কলকাতা, 4 অগস্ট: ঘটনার পর কেটে গিয়েছে 24 ঘণ্টা ৷ অবশেষে রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিল শাসকদল ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ওই মহিলা সরকারি আধিকারিকের কাছে মন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে । এখানেই শেষ নয়, সরাসরি তাঁকে দলের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁকে পদত্যাগপত্রও পাঠাতে বললেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ৷ দলের নির্দেশ পেয়ে কারামন্ত্রীর পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন অখিল ৷
প্রসঙ্গত, বন দফতরের জমিতে রাতের অন্ধকারে বেআইনিভাবে দোকান তৈরির অভিযোগ ওঠে ৷ আর সেই দোকান বন দফতর ভেঙে দিতেই মহিলা আধিকারিককে গালাগালি ও লাঠিপেটা করার হুমকি দেওযার অভিযোগ ওঠে কারা দফতরের মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে ৷ শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর সৈকতের ধারে এই ঘটনা ঘটে ৷
জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি এই ঘটনায় দলকে করা পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন । তারপরেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি নিজে টেলিফোনে কারামন্ত্রী অখিল গিরির সঙ্গে কথা বলেন । রবিবার তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তথা দলের প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন অখিল গিরির বিষয় এমনটাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ৷
শান্তনু সেনের কথায়, "মন্ত্রীর এই আচরণকে দল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করেছে । শনিবার অখিল গিরি মহিলা ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করেছেন দল কোনভাবেই তাতে সমর্থন করে না । রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ইতিমধ্যেই ওই মহিলা ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছেন । দলের নির্দেশে আমাদের রাজ্যসভার সাংসদ তথা দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ইতিমধ্যেই অখিল গিরির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছেন । তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে সেই মহিলা ফরেস্ট অফিসারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং দলের কাছে অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে হবে ।"
শান্তনু সেনের কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে, তৃণমূল অখিল গিরির বিষয়টিতে অত্যন্ত কড়া একটা অবস্থান নিচ্ছে । বারবার রাজ্যের কারামন্ত্রীর বক্তব্যে যেভাবে দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় তৃণমূলের কাছে । আর সে কারণেই এবার তাঁকে মন্ত্রিসভার পদও হারাতে হতে পারে । যদিও প্রাক্তন সাংসদের বক্তব্যে এটা স্পষ্টভাবে বলা নেই যে, অখিল গিরিকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে নাকি দলীয় পদ থেকে । তবে মনে করা হচ্ছে, এই ঘটনার জন্য ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকেও সরিয়ে দিতে পারেন ।
প্রসঙ্গত, গতকালই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ অখিল গিরির ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কড়া সমালোচনা করেছিলেন । স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল কোনভাবেই মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সমর্থন করে না । তারপর 24 ঘণ্টার মধ্যেই অখিল গিরির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । আর যা নিয়ে বলতে গিয়ে এ দিন শান্তনু সেন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, রাজ্যে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই সেই দল যে রাজধর্ম পালন করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ।
উল্লেখ্য, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও অখিল গিরিকে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য করতে দেখা গিয়েছিল । সেই সময় তাঁর এই বক্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ক্ষমা চেয়েছিলেন । তারপরেও অখিল গিরি যে বদলাননি এই ঘটনা থেকেই তা একপ্রকার পরিষ্কার । আর সে কারণেই এবার তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে দল । যদিও শান্তনু সেনের এই বক্তব্যের পর অখিল গিরির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে এখনও কিছু জানেন না বলেই জানিয়েছেন ।