ETV Bharat / state

টাকার প্রলোভনে পড়ে কিডনি বিক্রি মহিলার, ফের সক্রিয় পাচার চক্র - Kidney Trafficking

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 10, 2024, 1:01 PM IST

Updated : Jun 10, 2024, 4:55 PM IST

Kidney Trafficking: টাকার প্রলোভনে পড়ে কিডনি বিক্রি করলেন এক মহিলা ৷ যদিও প্রতিশ্রুতি মতো টাকা তাঁকে দেওয়া হয়নি ৷ এই ঘটনায় ফের প্রকাশ্যে এসেছে রায়গঞ্জে কিডনি পাচার চক্রের রমরমা ৷

ETV BHARAT
টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি বিক্রি মহিলার (নিজস্ব চিত্র)

রায়গঞ্জ, 10 জুন: ফের জেলায় সক্রিয় কিডনি পাচার চক্র ! এমনই অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়াল উত্তর দিনাজপুরে ৷ এবার এক মহিলাকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ।

টাকার প্রলোভনে পড়ে কিডনি বিক্রি মহিলার (নিজস্ব ভিডিয়ো)

রায়গঞ্জের বিন্দোল গ্রামপঞ্চায়েতের জালিপাড়া এলাকার ঘটনা । উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের চৈনগর এলাকার বাসিন্দা মাইজালি বর্মনের (33) কিডনি টাকার বিনিময়ে কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ । অভিযোগের তির জালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রবি জালির বিরুদ্ধে । মাইজালি বর্মনের অভিযোগ, তিনি তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর প্রচুর টাকার ঋণে জর্জরিত ছিলেন । গত চার মাস আগে রবি জালির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় ৷ এরপর থেকেই রবি জালি তাঁকে কিডনি বিক্রি করার জন্য প্রোলোভন দেন । কিডনির বিনিময়ে 15 লক্ষ টাকা দেওয়া হবে তাঁকে জানান রবি জালি ।

এই প্রস্তাবে রাজি হলে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে মাইজালি বর্মনের বাঁদিকের কিডনি কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ । যদিও তাঁকে কিডনির বিনিময়ে 25 লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও মাত্র 5 লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূ ৷ পরবর্তীতে আরও দেড় লক্ষ টাকা দিতে রাজি হলেও সেই টাকাও রবি জালি দেননি বলে জানান মাইজালি বর্মন । সেই দেড় লক্ষ টাকা গত চার জুন রবি জালির বাড়িতে চাইতে গেলে রবি জালি তাঁকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ ।

মারধরের পাশাপাশি মাইজালিকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে তিনি জানিয়েছেন ৷ সেই আতঙ্কেই চৈনগরে নিজের বাড়ি থাকতে পারছেন না মাইজলি বর্মন ৷ বাধ্য হয়ে রায়গঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে রয়েছেন তিনি । তিনি রায়গঞ্জ থানায় মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন ।

প্রসঙ্গত, দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর আর্থিক সংকট দেখা দেয় মাইজালির বর্মনের । স্বামী কার্তিক বর্মন ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন । ঋণে জর্জরিত হওয়ায় কিডনি বিক্রি করতে রাজি হয়ে যান তিনি । টাকার বিনিময়ে কিডনি বিক্রি করতে রাজি হলেও প্রতারণার ফাঁদে পড়বেন এটা ভাবতে পারেননি মাইজালি বর্মন । তাই এখন সেই টাকা ফেরতের পাশাপাশি রবি জালির কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন তিনি ।

উল্লেখ্য, একটা সময়ে রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রামপঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা কিডনি পাচার চক্রের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল । এই পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা হিসেবে নাম উঠেছিল বিন্দোলের জালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রেজ্জাক ও কুদ্দুসের । যাকে ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্যজুড়ে । দীর্ঘদিন এই কিডনি পাচার চক্র বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন ওই এলাকার বাসিন্দা তথা সমাজকর্মী অশোককুমার রায় । সেই আন্দোলনের জেরে সতর্ক হয় প্রশাসন । পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় এই কিডনি পাচার চক্র ।

সমাজকর্মী অশোককুমার রায় বলেন, "1997-98 সালে প্রথম এই কিডনি পাচার চক্র শুরু হয় । দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে এই চক্র গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বন্ধ ছিল । আবারও এই চক্র সক্রিয় হলে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে । দরকার পড়লে আমরা ফের আন্দোলনে নামব ।"

অপরদিকে, ওই এলাকায় কিডনি পাচার চক্রের পাণ্ডারা সক্রিয় হওয়ায় অবাক স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জিন্নাতুল খাতুন । যদিও তিনি এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন । তিনি বলেন, "আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব । প্রশাসনকেও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব । ওই মহিলা যদি ঘরছাড়া হন তবে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে আমি পদক্ষেপ করব ।"

যদিও রবি জালির বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে বলে দাবি করেছেন রবি জালির ভাই ও স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যার স্বামী ছবি জালি । তিনি বলেন, "ওই মহিলা দাদার কাছে টাকা পেতেন, তবে কিডনি বিক্রির সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই । সম্পূর্ণ অভিযোগ মিথ্যে । আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করছেন ওই মহিলা ।"

রায়গঞ্জ, 10 জুন: ফের জেলায় সক্রিয় কিডনি পাচার চক্র ! এমনই অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়াল উত্তর দিনাজপুরে ৷ এবার এক মহিলাকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ।

টাকার প্রলোভনে পড়ে কিডনি বিক্রি মহিলার (নিজস্ব ভিডিয়ো)

রায়গঞ্জের বিন্দোল গ্রামপঞ্চায়েতের জালিপাড়া এলাকার ঘটনা । উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের চৈনগর এলাকার বাসিন্দা মাইজালি বর্মনের (33) কিডনি টাকার বিনিময়ে কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ । অভিযোগের তির জালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রবি জালির বিরুদ্ধে । মাইজালি বর্মনের অভিযোগ, তিনি তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর প্রচুর টাকার ঋণে জর্জরিত ছিলেন । গত চার মাস আগে রবি জালির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় ৷ এরপর থেকেই রবি জালি তাঁকে কিডনি বিক্রি করার জন্য প্রোলোভন দেন । কিডনির বিনিময়ে 15 লক্ষ টাকা দেওয়া হবে তাঁকে জানান রবি জালি ।

এই প্রস্তাবে রাজি হলে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে মাইজালি বর্মনের বাঁদিকের কিডনি কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ । যদিও তাঁকে কিডনির বিনিময়ে 25 লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও মাত্র 5 লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূ ৷ পরবর্তীতে আরও দেড় লক্ষ টাকা দিতে রাজি হলেও সেই টাকাও রবি জালি দেননি বলে জানান মাইজালি বর্মন । সেই দেড় লক্ষ টাকা গত চার জুন রবি জালির বাড়িতে চাইতে গেলে রবি জালি তাঁকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ ।

মারধরের পাশাপাশি মাইজালিকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে তিনি জানিয়েছেন ৷ সেই আতঙ্কেই চৈনগরে নিজের বাড়ি থাকতে পারছেন না মাইজলি বর্মন ৷ বাধ্য হয়ে রায়গঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে রয়েছেন তিনি । তিনি রায়গঞ্জ থানায় মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন ।

প্রসঙ্গত, দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর আর্থিক সংকট দেখা দেয় মাইজালির বর্মনের । স্বামী কার্তিক বর্মন ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন । ঋণে জর্জরিত হওয়ায় কিডনি বিক্রি করতে রাজি হয়ে যান তিনি । টাকার বিনিময়ে কিডনি বিক্রি করতে রাজি হলেও প্রতারণার ফাঁদে পড়বেন এটা ভাবতে পারেননি মাইজালি বর্মন । তাই এখন সেই টাকা ফেরতের পাশাপাশি রবি জালির কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন তিনি ।

উল্লেখ্য, একটা সময়ে রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রামপঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা কিডনি পাচার চক্রের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল । এই পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা হিসেবে নাম উঠেছিল বিন্দোলের জালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রেজ্জাক ও কুদ্দুসের । যাকে ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্যজুড়ে । দীর্ঘদিন এই কিডনি পাচার চক্র বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন ওই এলাকার বাসিন্দা তথা সমাজকর্মী অশোককুমার রায় । সেই আন্দোলনের জেরে সতর্ক হয় প্রশাসন । পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় এই কিডনি পাচার চক্র ।

সমাজকর্মী অশোককুমার রায় বলেন, "1997-98 সালে প্রথম এই কিডনি পাচার চক্র শুরু হয় । দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে এই চক্র গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বন্ধ ছিল । আবারও এই চক্র সক্রিয় হলে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে । দরকার পড়লে আমরা ফের আন্দোলনে নামব ।"

অপরদিকে, ওই এলাকায় কিডনি পাচার চক্রের পাণ্ডারা সক্রিয় হওয়ায় অবাক স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জিন্নাতুল খাতুন । যদিও তিনি এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন । তিনি বলেন, "আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব । প্রশাসনকেও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব । ওই মহিলা যদি ঘরছাড়া হন তবে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে আমি পদক্ষেপ করব ।"

যদিও রবি জালির বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে বলে দাবি করেছেন রবি জালির ভাই ও স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যার স্বামী ছবি জালি । তিনি বলেন, "ওই মহিলা দাদার কাছে টাকা পেতেন, তবে কিডনি বিক্রির সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই । সম্পূর্ণ অভিযোগ মিথ্যে । আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করছেন ওই মহিলা ।"

Last Updated : Jun 10, 2024, 4:55 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.