বসিরহাট, 11 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবার আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বেনজির আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেতা ৷ তৃণমূল নেতা চন্দন মুখোপাধ্যায় সরাসরি তাঁদের 'দেশদ্রোহী' বলে দেগে দিয়েছেন ৷ শাসকদলের পঞ্চায়েত সমিতির এই সদস্যের এই মন্তব্যের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আরজি করের ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদকে বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা কটাক্ষ করে বিতর্কে জড়ালেও এই ধরণের আক্রমণাত্মক মন্তব্য সচরাচর শোনা যায়নি। এর জেরে বিতর্কে জড়িয়েছেন বাদুড়িয়ার এই তৃণমূল নেতা। হাতে গরম ইস্যু পেয়ে বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরাও। বিজেপি নেতৃত্ব তো এককদম এগিয়ে তৃণমূল নেতা চন্দন মুখোপাধ্যায়কেই পালটা 'দেশদ্রোহী' বলে নিশানা করেছেন। এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে সীমান্ত শহর বসিরহাটে।
আরজি করের ঘটনায় সুবিচার চেয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যার প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা পরিষেবায় ৷ যদিও, পরিষেবা সচল রাখতে ইতিমধ্যে 'অভয়া ক্লিনিক'-এর মতো চিকিৎসা সেন্টার চালুর মাধ্যমে পরিষেবা ঠিক রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারী ডাক্তাররা। তারই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আবার জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি তুলে নিতে ডেটলাইন বেধে দিলেও সে পথে না হেঁটে প্রতিবাদীরা আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়েছেন। এনিয়ে বিতর্ক যত বাড়ছে ততই জুনিয়র ডাক্তার এবং প্রতিবাদীদের দিকে ধেয়ে আসছে শাসকদলের আক্রমনাত্মক মনোভাব, যা স্পষ্ট হয়েছে বাদুড়িয়ার এই শাসক নেতার কথাতেই। জানা গিয়েছে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বসিরহাটের কলেজ পাড়ায় এক পথসভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রথমেই তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মানায় জুনিয়র ডাক্তারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি নিশানা করেন তাঁদের।
এই প্রসঙ্গে ওই তৃণমূল নেতা বলেন, "স্বপ্ন দেখছেন একটা নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেবেন! 215 জন বিধায়ক, 29 জন সাংসদ। চার বছর আগেও যে নির্বাচনে 51 শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে যে দলটা, সেই দলের নির্বাচিত সরকারকে আপনি ফেলে দেবেন ? এটা হয় না এখানে। কেন্দ্রীয় সরকারের উপযাজক হয়ে ভাবছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী-সহ অন্যান্য দফতর পাবেন। সেটা ভুলে যান। আপনাদের ভোটে জিতেই আসতে হবে।"
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মনে করিয়ে শাসকদলের নেতা চন্দন মুখোপাধ্যায় বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক। আপনি তাঁকে অবমাননা করছেন। সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা করছেন মানে আপনি দেশের সংবিধানের বিরোধিতা করছেন। সংবিধানের বিরোধিতা করছেন মানে আপনি দেশদ্রোহী ৷ ডাক্তার তুমি দেশদ্রোহী। এই ডাক্তারকে আমরা দেখতে চাই না। ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে কিন্তু, যে ডাক্তারদের অবহেলার কারণে মায়ের কোল খালি হয়ে যায়। সেই ডাক্তারকে আমরা চাই না।"
এদিকে, এই তৃণমূল নেতার ভিডিয়ো সামনে আসতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিতর্ক আরও বেড়েছে, যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী আরজি করের ঘটনা নিয়ে দলীয় নেতা, মন্ত্রীদের মুখ খুলতে বারণ করেছেন। সেখানে শাসকদলেরই একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধি ডাক্তারদের সম্পর্কে 'দেশদ্রোহী' তকমা জুড়ে আক্রমণ শানাচ্ছেন তাঁদের ভূমিকা নিয়ে, যা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে শহরবাসী।
অন্যদিকে, এনিয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্রের কথায়, "এঁদের মতো কিছু নেতার জন্যই এই সসম্যা তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে ওই নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, সেটাই আমরা চাই।"