ব্যারাকপুর, 8 জুলাই: পুজো কমিটির দখলদারি নিয়ে বচসা ৷ হাতাহাতিতে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর ৷ মৃতের নাম পার্থ চৌধুরী (40)। অভিযোগের তির স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের দিকে ৷ ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ব্যারাকপুরের ওল্ড ক্যালকাটা রোডের সুকান্ত পল্লী এলাকায়।
ঘটনার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার লোকজন। ক্ষুদ্ধ বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ক্ষমতার জোরে স্থানীয় একটি ক্লাবের পুজো কমিটির ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে চেয়েছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর মৌসুমী মুখোপাধ্যায়। সেটা না-হওয়ায় পুজো কমিটির বৈঠক চলাকালীন সদলবলে চড়াও হন অভিযুক্ত কাউন্সিলর। এরপরই সেখানে গণ্ডগোল বেঁধে যায় ৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই সময় মারধর করা হয় পার্থকে ৷ আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর ৷ যদিও পুরসভার চেয়ারম্যানের দাবি, মারপিটের সময় ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু হয়েছে পার্থর। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় পৌঁছয় পুলিশ ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ পুলিশ জানিয়েছে, মারধর, নাকি অসুস্থ হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরই জানা যাবে।
জানা গিয়েছে, স্থানীয় ওডিসি ক্লাবের পুজোর নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বৈঠক ছিল রবিবার রাতে। বৈঠকে প্রথম দিকে হাজির ছিলেন না ব্যারাকপুর পুরসভার 12 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মৌসুমী মুখোপাধ্যায় । বৈঠক শুরুর বেশ কিছুক্ষণ পরে হঠাৎই সদলবলে সেখানে ঢুকে যান তিনি । অভিযোগ, বৈঠকে ঢুকেই কাউন্সিলর নতুন কমিটি গঠন নিয়ে হম্বিতম্বি করতে শুরু করেন ৷ কমিটির মাথায় তাঁকে রাখতে হবে, এই দাবি তুলে জোর করে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন তিনি।
এর বিরোধিতা করেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ । আর তা ঘিরেই গন্ডগোল বেঁধে যায় দু'পক্ষের মধ্যে। সেই সময় ক্লাব ঘরের ভিতরের দরজা বন্ধ করে দেন তৃণমূল কাউন্সিলরের লোকজন। যার ফলে ক্লাব সদস্যরা ভিতরেই আটকে থাকেন। একথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পার্থ চৌধুরী। অভিযোগ, তখনই কাউন্সিলরের লোকজনের হাতে আক্রান্ত হন তিনি । মারধরের ফলে অচৈতন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পার্থ। সেই অবস্থায় তাঁকে ব্যারাকপুরের বিএন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই বিষয়ে ক্লাব কর্মকর্তা সঞ্চিতা কুমারী বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই ওই তৃণমূল কাউন্সিলর চাইছিলেন নিজের মতো করে কমিটি গঠন করতে । কিন্তু তা কিছুতেই হচ্ছিল না । এবারও কাউন্সিলর তাঁর পছন্দের কমিটি করে পুজোর কর্তৃত্ব রাখতে চাইছিলেন নিজের হাতে। সেই কারণে সদলবলে পুজো কমিটির বৈঠক চলাকালীন চড়াও হন তিনি। গন্ডগোলের সময় ওনার স্বামী এবং ছেলেও ছিলেন। এই ঘটনার জন্য কাউন্সিলরই দায়ী ।"
এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতেই বিএন বসু হাসপাতালে ছুটে যান ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস। তিনি বলেন, "ক্লাবের পুজো কমিটি গঠন নিয়ে একটা গন্ডগোল হয়েছে শুনেছি । যাঁর মৃত্যু হয়েছে তিনি নাকি বাইরে ছিলেন । তখনই ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে স্ট্রোক হয় তাঁর । যদি কেউ দোষ করে থাকে, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখবে। আইন মোতাবেক তাঁর শাস্তি হবে।"