কলকাতা, 18 অগস্ট: আরজি করের ঘটনার পর থেকেই উলটো সুরে গাইছেন তৃণমূল কংগ্রেসের ছোট-বড় অনেক নেতাই । দলের অন্দরে একাংশের মধ্যে থেকে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শোনা যাচ্ছে । আর এরই মাঝে দল এবং সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের গ্রেফতারি চাইলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় ।
CBI must act fairly . Custodial interrogation of Ex Principal and Police Commissioner is a must to know who and why floated suicide story.Why wall of hall demolished, who patronised Roy to be so powerful, Why sniffer dog used after 3 days.100s of such questions. Make them speak
— Sukhendu Sekhar Ray (@Sukhendusekhar) August 17, 2024
সাম্প্রতিক সময়ে আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে বারবার মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে এই প্রবীণ তৃণমূল সাংসদকে । বিশেষ করে রাত দখলের আন্দোলনের আগেই এই বর্ষিয়ান সাংসদ জানিয়ে দিয়েছিলেন, একজন মেয়ের বাবা ও নাতনির দাদু হিসাবে আমজনতার রাত দখলের এই আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছেন তিনিও । এখানেই শেষ নয়, তৃণমূল বিধায়ক হয়েও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে নারী নির্যাতন নিয়ে করা আইন তৈরির সুপারিশ করেছিলেন তিনি । এবার সেই সুখেন্দুশেখর রায় সোশাল মিডিয়ায় সরাসরি কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের গ্রেফতারির দাবি জানালেন । রাজনৈতিকভাবে গোটা বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
প্রসঙ্গত, এই নির্দিষ্ট বিষয়ে সোশাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে একটি বার্তা দিয়েছেন তিনি । সামাজিক মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, "সিবিআই সঠিকভাবে তদন্ত করুক । সিপি, প্রাক্তন অধ্যক্ষকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করুক, কারা আত্মহত্যার কথা রটিয়েছিল ? কেন ঘটনার তিনদিন পরে ঘটনাস্থলে স্নিফার ডগ ? কেন সেমিনার হলের দেওয়াল ভাঙা হল ? এরকম শতাধিক প্রশ্ন আছে । তাহলেই জানা যাবে কীভাবে তাঁরা এতটা প্রভাবশালী, কাদের আশ্রয়ে এই কর্মকাণ্ড ।"
আরজি করের ঘটনার পর থেকেই রাজ্য সরকার বারবারই দোষীদের শাস্তির পক্ষে দাবি জানিয়েছে । এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদন্তের মূল অস্ত্র কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল । প্রথম দিন থেকে যে পুলিশ তদন্ত করছিল তার মাথাতে তিনি । খুব স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল সাংসদের এই দাবি এবং সোশাল মিডিয়ায় করা এই টুইট শাসকদলে বড় অস্বস্তির কারণ । বিশেষ করে জাতীয় মুখপাত্র হিসেবে যাঁর নাম রয়েছে, তাঁর মুখে এ ধরনের বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল ।
তাহলে কি আরজি কর কাণ্ডকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস এই মুহূর্তে আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে গিয়েছে ? সরকার এবং প্রশাসন যে পথে চলছে, তদন্ত এবং অন্যান্য ঘটনা নিয়ে যেভাবে বিশ্লেষণ করছে, তাতে কি সমর্থন নেই শাসকদলের একটা বড় অংশের, এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে উঠছে ।
সুখেন্দুশেখর রায়ের এই বক্তব্য নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা দলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ । তিনি বলেন, "আরজিকর মামলার বিচার হোক এই দাবি আমিও করছি । কিন্তু সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে যে দাবি জানিয়েছেন তার তীব্র বিরোধিতা করছি । তথ্য পাওয়ার পর থেকেই সিপি এই নিয়ে যথাসাধ্য পদক্ষেপ করার চেষ্টা করেছেন । ব্যক্তিগতভাবে সিপি তাঁর কাজ করছেন এবং যতক্ষণ তদন্ত তাঁর হাতে ছিল একটি ইতিবাচক ফোকাসে ছিল । সেই জায়গা থেকে এ ধরনের পোস্ট দুর্ভাগ্যজনক । তাও আমার এক সিনিয়র নেতার কাছ থেকে ।"
তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে এই নিয়ে অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা হয়েছিল । এদিন এই নিয়ে দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, এই নিয়ে দলের এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট কোনও বক্তব্য নেই । কুণাল ঘোষ অথবা সুখেন্দুশেখর রায় দুজনেই যে কথা বলেছেন এটা তাঁদের নিজস্ব বক্তব্য । দল এখনই এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করছে না । ফলে গোটা বিষয়টা নিয়ে একটা ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছে ।
এদিকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সাম্প্রতিক সময়ে সুখেন্দুশেখর রায়ের এ ধরনের বক্তব্যকে সমর্থনই জানিয়েছে । বিশেষ করে তিনি যখন রাত দখল নিয়ে পথে থাকার কথা বলেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তখন বলেন, "আমাদের অভিযোগ তো তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নয় । অভিযোগ সরকার ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে । আর সে কারণেই তৃণমূল সাংসদ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তাঁকে ধন্যবাদই জানাব ।"