মালদা, 13 মে: কোনও নির্বাচনে মালদা জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকরা কতটা প্রভাব ফেলেন, সেটা প্রথমবার বুঝতে পারল রাজনৈতিক দলগুলি ৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফিরিয়ে আনার তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ৷ কাজ ছেড়ে, গাঁটের পয়সা খরচ করে শুধুমাত্র ভোট দিতে ঘরে ফিরতে রাজি হননি সিংহভাগ পরিযায়ী শ্রমিক ৷ ফলে এবার জেলার দুই কেন্দ্রেই ভোটদানের হার কমেছে ৷ সেটাও খুব কম নয় ৷ অন্তত সাত থেকে আট শতাংশ ভোট কম পড়েছে দুই কেন্দ্রে ৷ দুটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা 14টি বিধানসভা কেন্দ্রেই পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভোটদানের হার বেশি ৷ এতেই রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত, ভোট প্রদানের হার কম হওয়ার পিছনে লুকিয়ে রয়েছেন ঘরে না ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকরা ৷
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, এবার মালদা উত্তর কেন্দ্রের অন্তর্গত হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে পুরুষ ভোট পড়েছে 96 হাজার 565টি, মহিলা ভোট পড়েছে 1 লক্ষ 27 হাজার 93টি ৷ গাজোলে পুরুষ ভোট 1 লক্ষ 7 হাজার 284টি ও মহিলা ভোট 1 লক্ষ 14 হাজার 664টি ৷ চাঁচলে প্রদত্ত পুরুষ ভোটের সংখ্যা 90 হাজার 731, মহিলা ভোটের সংখ্যা 99 হাজার 615 জন ৷ হরিশ্চন্দ্রপুরে পুরুষ এবং মহিলা ভোটদান হয়েছে যথাক্রমে 94 হাজার 324 ও 1 লক্ষ 5 হাজার 408 জন ৷ মালতিপুর কেন্দ্রে পুরুষ ভোট পড়েছে 83 হাজার 101টি, এখানে মহিলাদের ভোট পড়েছে 98 হাজার 357টি ৷ রতুয়া কেন্দ্রে প্রদত্ত পুরুষ ভোটের সংখ্যা 1 লক্ষ 1 হাজার 448 এবং মহিলাদের ভোট পড়েছে 1 লক্ষ 13 হাজার 762 জন ৷ মালদা বিধানসভা কেন্দ্রে এবার 1 লক্ষ 372 জন পুরুষ ভোট দিয়েছেন ৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা 1 লক্ষ 13 হাজার 762 জন ৷
একই ছবি দেখা যাচ্ছে মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রেও ৷ ইংরেজবাজার কেন্দ্রে 1 লক্ষ 11 হাজার 831 জন পুরুষ ও 1 লক্ষ 16 হাজার 214 জন মহিলা ভোট দিয়েছেন ৷ মানিকচকে এই সংখ্যা যথাক্রমে 90 হাজার 749 ও 1 লক্ষ 6 হাজার 480 জন ৷ মোথাবাড়ি কেন্দ্রে পড়েছে 70 হাজার 267টি পুরুষ ও 86 হাজার 792টি মহিলা ভোট ৷ সুজাপুর কেন্দ্রে 89 হাজার 469 জন পুরুষ ও 1 লক্ষ 10 হাজার 153 জন মহিলার আঙুলে ভোটের কালি রয়েছে ৷ বৈষ্ণবনগরে পুরুষ ভোটদানের সংখ্যা 1 লক্ষ 4 হাজার 581 এবং মহিলাদের সংখ্যা 1 লক্ষ 7 হাজার 304 জন ৷ ফরাক্কা কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা ভোটদানের সংখ্যা যথাক্রমে 85 হাজার 791 এবং 94 হাজার 920 জন ৷ সামশেরগঞ্জে 88 হাজার 979 জন পুরুষ ও 1 লক্ষ 3 হাজার 189 জন মহিলা নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন ৷
তৃণমূলের রাজ্য নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলছেন, "পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভোট বেশি পড়ার পিছনে আমরা তিনটি কারণ দেখতে পাচ্ছি ৷ এই নির্বাচনে ভিনরাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকরা ভোট দিতে ঘরে ফেরেননি ৷ এতে মোট ভোটদানের হার সাত থেকে আট শতাংশ কমেছে ৷ দ্বিতীয়ত, বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে মহিলা জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বেড়েছে ৷ তাঁরা মহিলাদের বুথমুখি করতে উদ্যোগ নিয়েছেন ৷ আর তৃতীয়ত, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আবেগ ৷"
উত্তর মালদার বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মর বক্তব্য, "এবার ভোটদানের হার কম হওয়ার পিছনে মূল কারণ পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোট দিতে না আসা ৷ আগের ভোটগুলিতে এই ছবি দেখা যায়নি ৷ মূলত, পুরুষরাই ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান ৷ তাই মহিলাদের ভোট বেশি পড়েছে ৷" একই বক্তব্য জেলা কংগ্রেসের সহসভাপতি ভূপেন্দ্রনাথ হালদারেরও ৷ তিনিও বলেন, "ভোটদানের হার কমার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে না আসাই দায়ী ৷ এতেই দুই লোকসভা কেন্দ্রের 14টি বিধানসভা আসনেই পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভোট বেশি পড়েছে ৷"
আরও পড়ুন: