জলপাইগুড়ি, 14 অক্টোবর: অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াতে দেশজুড়ে অনশনের ঘোষণা করেছিল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) ৷ সেই ঘোষণার পরই সোমবার অনশনে বসলেন আইএমএ-র জলপাইগুড়ি শাখার সদস্যরা ৷ এদিন সকালে জলপাইগুড়ি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের গেটের সামনে অনশন শুরু করেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা ৷
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা-সহ 10 দফা দাবি নিয়ে ধর্মতলায় অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ ইতিমধ্যে, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন 4 জন জুনিয়র চিকিৎসক ৷ তবে তাঁদের এই আন্দোলনে রাজ্যের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি, সিনিয়র ডাক্তার-সহ বিশিষ্ট জনেদের পাশে পেয়েছেন অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷
সম্প্রতি, জুনিয়র চিকিৎসকদের সমর্থনের জন্য দেশডুড়ে প্রতীকী অনশনের কথা ঘোষণা করে আইএমএ ৷ সেই ঘোষণার পর রবিবার 12 ঘণ্টার প্রতীকী অনশন করেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) মালদা শাখার সদস্যরা। এবার সেই পথেই হাঁটলেন জলপাইগুড়ি শাখার সদস্যরা ৷ তাঁদের সঙ্গে এদিন অনশনে যোগ দেন জয়েন্ট প্লাটফর্ম অব ডক্টরস্ এবং জলপাইগুড়ি নাগরিক সংসদের সদস্যরাও ৷
অনশনরত ডাক্তার সুদীপন মিত্র বলেন, "দশ দফা দাবি নিয়ে অনশন করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা ৷ এক এক করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাঁরা ৷ আমরা সিনিয়র হয়ে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিতে অনশনে বসেছি । ইতিমধ্যেই, আমরা গণইস্তফার পথে সিদ্ধান্ত নিয়েছি । সরকারের উচিত, নমনীয় হয়ে অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করা ।"
জলপাইগুড়ি নাগরিক সংসদের সদস্যা দেবপ্রিয়া সেন বলেন, "আমরা প্রথম দিন থেকে আরজি কর ঘটনার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি । আন্দোলন করেছি ৷ জুনিয়র ডাক্তাররা দীর্ঘদিন ধরে অনশন করছেন ৷ তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা ষষ্ঠীর দিনও 12 ঘণ্টার প্রতীকী অনশন করেছিলাম । আজ আইএমএ-র ডাকে অনশন কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছি ।"
উল্লেখ্য, কলকাতার পাশাপাশি দশ দফা দাবি নিয়ে অনশন করছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ 200 ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে আন্দোলনের ৷ শনিবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ডাক্তারি পড়ুয়া অলোক বর্মা ৷ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে । তড়িঘড়ি তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হাইব্রিড সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাঁর জায়গায় অনশনে বসলেন ইএনটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সন্দীপ মণ্ডল ।
সোমবার সকাল থেকে তিনি অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগ দেন । শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে শৌভিকেরও ৷ কিন্তু অনশনে বসে রয়েছেন তিনি ৷ এদিকে, সোমবার সকাল থেকে রামকৃষ্ণ মিশনের চার প্রাক্তন পড়ুয়া ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় 12 ঘণ্টার প্রতীকী অনশন শুরু করেন ৷
চিকিৎসক সাগ্নিক মিত্র বলেন, " সিসিইউতে অলোক বর্মার চিকিৎসা চলছে। শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে । তাঁকে আমরা এখন জনসাধারণ ও সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে সরিয়ে রাখব।" অনশনে যোগ দিয়ে সন্দীপ বলেন, "আমরা তো এখন দশ দফা দাবি চিন্তাই করছি না । প্রথম দাবি আরজি করের নির্যাতিতা বিচার পান । সেটাই তো হয়নি । সেটা হবে তারপর বাকিগুলো । আর এবার আমি অনশনে বসলাম । খালি বৈঠক হচ্ছে কিন্তু তাতে ফল কিছু বেরচ্ছে না ।"
অন্যদিকে, হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রোগীদের । আউটডোরের মোট বিভাগের মধ্যে মাত্র 35 শতাংশ খোলা। বাকি বিভাগে চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ উঠেছে । ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা ৷ জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি তুলে নিলেও আইএমএ ও ফেডারেশন অফ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সোমবার থেকে দু'দিনের কর্মবিরতির ডাক দেওয়ায় পরিষেবা ব্যহত হয়েছে হাসপাতালে ।