বোলপুর, 2 মে: তাপমাত্রার পাশাপাশি রাজনৈতিক পারদ চড়ছে অনুব্রত মণ্ডলের গড় বোলপুরে ৷ কিন্তু তার পাশেই শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গল লাগোয়া আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে গেলে মনেই হচ্ছে না সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে লোকসভা নির্বাচনের আসর বসেছে ৷ কারণ বনেরপুকুর ডাঙা, বল্লভপুর ডাঙা, সর ডাঙা, বালিপাড়ায় কোনও রাজনৈতিক দলকে দেওয়াল লিখন করতে দেননি বাসিন্দারা ৷
আদিবাসী মানুষজন তাঁদের ঘরের দেওয়াল মাটি দিয়ে লেপে তাতে নানা কারুকাজ ও দেওয়াল ভাস্কর্য করেন ৷ তুলে ধরেন নিজেদের সংস্কৃতি ৷ তাই গ্রামের নান্দনিকতা ও কৃষ্টি যাতে নষ্ট যাতে না-হয়, তার জন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে তাঁরা দেওয়াল লিখন করতে দেন না ৷ গ্রামগুলিতে এমনই অলিখিতি হুলিয়া জারি রয়েছে । যে কোনও দলের প্রার্থী গ্রামে প্রচারে যেতেই পারেন ৷ কিন্তু, দেওয়াল লেখা যাবে না ৷ এটাই দস্তুর ৷
গরু পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তিহাড়ে বন্দি তৃণমূল কংগ্রেসের একসময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল । তাঁর গড় হিসাবে পরিচিত বোলপুর ৷ তবে তাঁকে ছাড়াই হচ্ছে এ বারের লোকসভা নির্বাচন ৷ বোলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অসিতকুমার মাল, বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহা ও সিপিআইএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধানের মধ্যে লড়াই হবে ৷ দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি বোলপুরে তাপমাত্রার পারদ 42 থেকে 45 ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে ৷ তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে রাজনৈতিক পারদও ৷ জোর কদমে চলছে প্রচার ৷
সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে লোকসভা নির্বাচনের এত বড় আসর বসেছে, তা শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গল লাগোয়া বনেরপুকুর ডাঙা, সরকার ডাঙা, বল্লভপুর ডাঙা, সর ডাঙা, বালিপাড়া প্রভৃতি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলি গেলে মনেই হবে না । কারণ এই গ্রামগুলির বাসিন্দারা কোনও রাজনৈতিক দলকে দেওয়াল লিখন করতে দেন না ৷ আদিবাসীরা তাঁদের বাড়ির দেওয়ালে মাটি লেপে তাতে করেন নানা কারুকাজ, দেওয়াল ভাস্কর্য ৷ গ্রামের এই নান্দনিকতা রক্ষা করতেই তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলকে দেওয়াল লিখনের অনুমতি দেন না ৷ তাঁদের আরও একটি মত, যে যাকে ইচ্ছে ভোট দিক, কিন্তু গ্রামে যাতে রাজনীতি প্রবেশ না-করে, এটাও একটি অঘোষিত কারণ দেওয়াল লিখতে না-দেওয়ার ৷ তবে যে কোনও প্রার্থী গ্রামে প্রচারে আসতেই পারেন, সে ক্ষেত্রে কোনও বাধা বা আপত্তি নেই বাসিন্দাদের ৷
গ্রামবাসীদের মধ্যে রাম সরেন, চম্পা কিস্কু, সিতে বাস্কি বলেন, "আমরা ভোট দিই । কিন্তু, গ্রামে দেওয়াল লিখতে দেব না কারওকেই ৷ আমরা বহু কষ্ট করে বহু দূর থেকে মাটি এনে নিজেদের ঘরের দেওয়াল লেপি ৷ সেগুলো নষ্ট করতে দেব না ৷ তাই স্পষ্ট বলে দিয়েছি, কেউ দেওয়াল যাতে না-লেখে ৷ তবে প্রচার করতে আসতেই পারে সবাই ।"
আরও পড়ুন: