হচ্ছে ? এক্ষেত্রে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু হলে ওই ব্যক্তিকে বাঁচানো যেতে পারত বলে মত স্থানীয়দের ৷ যদিও, এই নিয়ে ইসিএলের মাইনস রেসকিউ বিভাগের বর্তমান কোনও আধিকারিক মন্তব্য করতে চাননি ৷
তবে, এ নিয়ে ইটিভি ভারতকে ইসিএলের মাইন্স রেসকিউয়ের প্রাক্তন চিফ ম্যানেজার সত্যব্রত সরকার জানালেন, ইসিএলের নিয়মে বাঁধা রয়েছেন মাইন্স রেসকিউ টিমের সদস্যরা ৷ তার বাইরে বেরতে পারেন না কেউ ৷ তাই অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও, অনেকক্ষেত্রেই পিছিয়ে আসতে হয় উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের ৷
তাঁর কথায়, "নিয়মের বেড়াজালে বাঁধা মাইনস রেসকিউ টিম ৷ তাই উদ্ধারকাজের ক্ষেত্রে নানা অন্তরায় তৈরি হয় ৷ এই সমস্ত উদ্ধার কাজে অন্ততপক্ষে পাঁচ জন কিংবা ছ’জনকে একসঙ্গে নিয়ে টিম লিডারকে খাদানে নামতে হয় ৷ এক্ষেত্রে এই ধরনের ছোট মুখের খনিতে একসঙ্গে ছ’জনের নামা সম্ভব হয় না ৷"
ছোট মুখ বা ব়্যাট হোলে উদ্ধারকারী দলে না-নামার যুক্তি সঙ্গত কারণ রয়েছে বলে জানান সত্যব্রত সরকার ৷ তিনি বলেন, "খনির ভিতরে নানা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ৷ বিষাক্ত গ্যাস বা ধ্বসজনিত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে ৷ তাই উদ্ধারকারী দল তখনই খাদানে নামবে, যখন বাইরে বেরনোর বিকল্প কোনও রাস্তা থাকবে ৷ কোনোভাবে ধ্বস নেমে উপরের পথ বন্ধ হয়ে গেলে, দ্বিতীয় পথ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ৷ এই সমস্ত খনিতে তা থাকে না ৷"
তিনি জানান, উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বিকল্প পথ না-থাকলেও যদি খনিতে নামেন, তা নিয়ম বিরোধী হবে ৷ তিনি বলেন, "বিকল্প পথ না-থাকা সত্ত্বেও, খাদানে নামা মাইনস রেসকিউয়ের নিয়ম বিরোধী ৷ এছাড়াও, মাইনস রেসকিউ টিমের কাছে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি রয়েছে, তা ইসিএলের আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনসে গ্যাসের সঙ্গে মোকাবিলা ও মানুষকে উদ্ধার করার জন্য ৷ এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ও অজানা খনিতে সেই সমস্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে নামা যায় না ৷"
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোরে ইসিএলের নর্থ সিহাড়শোল খোলামুখ খনি এলাকায় সিআইএসএফের তাড়া খেয়ে সাইকেল নিয়ে একটি বেআইনি খনির র্যাট হোলে পড়ে যান ভীষ্ম রায় (38) ৷ স্থানীয় মানুষজনই প্রথমে দেখতে পান বিষয়টি ৷ খনিটি প্রায় 120 ফুট গভীর ৷ স্থানীয় এক যুবক বেলার দিকে সাহস ক'রে দড়ি বেঁধে নিচে নামেন ৷ তবে, তিনি কেবল সাইকেলটি উদ্ধার করতে পারেন ৷ কিন্তু, ভীষ্ম রায়ের কোনও খোঁজ মেলেনি ৷ ওই খনি গর্ভে প্রচুর জল ছিল ৷ অনুমান করা হয় জলে তলিয়ে গিয়েছেন ভীষ্ম ৷
খবর দেওয়া হয় ইসিএলের মাইনস রেসকিউ বিভাগকে ৷ দেরি করে হলেও, মাইনস রেসকিউ টিম যন্ত্রপাতি-সহ উদ্ধারকাজে আসেন ৷ কিন্তু, তাঁরা খাদানের ভিতরে নামেননি ৷ নিয়ে আসা হয় ক্রেন ৷ তারপরেও মাইনস রেসকিউ টিম উদ্ধার কাজে নামেনি ৷ শেষ পর্যন্ত রাতে ক্রেনে চেপে খাদে নামেন মহম্মদ শাহজাহান নামেন এক ব্যক্তি ৷ তিনি কাঁটা দিয়ে খুঁজে প্রায় 16 ঘণ্টা পরে ভীষ্ম রায়ের দেহ উদ্ধার করেন ৷
উদ্ধারকারী মহম্মদ শাহজাহান বলেন "আমাদের কোনও ভয় লাগে না ৷ এই খনিতে কাউকে তো নামতে হতোই ৷ তাই আমি নেমেছি ৷ কাঁটা দিয়ে খুঁজে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি ৷" তবে, খোলা মুখ খনিগুলি বন্ধ করার বিষয়ে ইসিএল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ করেছেন এক শ্রমিক নেতা ৷
লাল্টু মাজি নামে ওই শ্রমিক নেতার অভিযোগ, "এরকমভাবে অনেক বেআইনি পরিত্যক্ত খাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ৷ আমি কর্তৃপক্ষকে বলেছি এই খাদানগুলি বুজিয়ে দিতে হবে ৷ তাহলে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর ঘটবে না ৷ কিন্তু, ইসিএল সেনিয়ে কোনও গা-করে না ৷" যদিও, এই অভিযোগ নিয়ে ইসিএল আধিকারিকরা কেউই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ৷