বোলপুর, 7 জুলাই: ক্লোরোফর্ম দিয়ে প্রথমে অচৈতন্য করা হয় ৷ এরপর জালনা দিয়ে পেট্রল ছিটিয়ে পুড়িয়ে মারা হয় একই পরিবারের তিনজনকে ৷ পরকীয়া ঢাকতেই এমন নৃশংস হত্যালীলা চালায় নিহতের ভাইয়ের বউ ও তাঁর সঙ্গী ৷ প্রাথমিক তদন্তের পর রবিবার বোলপুরের ঘটনা সম্পর্কে এমনটাই জানালেন বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ৷
এই ঘটনায় নিহতের ভাইয়ের বউ নাজনিম বিবি ওরফে স্মৃতি ও তাঁর সঙ্গী সফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ স্মৃতিকে আগেই গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তাকে 7 দিন হেফাজতেও নিয়েছে পুলিশ ৷ আর চন্দনকে এদিন মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে । জানা গিয়েছে, চন্দন পেশায় চিকিৎসক ৷ তাই খুনের জন্য ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করে সে ৷
প্রসঙ্গত, গত 5 জুলাই বোলপুরের রায়পুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রজতপুর গ্রামে ঘুমের মধ্যে তিনজনকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয় ৷ মৃতরা হলেন আব্দুল আলিম (38), তাঁর স্ত্রী রূপা বিবি (30) ও তাঁদের 4 বছরের পুত্র সন্তান আয়ান শেখ ৷ বগটুইয়ের ছায়ায় নারকীয় এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় ৷ তড়িঘড়ি তদন্তে নামেন খোদ বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ৷ এদিন এই নিয়ে বোলপুরে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি ।
পুলিশ সুপার বলেন, "পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক চন্দন ৷ তার সঙ্গে স্মৃতির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল ৷ এই বিষয়টি জেনে গিয়েছিল নিহত আব্দুল আলিম ও তাঁর স্ত্রী রূপা ৷ এই পরকীয়া চাপা দিতেই খুনের পরিকল্পনা । মধ্যরাতে প্রথমে জালনা দিয়ে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করা হয় । যাতে অচৈতন্য হয়ে পড়ে সকলে ৷ এরপর ওই জানলা দিয়েই বালতি করে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ৷ ক্লোরোফর্মের প্রভাবেই দরজা খুলে বেরতে পারেনি তিনজনই ।"
অন্যদিকে এই খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ফরেন্সিক দল (স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি) । ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তারা ৷ বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, "জেরায় দু'জনেই স্বীকার করেছে এই ঘটনার কথা ৷ পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরানোর সময় চন্দনের হাতে ও পেটে ক্ষত হয় । সেই বিষয়টিও স্বীকার করে সে ৷ পরকীয়া ঢাকতেই এই পরিকল্পনা করে খুন ৷ আমরা আরও তদন্ত করছি ৷ ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা চলছে ।"