কলকাতা, 30 জুলাই: রাজ্য সরকারের কাছে ক্রমশই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ক্রমবর্ধমান সবজির মূল্য। তাই এবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন 100টি ক্রয় কেন্দ্র খুলতে করতে চলেছে কৃষি বিপণন দফতর। মোট 100টি ক্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না।
মাঝেমাঝেই মধ্যসত্ত্বা ভোগী তথা মিডিলম্যান ও কিছু অসাধু ব্যবসাহীদের কারণে অগ্নিমূল্য হয়ে দাঁড়ায় বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস । আর তাতেই হস্তক্ষেপ করতে হয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বাজারে নামতে হয় মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করে দেওয়ার ট্রাস্ক ফোর্সের সদস্যদের। নামতে হয় পুলিশকেও। এই অবস্থায় মানুষকে সুলভ মূল্যে কাঁচা সবজি থেকে মাছ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সুফল বাংলা নিয়ে এসেছে কৃষি বিপণন দফতর ।
এবার এই সুফল বাংলার বিপণন কেন্দ্রগুলির প্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর। আর সেই লোককে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন 100টি ক্রয় কেন্দ্র খুলতে করতে চলেছে এই দফতর। ইতিমধ্যে এ ধরনের চল্লিশটি ক্রয় কেন্দ্র রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে। নতুন এই 100টি ক্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না।
মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "আমরা চাই যে কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলায় তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাক। মূলত, তাদের অভাবী বিক্রি বন্ধ করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে এই ধরনের ক্রয় কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে সবজি কিনে সুফল বাংলার মাধ্যমে আমরা রাজ্যের সাধারণ মানুষকে বাজারদরের থেকে কম দামে সবজি পৌঁছে দেব। এই ক্রয় কেন্দ্রগুলি থেকে সরাসরি কৃষকদের থেকে সবজি কেনা হবে। এগুলি চালানো হবে সেলফ হেল্প গ্রুপ বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে। ফলে তারাও এক্ষেত্রে উপকৃত হবেন।"
মন্ত্রীর কথায় এই 100টি কেন্দ্রের মধ্যে কুড়িটি কেন্দ্র তৈরি হবে পূর্ব মেদিনীপুরে, চারটি হবে উত্তর 24 পরগণায়। এছাড়া, নদিয়া পূর্ব বর্ধমান হুগলি বাঁকুড়া পুরুলিয়া এবং কুচবিহারে এই ধরনের কেন্দ্র তৈরি হবে দুটি করে। জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার উত্তর দিনাজপুর দক্ষিণ দিনাজপুর মালদা দার্জিলিং মুর্শিদাবাদ বীরভূম পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়ায় এই ধরনের কেন্দ্র থাকবে একটি করে।
মন্ত্রী আরও বলেন, "এই ক্রয় কেন্দ্রগুলিতে এটা নিশ্চিত করা হবে, যাতে চাষীরা তাদের সবজির সঠিক মূল্য পায়। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় যখন বাজারে সবজির দাম চড়া তখনও সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না চাষীরা। এখানে তেমনটা হবে না। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা সবজি সরাসরি সুফল বাংলাতেই বিক্রি করা হবে, যা রাজ্যের সাধারণ মানুষ বাজারমূল্য থেকে 10 থেকে 15 শতাংশ কম দামে কিনতে পারবেন ।"
এদিন মন্ত্রী জানিয়েছেন, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাজারের যে অগ্নিমূল্য হাল হয়েছিল, তা ক্রমেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । চলতি সপ্তাহে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশ দাম কমেছে বিভিন্ন সবজির । এমনকি কয়েক সপ্তাহ আগে যে আলু 35 থেকে 40 টাকায় বিক্রি হচ্ছিল তা এখন 32 থেকে 33 টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে । তিনি জানিয়েছেন, সবটাই সম্ভব হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই ।
একইসঙ্গে মন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা সুফল বাংলাগুলিরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । রাজ্যে এই মুহূর্তে 493টি সুফল বাংলার স্থায়ী কেন্দ্র রয়েছে। এগুলি কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলী-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে । এছাড়া, 110টি অস্থায়ী ভ্রাম্যমান কেন্দ্রও রয়েছে রাজ্যে । পাশাপাশি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের 186টি অস্থায়ী কেন্দ্র চালানো হচ্ছে ।