ETV Bharat / state

40 বছরের যন্ত্রনা থেকে কবে মুক্তি ? পড়ল ভোট বয়কটের পোস্টার - Lok Sabha Election 2024 - LOK SABHA ELECTION 2024

Vote Boycott Poster: ভোট আসে ভোট যায় প্রতিশ্রুতির পাহাড় জমে যায় ৷ প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ আর হয় না ৷ চন্দ্রকোণা 2 ব্লকের ঘোষকিরা এলাকায় রাস্তা ও সেতুর দাবি বহু বছরের । 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় পোস্টার দিয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিলেন গ্রামবাসীরা ৷

Vote Boycott
Vote Boycott
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 28, 2024, 10:19 PM IST

ভোট বয়কটের পোস্টার চন্দ্রকোনায়

চন্দ্রকোনা, 28 এপ্রিল: 'নো রোড, নো ব্রিজ, নো ভোট', ভোট আসে ভোট যায় আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি পাই, 40 বছরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব কবে?'এমনই প্রশ্ন তুলে বেহাল রাস্তার হাল ফেরাতে ও ভগ্ন কাঠের সেতুর পরিবর্তে স্থায়ী সেতুর দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে পোস্টার গ্রামবাসীদের । ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা-2 ব্লকের ভগবন্তপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষকিরা এলাকায় । পোস্টারকে হাতিয়ার করে গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করেছে বিজেপি । ভোটের মুখে পালটা সাফাই তৃণমূল উপপ্রধানের । এই ভোট বয়কটের পোস্টারকে ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায় ।

জানা গিয়েছে, আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ঘোষকিরা এলাকা ৷ আগামী 20 মে নির্বাচন এখানে । নির্বাচনকে ঘিরে শাসক বিরোধী সকলেরই প্রচার চলছে জোরকদমে । আর তারই মাঝে ঘোষকিরা এলাকা জুড়ে পড়লো ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে একাধিক পোস্টার । মূলত গ্রামবাসীদের তরফে দেওয়া হয়েছে এই পোস্টারগুলি । গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, দুটি সমস্যায় জর্জরিত তাঁরা । পোস্টারে এলাকার সেই দুটি মূল সমস্যার কথাই তুলে ধরা হয়েছে ।

Vote Boycott
ভোট বয়কটের পোস্টার চন্দ্রকোনায়

একটি সমস্যা হল, ঘোষকিরা থেকে শীর্ষা প্রায় 6 কিমি বেহাল রাস্তা । দীর্ঘ 40 বছর ধরে একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে বিপাকে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে । ঘোষকিরা,শীর্ষা, খুড়শী, কোল্লা, ধরমপোতা, বারাসত, রঘুনাথপুর-সহ একাধিক গ্রামের মানুষের যাতায়াত এই গ্রামীণ রাস্তার উপর দিয়ে । যেহেতু কৃষি প্রধান এলাকা তাই চাষাবাদের জন্যও এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াতে চরম সমস্যায় পড়েন কৃষকরা । বর্ষার সময় রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে জরুরি পরিষেবা হোক স্কুল কলেজ ওই বেহাল রাস্তার উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয় । ভোট এলেই নেতারা প্রচারে এসে লম্বাচওড়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান ৷ আর ভোট মিটলেই যেই কে সেই অবস্থা ।

আর অপর সমস্যাটি হল, ঘোষকিরা থেকে কেশেডাল হয়ে ভগবন্তপুর বা কৃষ্ণপুর যাওয়ার জন্য শিলাবতী নদীর উপর থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কাঠের সেতু ৷ যার বর্তমানে ভগ্নদশা । সেতুর পাশে নদী বরাবর অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করে চলছে যাতায়াত । গ্রামবাসীদের দাবি, বেশ কয়েক বছর আগে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়েভগবন্তপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে ঘোষকিরা-সহ শিলাবতী ও কেঠিয়া নদীর উপর মোট চারটি কাঠের সেতু তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল ।

বছর তিনেক আগে বন্যায় তিনটি সেতু ভেঙে গিয়েছে ৷ গ্রামবাসীদের চেষ্টায় ঘোষকিরা গ্রামে শিলাবতী নদীর উপর থাকা কাঠের সেতুটি এতদিন টিকেছিল । তার উপর দিয়ে কোনওরকমে যাতায়াত চলছিল। বর্ষায় সময় এই একমাত্র সেতুকে বাঁচাতে গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে সেতুতে আটকে থাকা পানা আবর্জনা সরানোয় হাত লাগাতে দেখা গিয়েছে । বন্যার জলে ডুবে যাওয়া সেতুকে অক্ষত রাখতে উদ্যোগী হতেও দেখা যায় গ্রামবাসীদের । কিন্তু সেই একমাত্র কাঠের সেতুর একাধিক জায়গায় কাঠের পাটাতন সরে গিয়ে প্রায় ভগ্নদশা হয়ে গিয়েছে ।

কয়েক মাস হল ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে । ফলে ঘোষকিরা-সহ একাধিক গ্রামের নদী পারাপারে চরম সমস্যা তৈরি হয়েছে ৷ বাধ্য হয়ে নদী বরাবর অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করে চলছে যাতায়াত । তাই স্থায়ী সেতু তৈরির দাবি ঘোষকিরাবাসীর দীর্ঘদিনের ৷ কিন্তু আজও তা নিয়ে কারও কোন হেলদোল নেই বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের । গ্রামের এই দুটি মূল সমস্যা সমাধানে এবার তাই ভোট বয়কটের পথে হেঁটে প্রশাসনের টনক নড়াতে চাইছেন তারা । একে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে বিজেপিও । চন্দ্রকোনা-1 মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত দোলইয়ের বক্তব্য, গ্রামবাসীদের দাবিগুলিকে তাঁরা সমর্থন করছেন । কারণ সমস্যা দুটি দীর্ঘদিনের । তবে ভোট বয়কট না করে এর জবাব ভোটবাক্সে দেওয়ার আবেদন করেছেন তিনি ।

অন্যদিকে, সমস্যার কথা স্বীকার করলেও তৃণমূল পরিচালিত ভগবন্তপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আশরাফুল মল্লিক দাবি করেন, "বেহাল রাস্তা আমরা বেশ কয়েকবার মোরাম ফেলে মেরামত করেছি ৷ আবার তা করে দেওয়া হবে । নতুন করে যাতে ওই রাস্তাটি করা যায় তা নিয়ে আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে । আর কাঠের সেতুটি খুব শীঘ্রই মেরামত করে দেওয়া হবে ৷ স্থায়ী সেতু তৈরির মতো ফান্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে নেই ।" তবে পোস্টার দেওয়ার পেছনে বিরোধীদের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি ৷ যদিও সামনেই ভোট, তার আগে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে গ্রামবাসীদের এই পোস্টারকে ঘিরে অস্বস্তিতে শাসকদল । এর প্রভাব ভোটবাক্সে কতটা পড়ে তা বলবে সময় ৷

আরও পড়ুন:

  1. রাস্তা চাই, ভোট বয়কটের ডাক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম গেন্দংয়ের
  2. শুক্রবার বস্তারে ভোট বয়কট! 'কাদের জন্য নেতা তৈরি করা হবে ?' দেওয়ালে লিখল মাওবাদীরা
  3. প্রতিশ্রুতিই সার ! পুনর্বাসন না পেলে ভোট বয়কটের পথে গঙ্গা ভাঙনের দুর্গতরা

ভোট বয়কটের পোস্টার চন্দ্রকোনায়

চন্দ্রকোনা, 28 এপ্রিল: 'নো রোড, নো ব্রিজ, নো ভোট', ভোট আসে ভোট যায় আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি পাই, 40 বছরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব কবে?'এমনই প্রশ্ন তুলে বেহাল রাস্তার হাল ফেরাতে ও ভগ্ন কাঠের সেতুর পরিবর্তে স্থায়ী সেতুর দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে পোস্টার গ্রামবাসীদের । ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা-2 ব্লকের ভগবন্তপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষকিরা এলাকায় । পোস্টারকে হাতিয়ার করে গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করেছে বিজেপি । ভোটের মুখে পালটা সাফাই তৃণমূল উপপ্রধানের । এই ভোট বয়কটের পোস্টারকে ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায় ।

জানা গিয়েছে, আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ঘোষকিরা এলাকা ৷ আগামী 20 মে নির্বাচন এখানে । নির্বাচনকে ঘিরে শাসক বিরোধী সকলেরই প্রচার চলছে জোরকদমে । আর তারই মাঝে ঘোষকিরা এলাকা জুড়ে পড়লো ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে একাধিক পোস্টার । মূলত গ্রামবাসীদের তরফে দেওয়া হয়েছে এই পোস্টারগুলি । গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, দুটি সমস্যায় জর্জরিত তাঁরা । পোস্টারে এলাকার সেই দুটি মূল সমস্যার কথাই তুলে ধরা হয়েছে ।

Vote Boycott
ভোট বয়কটের পোস্টার চন্দ্রকোনায়

একটি সমস্যা হল, ঘোষকিরা থেকে শীর্ষা প্রায় 6 কিমি বেহাল রাস্তা । দীর্ঘ 40 বছর ধরে একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে বিপাকে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে । ঘোষকিরা,শীর্ষা, খুড়শী, কোল্লা, ধরমপোতা, বারাসত, রঘুনাথপুর-সহ একাধিক গ্রামের মানুষের যাতায়াত এই গ্রামীণ রাস্তার উপর দিয়ে । যেহেতু কৃষি প্রধান এলাকা তাই চাষাবাদের জন্যও এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াতে চরম সমস্যায় পড়েন কৃষকরা । বর্ষার সময় রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে জরুরি পরিষেবা হোক স্কুল কলেজ ওই বেহাল রাস্তার উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয় । ভোট এলেই নেতারা প্রচারে এসে লম্বাচওড়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান ৷ আর ভোট মিটলেই যেই কে সেই অবস্থা ।

আর অপর সমস্যাটি হল, ঘোষকিরা থেকে কেশেডাল হয়ে ভগবন্তপুর বা কৃষ্ণপুর যাওয়ার জন্য শিলাবতী নদীর উপর থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কাঠের সেতু ৷ যার বর্তমানে ভগ্নদশা । সেতুর পাশে নদী বরাবর অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করে চলছে যাতায়াত । গ্রামবাসীদের দাবি, বেশ কয়েক বছর আগে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়েভগবন্তপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে ঘোষকিরা-সহ শিলাবতী ও কেঠিয়া নদীর উপর মোট চারটি কাঠের সেতু তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল ।

বছর তিনেক আগে বন্যায় তিনটি সেতু ভেঙে গিয়েছে ৷ গ্রামবাসীদের চেষ্টায় ঘোষকিরা গ্রামে শিলাবতী নদীর উপর থাকা কাঠের সেতুটি এতদিন টিকেছিল । তার উপর দিয়ে কোনওরকমে যাতায়াত চলছিল। বর্ষায় সময় এই একমাত্র সেতুকে বাঁচাতে গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে সেতুতে আটকে থাকা পানা আবর্জনা সরানোয় হাত লাগাতে দেখা গিয়েছে । বন্যার জলে ডুবে যাওয়া সেতুকে অক্ষত রাখতে উদ্যোগী হতেও দেখা যায় গ্রামবাসীদের । কিন্তু সেই একমাত্র কাঠের সেতুর একাধিক জায়গায় কাঠের পাটাতন সরে গিয়ে প্রায় ভগ্নদশা হয়ে গিয়েছে ।

কয়েক মাস হল ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে । ফলে ঘোষকিরা-সহ একাধিক গ্রামের নদী পারাপারে চরম সমস্যা তৈরি হয়েছে ৷ বাধ্য হয়ে নদী বরাবর অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করে চলছে যাতায়াত । তাই স্থায়ী সেতু তৈরির দাবি ঘোষকিরাবাসীর দীর্ঘদিনের ৷ কিন্তু আজও তা নিয়ে কারও কোন হেলদোল নেই বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের । গ্রামের এই দুটি মূল সমস্যা সমাধানে এবার তাই ভোট বয়কটের পথে হেঁটে প্রশাসনের টনক নড়াতে চাইছেন তারা । একে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে বিজেপিও । চন্দ্রকোনা-1 মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত দোলইয়ের বক্তব্য, গ্রামবাসীদের দাবিগুলিকে তাঁরা সমর্থন করছেন । কারণ সমস্যা দুটি দীর্ঘদিনের । তবে ভোট বয়কট না করে এর জবাব ভোটবাক্সে দেওয়ার আবেদন করেছেন তিনি ।

অন্যদিকে, সমস্যার কথা স্বীকার করলেও তৃণমূল পরিচালিত ভগবন্তপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আশরাফুল মল্লিক দাবি করেন, "বেহাল রাস্তা আমরা বেশ কয়েকবার মোরাম ফেলে মেরামত করেছি ৷ আবার তা করে দেওয়া হবে । নতুন করে যাতে ওই রাস্তাটি করা যায় তা নিয়ে আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে । আর কাঠের সেতুটি খুব শীঘ্রই মেরামত করে দেওয়া হবে ৷ স্থায়ী সেতু তৈরির মতো ফান্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে নেই ।" তবে পোস্টার দেওয়ার পেছনে বিরোধীদের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি ৷ যদিও সামনেই ভোট, তার আগে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে গ্রামবাসীদের এই পোস্টারকে ঘিরে অস্বস্তিতে শাসকদল । এর প্রভাব ভোটবাক্সে কতটা পড়ে তা বলবে সময় ৷

আরও পড়ুন:

  1. রাস্তা চাই, ভোট বয়কটের ডাক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম গেন্দংয়ের
  2. শুক্রবার বস্তারে ভোট বয়কট! 'কাদের জন্য নেতা তৈরি করা হবে ?' দেওয়ালে লিখল মাওবাদীরা
  3. প্রতিশ্রুতিই সার ! পুনর্বাসন না পেলে ভোট বয়কটের পথে গঙ্গা ভাঙনের দুর্গতরা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.