জলপাইগুড়ি, 27 জানুয়ারি: গত বছর বাংলাদেশে হাসিনা-সরকারের পতনের পর থেকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্ক হয়েছে । অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান রোধে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে বাহিনী ৷ এই পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের, মূলত যুবকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে এবং তাঁদের অবৈধ কার্যকলাপ, বিশেষ করে চোরাচালান থেকে বিরত রাখতে এবার উদ্যোগী হল বিএসএফ ৷ সীমান্তের যুবকদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির দিকে বিশেষভাবে জোর দেওয়া শুরু করেছে বাহিনী ৷
সেই বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির উদ্যোগ হিসাবে মৌমাছি পালন শুরু করার উদ্যোগ নিল বিএসএফ ৷ আর মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ দিতে বিএসএফ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি বর্ডার আউটপোস্ট ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিকে বেছে নিয়েছে ৷ সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি গ্রামবাসীরাও ৷
জলপাইগুড়ি জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গ্রামবাসীদের হাতে এই মৌমাছি চাষের কিট তুলে দিয়েছে বিএসএফ ৷ শিলিগুড়ি রাধাবাড়ি সেক্টরের 93 ব্যাটেলিয়ানের তরফে সেই কিটগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে সীমান্তের বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের কয়েকটি পরিবারের হাতে ৷ কীভাবে এই মৌমাছি পালন করতে হয়, তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে ৷ এর পাশাপাশি, কাঁটাতারের ওপারে থাকা ভারতের অন্তর্ভুক্ত সিপাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের মৌমাছি পালনের সামগ্রী প্রথম তুলে দেওয়া হয় ৷
বিএসএফের রাধাবাড়ি সেক্টরের 93 ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডান্ট সঞ্জয় কুমার সিং সেই কিটগুলি তুলে দেন গ্রামবাসীদের হাতে ৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাটেলিয়ানের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট মনোজ কুমার ৷ মৌমাছি পালনের কিট তুলে দেওয়ার পাশাপাশি, গ্রামের ছেলেমেয়েদের হাতে খেলার সামগ্রীও তুলে দেয় বিএসএফ ৷ মূলত, তাদের খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে এই উদ্যোগ ৷ একটি ভলিবল ম্যাচের আয়োজনও করা হয় বিএসএফের তরফে ৷
সঞ্জয় কুমার সিং বলেন, "আমরা ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে গ্রামবাসীদের মৌমাছি চাষের উদ্যোগ নিয়েছি ৷ 93 ব্যাটেলিয়ানের নগর বেরুবাড়ির গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় মৌমাছি চাষের কিট দেওয়া হয়েছে ৷ বিকল্প কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন গ্রামবাসীরা ৷ আমরা আপাতত কয়েকজনকে মৌমাছি চাষের কিট দিয়েছি ৷ মৌমাছি চাষ কীভাবে করতে হয়, তা আমরা গ্রামবাসীদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব ৷ শিলিগুড়ি সেক্টরে প্রথম এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে ৷ সফল হলে আরও বেশি করে উদ্যোগ নেওয়া হবে ৷"
এ নিয়ে সিপাই পাড়ার বাসিন্দা সাহানুর আলম জানান, "এই প্রথম আমরা মৌমাছি পালন করব ৷ বিএসএফের পক্ষ থেকে আমাদের মৌমাছি পালনের সামগ্রী দেওয়া হল ৷ আমরা আশা করছি মৌমাছি চাষ করে লাভবান হতে পারব ৷" সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দা মুন্না সরকার বলেন, "মৌমাছি চাষ করে আমরা উপার্জন করতে পারব ৷ ভালোই হবে ৷"
নগর বেরুবাড়ির গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য সামুক হক বলেন, "93 ব্যাটেলিয়ানের পক্ষ থেকে খেলার সরঞ্জাম যেমন দেওয়া হয়েছে, তেমনই মৌমাছি চাষের সামগ্রী দেওয়া হল ৷ মৌমাছি পালনের ফলে মধু সংগ্রহ হবে ৷ তাতে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন গ্রামবাসীরা ৷ প্রথমবার বিএসএফ আমাদের এলাকায় মৌমাছি চাষের উদ্যোগ নিয়েছে ৷ বিএসএফের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ মিলেমিশে থাকছেন ৷ গ্রামবাসীদেরও উপকার হয় এমন কাজ করছেন তাঁরা ৷"
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের অবস্থা কেমন ? বিস্ফোরক দাবি বিএসএফের রিপোর্টে