মালদা, 2 নভেম্বর: সরকারি জমি দখল করার চেষ্টার অভিযোগ এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে ৷ তিনি আবার পেশায় শিক্ষকও ৷ সেই ‘অবৈধ’ কাজে তাঁকে বাধা দেন এলাকার এক বিজেপি কর্মী তথা পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী ৷ তিনি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগও দায়ের করেন ৷ অভিযোগ, এরপরেই ওই শিক্ষক বিজেপি কর্মীকে খুনের হুমকি দেন ৷ কেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হল সেই কৈফিয়তও তিনি দাবি করেন বলে অভিযোগ ৷
এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত গড়গড়ি গ্রামে ৷ ঘটনাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ৷ এই ঘটনায় দু'পক্ষই হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় পরস্পরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ৷ ঘটনার পুলিশি তদন্তও শুরু হয়েছে ৷
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম খোকা ওরাওঁ ৷ তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী বলে পরিচিত এলাকায় ৷ কর্মসূত্রে জলপাইগুড়িতে থাকেন ৷ পৈতৃক বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুরে ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, গড়গড়ি গ্রামে তিন বিঘারও বেশি একটি সরকারি খাস জায়গা রয়েছে ৷ দীর্ঘদিন ধরেই এই জায়গার উপর নজর রয়েছে জমি মাফিয়াদের ৷ এর আগে ওই মাফিয়ারা জমি দখল করার চেষ্টা করেছিল ৷ তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাদের বড়সড় ঝামেলাও হয়েছিল ৷ অভিযোগ, এবার খোকা ওরাওঁ সেই জায়গার একাংশ দখল করার চেষ্টা করেছিলেন ৷ তাতে বাধা দেন এলাকার বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী হরতাল ওরাওঁ ৷ এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কিছুদিন ধরেই গন্ডগোল চলছে ৷
হরতাল ওরাওঁয়ের বক্তব্য, "দু'দিন আগে খোকা ওরাওঁ আরএসপি পার্টি অফিসের পিছনে এক একরের বেশি পরিমাণ সরকারি জায়গা দখল করতে এসেছিল ৷ এটা যে সরকারি জায়গা, তার বোর্ড লাগানো রয়েছে ৷ তবু সে এই জায়গা দখল করার চেষ্টা করছিল ৷ সেকথা জানতে পেরে আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেছি ৷ সেটা জানাজানিও হয়েছে ৷ অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে সে আমার সামনে এসে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, তুলে নিয়ে যাওয়া, এমনকী খুনেরও হুমকি দিচ্ছে ৷ আমরা অনেক বছর ধরে এই মাঠ রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি ৷ আমরা চাই, সরকারি জায়গা যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক ৷"
এ দিকে খোকা ওরাওঁয়ের দাবি, "আমি কোনও সরকারি জায়গা দখল করিনি ৷ ওখানে আমার একটা নিজস্ব জায়গা রয়েছে ৷ তার সামনে পূর্ত দফতরের জায়গা ৷ নিজের জায়গায় যাতায়াতের জন্য পূর্ত দফতরের ওই জায়গাটি আমাকে ব্যবহার করতে হয় ৷ আমরা জানি, পিছনে কেউ থাকলে তারা পূর্ত দফতরের জায়গা দিয়েই যাতায়াত করবে ৷ আসলে হরতাল ওরাওঁয়ের সহযোগী হয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আদিত্য মিশ্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন ৷"
তিনি আরও বলেন, "পূর্ত দফতরের ওই জায়গাটি আমার ব্যবহারের উপযোগী করে দিতে হরতাল ওরাওঁ আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চায় ৷ আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে সে দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে এসে আমার স্ত্রীকে অভব্য ভাষায় গালাগালি করে ৷ আমাকে খুনের হুমকি দেয় ৷ পরে সব জানতে পেরে আমি ওই জায়গায় যাই ৷ তখন ওরাই ঝামেলা পাকায় ৷ এ নিয়ে সামান্য বচসা হয় ৷ আমি পেশায় শিক্ষক ৷ আমি কাউকে কোনও হুমকি দিইনি ৷"
এ দিকে আদিত্য মিশ্র বলছেন, "খোকা ওরাওঁয়ের সঙ্গে 10-12 বছর ধরে আমার কোনও কথাবার্তা নেই ৷ পাঁচ বছর আগে যখন আমি ভূমি কর্মাধ্যক্ষ ছিলাম, তখন তিনি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে সরকারি জমি জবরদখল করে অন্যকে বিক্রি করতেন ৷ আমার বাড়ির পিছনেই তিনি সরকারি জমি নিজের স্ত্রীর নামে রেকর্ড করিয়েছেন ৷ যদিও পরে সেই রেকর্ড ফের সরকারের নামে চলে গিয়েছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা খোকা ওঁরাওয়ের পেশা ৷ তিনি বাইরে থেকে এসে কোনও না কোনও বিষয়ে সমাজে গন্ডগোল করে চলে যান ৷ এমনকী তিনি সাম্প্রদায়িক গন্ডগোলও বাঁধিয়েছেন ৷ হরতাল ওঁরাও যে অভিযোগ করেছে তার স্বপক্ষে নিশ্চয়ই তার কাছে প্রমাণ রয়েছে ৷ তা না হলে সে কেন এভাবে লিখিত অভিযোগ জানাবে ৷"
তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসির কথায়, "গোটা ঘটনা নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তদন্ত শুরু করেছেন ৷ আইন আইনের পথেই চলবে ৷ তবে খোকা ওরাওঁ নামে কাউকে আমরা চিনি না ৷"