কলকাতা, 25 নভেম্বর: শহর দেখা যাচ্ছে দামি গাড়ি ব্যবহারকারীরাই দিচ্ছেন না রোড ট্যাক্স । আর মূলত এটাই এই মুহূর্তে পরিবহণ দফতরের কাছে একটা বড় চিন্তার কারণ । পরিবহণ দফতরের হিসেব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রোড ট্যাক্স বাকি রয়েছে প্রায় 30 শতাংশ গাড়ির । রাজ্যের মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর কথায়, এর মধ্যে একটা বড় অংশ এমন রয়েছে যেগুলি দামি গাড়ি । তাঁর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী শুধু শহর কলকাতাতেই পেনাল্টি-সহ এ ধরনের গাড়ির রোড ট্যাক্স বাকি রয়েছে আশি কোটি টাকা ।
সূত্রের খবর, এই তালিকায় কয়েকদিন আগে পর্যন্ত এক বাংলা চলচ্চিত্রের নামী অভিনেত্রীও ছিলেন । কিন্তু সরকারের তরফ থেকে নোটিশ দেওয়ায় তড়িঘড়ি সেই রোড ট্যাক্সের টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন তিনি । কিন্তু সব ক্ষেত্রে যে এমনটা হয় তা নয় । আর সেই কারণেই এই বিপুল পরিমাণ সড়ক পরিবহণ কর শুধুমাত্র শহর কলকাতাতেই বাকি রয়েছে ।
রোগটা যে খুব সাম্প্রতিক সময়ের এমনও নয়, 2023 সালের একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে । 2023 সালে পরিবহণ দফতরের দেওয়া একটি তথ্য থেকে দেখা যায়, 20 লক্ষ টাকার বেশি দামি, এমন প্রায় 4500 গাড়ির মালিক পথকর মেটাননি । পরবর্তীতে এ নিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হলে প্রায় 1500 গাড়ির মালিক জরিমানা-সহ কর মিটিয়ে দেন । তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখা যায়, ওই সব গাড়ির মধ্যে ছিল সাফারি, রেঞ্জ রোভার, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড রোভার, পোর্শে, ল্যাম্বরঘিনির মতো অজস্র সব মূল্যবান গাড়ি । আরও আশ্চর্যের বিষয়, যাঁরা সে সময় পরিবহণ দফতরের নজরে আসেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন প্রথিতযশা ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, কেউ আবার চিত্রতারকা ।
রাজ্য সরকারের পরিবহণ আইন বলছে, রাস্তায় গাড়ি বের করতে গেলে পথকর মেটাতেই হবে । অতএব এক্ষেত্রে জরিমানা বাধ্যতামূলক । আর এমন ঘটনার জন্য বহু ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায়, গাড়ির পথকর ও জরিমানা মিলে টাকার অংক 10-12 লক্ষ টাকায় পৌঁছে যায় । এইভাবেই শুধু কলকাতায় প্রায় 80 কোটি টাকা বাকি রয়েছে দামি গাড়িগুলির ক্ষেত্রে । গোটা রাজ্য ধরলে টাকার অংক আরও বাড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই ।
এই নিয়ে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পথ কর না দেওয়া নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনের । তিনি মন্ত্রী হওয়ার আগে এর পরিমাণ ছিল প্রায় 40%-এর কাছাকাছি । এখন পরিবহণ দফতর কড়া হওয়ায় সেটা 30 শতাংশের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে । তবে এই প্রবণতা তাঁদের কাছে অন্যতম বড় চিন্তার কারণ ।
তিনি এও জানিয়েছেন, "বহু ক্ষেত্রে যখন এ ধরনের গাড়ি কিনতে যাওয়া হয়, তখন শোরুম থেকেই বলা হয় না যে, আপনি 15 বছরের অর্থাৎ লাইফ টাইম রোড ট্যাক্স দিয়ে দিলে করের ক্ষেত্রে একটা বড় ছাড় পাওয়া যায় । ফলে অনেকেই পাঁচ বছরের পর আর রোড ট্যাক্স দেন না । আমরা চেষ্টা করছি, এই বিষয়টা নিয়ে এসএমএস করে ওই গাড়ির মালিকদের সতর্ক করার । সে ক্ষেত্রেও সতর্ক না হলে পরবর্তীতে কড়া পদক্ষেপ করা হবে ৷"