কলকাতা, 3 সেপ্টেম্বর: রাজ্য বিধানসভায় আজ পাশ হল অপরাজিতা ওম্যান অ্যান্ড চাইল্ড (ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিলান লজ্ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল) 2024 ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন ধর্ষণের ঘটনায় যুক্ত অপরাধীদের ফাঁসির সাজা চান এবং সেই সাজা যেন পরবর্তী সময়ের জন্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে সমাজ মনে রাখে।
রাজ্যের তরফে এই বিলের যে খসড়া বিধানসভার সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, তাতে এরই প্রতিফলন থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
অপরাজিতা ওম্যান চাইল্ড বিল 2024 (খসড়া):
- 'অপরাজিতা ওম্যান, চাইল্ড বিল 2024' বিলের খসড়ায় বলা হয়েছে, ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ৷ সেক্ষেত্রে এই শাস্তি আমৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে ধর্ষণ করে খুনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, অর্থাৎ ফাঁসি ৷
- রাজ্য সরকার গণধর্ষণের ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড অর্থাৎ ফাঁসির পক্ষেই মত দিয়েছে । খসড়ায় বলা হয়েছে, গণধর্ষণের ক্ষেত্রে অপরাধীদের সবচেয়ে কম সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
- ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত অপরাধীদের ক্ষেত্রে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলেও সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ৷ এ ক্ষেত্রেও অপরাধীর সাজা হবে আমৃত্যুকাল ৷ তবে, এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড অর্থাৎ ফাঁসিরও সংস্থান থাকছে ৷
- নাবালিকা (অনূর্ধ্ব 16 বছর) ধর্ষণের ক্ষেত্রে সুপারিস রয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আজীবন কারাদণ্ড ৷ ন্যূনতম 20 বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানারও বিধান থাকছে ৷
- 12 বছরের কম কোনও শিশুর সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে, অভিযুক্ত অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড অর্থাৎ ফাঁসির সংস্থান রয়েছে বিলের খসড়ায় ৷
- আর 18 বছরের কম অর্থাৎ কোনও নাবালিকার সঙ্গে গণধর্ষণ হলে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড এবং সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সংস্থান রাখা হয়েছে ৷
- নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রেও কঠোর ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে বিলের খসড়ায় ৷ নির্যাতিতার ছবি, নাম, ঠিকানা, বাবা-মা'র ছবি, পরিচয় ইত্যাদি প্রকাশের ক্ষেত্রে 3 থেকে 5 বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা দুই-ই হতে পারে ৷
- বিনা অনুমতিতে আদালতের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনও বিষয় প্রকাশের ক্ষেত্রেও সাজা তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে বিলের খসড়ায় ৷
- অ্যাসিড হামলার ক্ষেত্রে আজীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা এক্ষেত্রে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা।
এছাড়াও এই বিলে বলা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তের জন্য অপরাজিতা স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে । সেই টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্বে থাকবেন একজন মহিলা পুলিশ অফিসার। একই সঙ্গে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে সেশনস কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া চলবে। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে তদন্তের নিষ্পত্তি করতে চায় রাজ্য এবং অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করতে চেয়ে এই বিলের খসড়ায় বলা হয়েছে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে 21 দিনের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। দরকার হলে বাড়তি 15 দিন বরাদ্দ করা হবে।
একইসঙ্গে এখানে তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তির সংস্থানও থাকছে। যদি দেখা যায় অফিসারের গাফিলতির কারণে তদন্তে দেরি হচ্ছে সেক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। সংশোধিত এই আইন বলবৎ হলে তাতে দ্রুত শাস্তি দেওয়ার জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করার কোথাও বলা হয়েছে । তবে তা করার জন্য কোন আর্থিক বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না এ কথারও উল্লেখ করা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। প্রথমত সময় বেঁধে তদন্ত প্রক্রিয়া সমাপ্ত করার কথা এবং ধর্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি, ফাঁসি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড। বিধানসভা সূত্রের খবর, বিলের খসড়ায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (2023), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (2023) এবং 2012-র পকসো (প্রটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট)-এর সংশোধনের প্রস্তাব থাকছে।