কলকাতা, 30 জুলাই: 2016 সালের প্রাথমিক নিয়োগে অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ প্যানেল তৈরি করাই হয়নি । মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে জানালেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী । তাঁর বক্তব্য, 2016 সালের মূল প্যানেলে যাঁরা চাকরিতে যোগদান করেননি বা অন্যান্য কারণে যে শূন্যপদ সৃষ্টি হয়েছিল, তা পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শূন্যপদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে । ফলে অতিরিক্ত প্যানেল তৈরিই করা হয়নি । তাই তা প্রকাশ করার প্রশ্নই নেই । 20 অগস্টের মধ্যে এই বিষয়ে হলফনামা তলব করেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
2016 সালের প্রাথমিকে প্রায় 42 হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল ৷ নিয়ম অনুযায়ী, এর পাঁচ শতাংশ (প্রায় 2100) উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে অতিরিক্ত প্যানেল তৈরি করাই নিয়ম ৷ মূল প্যানেল থেকে কোনও কারণে কেউ কাজে যোগ না দিলে, অতিরিক্ত প্যানেলের উত্তীর্ণরা সুযোগ পাবেন ৷ মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে যা জানানো হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট যে 2016 সালে নিয়োগের সময় এই অতিরিক্ত প্যানেল তৈরির নিয়মই মানা হয়নি ৷
আর এই বিষয়টি স্পষ্ট হল 2016 সালে পরীক্ষা দেওয়া এক চাকরিপ্রার্থীর মামলা থেকে ৷ ওই চাকরিপ্রার্থীর নাম মূল প্যানেলে ছিল না ৷ তাই তিনি পাঁচ শতাংশ অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশের আবেদন জানান । যদিও সেই প্যানেল প্রকাশ করেনি বোর্ড । এর পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ৷
সেই মামলার শুনানিতে ওই মামলাকারীর আইনজীবী দীব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ মেধার ভিত্তিতে তালিকা তৈরিই করেনি । অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশের তালিকাও প্রস্তুত করেনি । তারা বারবার বলেছে প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে ।
উল্লেখ্য, 2016 সালের নিয়োগে একাধিক কারচুপি করা হয়েছিল বলে অভিযোগে হাইকোর্টে অনেক আগেই দায়ের হয়েছিল মামলা । সেই সংক্রান্তর মামলার শুনানি এর আগেও হয়েছে বিচারপতি সিনহার এজলাসে ৷ এর আগেও 2016 সালের নিয়োগের প্যানেল প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা । যদিও এত বছর পর সেই প্যানেল ফের প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল পর্ষদ । তাদের বক্তব্য ছিল, নিয়োগের সময় প্রত্যেক জেলাভিত্তিক ‘জোন’ প্যানেল প্রকাশ করা হয়েছিল ৷ তা ওয়েবসাইটে থাকবে । কিন্তু তাদের কাছে আলাদা করে সারা রাজ্যের নিয়োগের প্যানেল নেই ।
তখন মামলাকারীকে বিচারপতির প্রশ্ন করেছিলেন, যদি মূল প্যানেল প্রকাশিত না হয়, অতিরিক্ত প্যানেল কীভাবে প্রকাশিত হবে ? কিন্তু মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাহলে সেই পুরনো প্যানেলের ভিত্তিতে 2022 সালেও নিয়োগ করা হয়েছে কীভাবে ?
যদিও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আরও বক্তব্য ছিল, নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে । নম্বর ব্রেকআপের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে । মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল প্রকাশ করা সম্ভব নয় । অনেকে গ্রেফতার হয়েছে । প্যানেল প্রসেসরের কাছে আছে । সিবিআই-এর কাছে রয়েছে সব তথ্য এখন ।
বিচারপতি সেই সময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘পরীক্ষার্থী খারাপ হতে পারেন । কিন্তু আপনারা রাজ্যের শক্তিশালী অঙ্গ । আগেও এই ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আপনারা প্যানেল প্রকাশ করুন । পুরনো প্যানেলই প্রকাশ করুন ৷’’ তারপর গত 13 জুলাই শুনানিতে বিচারপতি সিনহা 2016 সালের মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রাথমিকের প্যানেলই প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন । বিচারপতি অমৃতা সিনহা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন 'ডেড' প্যানেলটাই প্রকাশ করার জন্য । তিনি বলেছিলেন, ‘‘মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল দেখতে চাই ।’’
কিন্তু এ দিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানায় কোনও অতিরিক্ত প্যানেল তৈরিই করা হয়নি । এই পরিস্থিতিতে সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে হলফনামা চেয়েছেন বিচারপতি সিনহা ৷ আগামী 20 অগস্টের মধ্যে ওই হলফনামা জমা দিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে ৷ এখন দেখার সেই হলফনামায় তারা কী জানায় ?