আসানসোল, 6 জুলাই: এক সময় ছিল কত জৌলুস। ছিল পিতলের রথ। জমজমাট মেলাকে ঘিরে বসত উৎসবের আসর ৷ তবে আজ সবই যেন ধূসর হয়েছে স্মৃতির পাতায় ৷ দামোদর নদীর ধারে হিরাপুরের প্রাচীন মন্দিরে এখন রথ চালাতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি করেই। আশ্চর্য হলেও এমনটাই সত্যি। পরিবারের ধারা বজায় রাখতে এক বৃদ্ধা আশেপাশের গ্রামে ভিক্ষাবৃত্তি করে রথ উৎসব চালান। আসানসোল পৌরনিগমের একেবারে শেষ সীমায় দামোদর নদীর ধারে মানেকেশ্বর মন্দিরে এমনভাবেই উদযাপিত হয় রথযাত্রা উৎসব ৷
মন্দিরের সেবাইত প্রবীণা পূর্ণিমা চক্রবর্তী আশেপাশের গ্রামে আঁচল পেতে ভিক্ষা করে উৎসব চালিয়ে আসছেন বছরের পর বছর। জানা গিয়েছে, আগে এই মন্দিরে ছিল একটি পিতলের রথ। 1980 সালে সেই রথ চুরি হয়ে যায়। পরে শোনা গিয়েছিল সেই রথ নাকি পুলিশ উদ্ধারও করেছে। তবে তা আর ফিরে আসেনি মন্দিরে। সেবাইত পূর্ণিমা চক্রবর্তী বলেন "বর্তমান রথটি লোহা ও টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল খুব সাধারণভাবে ৷ সেই রথ টেনেই এই মন্দির চত্বরে রথযাত্রা পালিত হয়।" গ্রামের মানুষেরা এসে যোগ দেন রথযাত্রা উৎসবে। কিন্তু খরচ ওঠে কী করে?
পূর্ণিমা চক্রবর্তী বলেন ''আমি আঁচল পেতে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষে করি ৷ সেই ভিক্ষার টাকাতেই রথযাত্রা পালিত হয় এই মন্দিরে। তবে শুধু রথযাত্রা নয়, এখানে শিবের গাজন থেকে শুরু করে দুর্গাপুজো, নীলের ষষ্ঠী, 24 প্রহর সংকীর্তন ও আরও নানান উৎসব পালিত হয়। সবটাই আমার ভিক্ষের ঝুলি থেকে যে টাকা আসে তা থেকেই খরচ হয় ৷"
আসানসোল পৌরনিগমে জিতেন্দ্র তেওয়ারি যতদিন মেয়র ছিলেন ততদিন বিভিন্ন রথযাত্রা কমিটিকে 25 হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হত। কিন্তু সেই অনুদান নাকি কখনই পাননি পূর্ণিমা চক্রবর্তী। এমনটাই তাঁর দাবি। সংস্কারের অভাবে মন্দিরের অবস্থাও ধীরে ধীরে ভগ্নপ্রায় হয়ে আসছে। পূর্ণিমা চক্রবর্তীর পরবর্তী প্রজন্ম দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে আগামী দিনে এই মন্দিরের হাল কে ধরবেন তা নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছেন প্রবীণা।
প্রসঙ্গত, আসানসোলের হিরাপুরের একেবারে প্রান্তিক গ্রাম বিনোদবাঁধ। আর এই বিনোদবাঁধ গ্রামের শেষ প্রান্তে রয়েছে প্রাচীন মানেকেশ্বর মন্দির। দামোদর নদীর ধারে আমবাগান আর গাছ-গাছালিতে ভরা সুন্দর মনোরম পরিবেশে অবস্থান 100 বছরের পুরনো মন্দিরের। এই মন্দিরে রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ যার নিত্য পুজো হয় এখানে ৷ এছাড়াও এখানে দুর্গাপূজা-ছিন্নমস্তার পুজোর আয়োজন হয়। এছাড়াও বাৎসরিক সংকীর্তন মেলা, বাউল মেলা সবকিছুই হয়। কিন্তু এই মন্দিরে কোনও অনুদান নেই। নেই কোন সরকারি সাহায্য। তাই মন্দিরের সমস্ত অনুষ্ঠানই হয় সেবাইত পূর্ণিমা চক্রবর্তীর ভিক্ষাবৃত্তির টাকাতেই ৷