দুর্গাপুর, 2 অগস্ট: 12 ঘণ্টা ধরে মুষলধারে বৃষ্টির জেরে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি করেছে ৷ জলে ভাসছে শিল্পশহর দুর্গাপুর ৷ বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে হচ্ছে একাধিক নদী ৷ প্রবল বৃষ্টির জেরে ধস নামে রেললাইনের পাশে ৷ তার জেরে রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে হাওড়া-বর্ধমান লাইনে ৷ বাঁকুড়া, বীরভূম-সহ বেশ কয়েকটি জেলার পরিস্থিতিও বেশ খারাপ ৷
বৃষ্টির পরিমাণ এতটাই বেশি যে শিল্পশহর দুর্গাপুরে খেলার মাঠগুলো কার্যত বড় পুকুরে পরিণত হয়েছে ৷ আর স্কুলের বেঞ্চ ও টেবিল জলের তলায় চলে গিয়েছে ৷ বিভিন্ন ওয়ার্ডে হাজার হাজার মানুষ জলে আটকে পড়েছে । দুর্গাপুরের নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে । কুনুর নদী-সহ অন্যান্য নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্গাপুর নগর নিগমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে ৷ দুর্গাপুর নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জলে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করা হচ্ছে । বিভিন্ন স্থানে বহু গাছ উপড়ে পড়েছে ৷ দেওয়াল ও মাটির ঘর ধসে পড়েছে । তবে হতাহতের কোনও খবর নেই । তিনি বলেন, "আমি সব এলাকায় যাব । জলে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করে অন্য জায়গায় সরানো হবে । আগে তাদের এই বিপদ থেকে বাঁচাতে হবে ।"
কয়েকদিন ধরে রাজ্য জুড়ে প্রবল বৃষ্টির ফলে হাওড়া-বর্ধমান শাখার মেন লাইনে ধস নেমেছে । টানা বৃষ্টির কারণে চুঁচুড়া ও চন্দননগর স্টেশনের মধ্যে দেবীপুর এলাকায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে । শুক্রবার সকাল থেকে ওইসব এলাকায় ট্রেনের গতি কমে যায় ।
রেল সূত্রে খবর, রেললাইন থেকে 10 ফুট দূরে ধস নামে ৷ পাশে একটি বড় জলাশয় থাকায় গার্ডওয়ালগুলি তলিয়ে যায় । বৃহস্পতিবার রাতেই বিষয়টি খতিয়ে দেখেন রেলের কর্মীরা । সেই সময় দুন এক্সপ্রেসকে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ৷ শুক্রবার সকাল থেকে রেলের পক্ষ থেকে মেরামতি শুরু হয় । পূর্ব রেলের সিপিআরও কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, ওই জায়গায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে । কাজ শেষ হলেই পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে ৷
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের অবস্থাও প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে ৷ সেখানে ঝুমি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ৷ হুগলির জনজীবনও বিপর্যস্ত বৃষ্টিতে ৷ বীরভূমের বিভিন্ন অংশের অবস্থাও একইরকম ৷ পূর্ব মেদিনীপুরও ব্যতিক্রম নয় ৷ সেখানেও পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকেই যাচ্ছে ৷ এই জেলার অনেকটা অংশে উপকূল রয়েছে ৷ তাই প্রশাসনের তরফে আলাদা করে ওই এলাকার জন্য সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে ৷ মৎস্যজীবীদেরও আবহাওয়ার পরিস্থিতি বুঝে সতর্ক করেছে আবহওয়া দফতর ৷
বাঁকুড়াতেও একাধিক নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে যাচ্ছে ৷ জলস্তর বেড়েছে গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, কংসাবতী নদীর ৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় 98 মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ওই জেলায় ৷ আগামী কয়েকদিনও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ৷ ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷