আসানসোল, 5 নভেম্বর: চোরে চোরে মাসতুতো ভাই নয়, বরং প্রবাদ এবার পালটে যাবে আসানসোলের মামা-ভাগ্নের কারসাজিতে । অভিযোগ, জামতাড়া কায়দায় এটিএম মেশিনে কারচুপি করে সাধারণ গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিত তারা । তবে মামা-ভাগ্নে এবার পুলিশের জালে ৷ এটিএমে রেইকি করার সময় হাতেনাতে রানিগঞ্জ স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম মহম্মদ আরমানুল (28) এবং জুনেদ আলি (18)। ধৃতরা সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে । একের পর এক ঘটনায় কার্যত আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার থানার ঘুম উড়িয়েছিল এই মামা-ভাগ্নে জুটি । আসানসোলের হীরাপুর থানা, আসানসোল উত্তর থানা, আসানসোল দক্ষিণ থানায় একাধিক এটিএমে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে ৷ এরপর তাদের টার্গেট ছিল রানিগঞ্জ থানা এলাকা ৷ তবে তার আগেই হাতেনাতে ধরা পড়ল দু'জনে ৷
ধৃতরা আসানসোলের বোতল মসজিদ এলাকার বাসিন্দা হলেও, এদের সাইবার ক্রাইমের হাতেখড়ি জামতাড়া থেকে, এমনটাই অনুমান পুলিশের। পুলিশ সূত্রে খবর, গত 25 অক্টোবর পর্যন্ত আসানসোলের হীরাপুর থানা, আসানসোল দক্ষিণ থানা এবং আসানসোল উত্তর থানার বিভিন্ন জায়গায় এই মামা-ভাগ্নে অভিনব উপায়ে এটিএম থেকে গ্রাহকদের টাকা লোপাট করতেন । পুলিশ জানতে পেরেছে, আসানসোল হীরাপুর থানায় 4টি এটিএমে, আসানসোল দক্ষিণ থানায় 5টি এটিএমে এবং আসানসোল উত্তর থানায় 4টি এটিএমে অনেক গ্রাহকের টাকা এরা লোপাট করেছে ।
পুলিশ জানিয়েছে, এটিএমে কারচুপির জন্য অপেক্ষাকৃত প্রত্যন্ত এলাকাকে বেছে নিত মামা-ভাগ্নে । যেখানে মানুষজনের যাতায়াত কম । সেই এলাকার এটিএম মেশিনের রেইকি চালাত ৷ এরপর বিশেষ উপায় গ্রাহকদের পিন নম্বর জেনে নেওয়া হত । এটিএমে টাকা তুলতে আসা অল্প শিক্ষিত গ্রাহকদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিত মামা-ভাগ্নে । ঘটনার কথা জানাজানি হতেই পুলিশ এটিএম-এর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মামা-ভাগ্নেকে চিহ্নিত করে । এরপর প্রতিটি থানাতেই এই মামা-ভাগ্নের ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয় । পুলিশ জানিয়েছে, এটিএম-এ টাকা তুলতে আসা মানুষ বিভিন্নভাবে প্রতারণের শিকার হত ৷ এই সব বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷ তবে তদন্তের স্বার্থে কীভাবে প্রতারণা করত, তা বিস্তারিত বলতে চায়নি পুলিশ ৷
অন্যদিকে, হীরাপুর আসানসোল উত্তর থানা এবং আসানসোল দক্ষিণ থানায় অপারেশন চালানোর পর এবার এই মামা-ভাগ্নের লক্ষ্য ছিল রানিগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় এটিএম থেকে গ্রাহকদের টাকা হাতানো । সেইভাবেই রানিগঞ্জ টেশনের কাছে একটি এটিএমে তারা রেইকি চালায় । রানিগঞ্জ থানায় ওই মামা-ভাগ্নের ছবি ছিল । ফলে পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় সেই ছবি মিলিয়ে দেখতেই জালে ধরা পড়ে যায় ।
ধৃত দু'জনকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক । রানিগঞ্জ থানার পুলিশ এই দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে । আরও কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ।