হাওড়া, 28 সেপ্টেম্বর: সামনেই পুজো ৷ আর পুজোর মুখেই বন্ধ হয়ে গেল দুটি কারখানা ৷ যার জেরে অথৈ জলে শ্রমিকরা ৷ কর্তৃপক্ষের নোটিশকে কেন্দ্র করে আশঙ্কায় ছিলেন শ্রমিকরা। আশঙ্কা সত্যি করে দুর্গাপূজার মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে চলা ভারত জুট মিল ও চেঙ্গাইলের শতবর্ষপ্রাচীন লাডলো জুট মিল ৷ পুজোর মুখেই অন্ধকার নেমে এল চটকল শ্রমিকদের ঘরে।
দুটি ঘটনার সূত্রপাত দুটি আলাদা দিনে। চলতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দিতে এসে ভারত জুট মিলের শ্রমিকরা মিল বন্ধ হওয়ার নোটিশ দেখতে পান। মিলের শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের না জানিয়েই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জুটমিল। কাঁচামাল আমদানি না থাকা ও তাঁত বিভাগের অবৈধ ধর্মঘটের কারণ দেখিয়ে মিল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমনটাই দাবি মিলের শ্রমিকদের। আপাতত এক দিনের জন্য মিল বন্ধ করার নোটিশ দেওয়ার হলেও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শ্রমিকদের আশঙ্কা এরপর কবে মিল খুলবে কেউ জানে না। শ্রমিকদের অভিযোগ এই মিলে 24 শতাংশ মালিকানা রাজ্য সরকারের। বাকি 76 শতাংশের মালিক অন্যরা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, মিলের কাঁচামালকে সম্পূর্ণ ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য মিল থেকে বের করে দেওয়া হয়। মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিক সংগঠনদের জানিয়ে দেয়, এক দিনের জন্য মিল বন্ধ রাখা হবে ৷ যদি পরিস্থিতি স্বভাবিক না হয় সেক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য মিল বন্ধ হতে পারে। তাঁত বিভাগের ধর্মঘটের তারা মিল চালাতে পারছে না বলেও জানানো হয়েছে নোটিশে। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার থেকেই মিল বন্ধ করার কোনও নির্দেশিকা শ্রমিকদের আগাম জানান হয়নি। মিলের কর্মরত শ্রমিকদের অভিযোগ, মিলের প্রধান গেট বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এভাবে বিনা নোটিশে মিল বনধের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়েছে মিলের শ্রমিকদের মধ্যে।
হাওড়ার আরও একটি জুটমিল কারখানায় নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে শুক্রবার থেকে 'সাসপেনশন অফ ওয়ার্কে'র নোটিশ ঝুলিয়ে দিল মিল কর্তৃপক্ষ। ফলে পুজোর আগে কর্মহীন হয়ে পড়লেন প্রায় সাত হাজার শ্রমিক। লাডলো দেশের অন্যতম বিখ্যাত চটকল। শ্রমিকদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার দুপুরের শিফট চলার সময় পুজোর বোনাস নিয়ে মিলের ভিতরে অশান্তি হয়। অভিযোগ, সেই সময়ে মিলের একাধিক অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। মিলের একাধিক আধিকারিককে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। আর এর পরেই নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার সকালে মিলের বাইরের গেটে 'সাসপেনশন অফ ওয়ার্কে'র নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।
প্রায় 100 বছরের পুরনো এই মিলটি 12 লক্ষ বর্গফুট জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে। 1400টি পরিবার এই জুটমিলের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা এই ক্যাম্পাসেই থাকেন। 1921 সালে তৈরি হওয়া এই জুটমিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলেছে। 1977 সালে কানোরিয়া পরিবার এই জুটমিলটিকে অধিগ্রহণ করে। তারপর দশকের দশক ধরে দেশের পাটবাজারে এই জুটমিলের উৎপাদিত দ্রব্য সাদরে গৃহীত হয়েছে। কিন্তু এই শতবর্ষের ঐতিহ্যের অবসানে খুব বিষণ্ণ পাটশিল্পের দুনিয়া। দুটি চটকলকে অবিলম্বে চালু করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং শ্রম দফতরের কাছে লিখিত চিঠির মাধ্যমে আবেদন করা হয় চটকল শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। সূত্রের খবর, আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়ার দাবি থাকলেও এখনও চটকল দুটো খোলার বিষয়ে কোনও আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।