কলকাতা, 19 অগস্ট: ফাইল হাতে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে পৌঁছলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ ৷ সোমবার সকালে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, "জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে থেকে পাওয়া কিছু নথি আমি সিবিআই-এর কাছে জমা দিতে এসেছি ৷" এই নথি কোনও দুর্নীতি সংক্রান্ত কি না, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি দেননি ৷ সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়েও একই দাবি করলেন কুণাল ৷
এদিন তিনি দাবি করেন,কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার তাঁর কাছে কিছু নথি দিয়েছেন ৷ সেই নথি তিনি সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে এসেছেন ৷ তিনি নথির সত্যাসত্য বিচার করেননি ৷ সিবিআই-এর তদন্তকারীরা যদি মনে করেন এই নথি তাঁদের তদন্তে কাজে লাগবে, তাহলে তাঁরা সেগুলি নিজেদের কাছে রাখতে পারেন ৷
সিবিআই-এর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন কুণাল ঘোষ ৷ তিনি বলেন, "সঞ্জয় রায়ের হেফাজত শেষ হচ্ছে 23 অগস্ট ৷ এদিন ধৃতকে এজেন্সি কোর্টে পেশ করবে ৷ 23 তারিখের রিম্যান্ডে আমরা আশা করছি, সেই দোষ করেছে, সেই আসল দোষী, সেই আসল খুনি, নাকি কারা, সেটা সর্বোচ্চ 23 তারিখের সময়সীমার মধ্যে দেখতে পাব বলে আশা করি ৷" তিনি এই তদন্তে সিবিআই আধিকারিকদের প্রশংসা করে বলেন, "সিবিআই আধিকারিকরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছেন ৷"
কী বললেন কুণাল ?
প্রথমে তৃণমূল নেতা বলেন, "আমি নিজস্ব দরকারে এসেছি ৷ আমি কলকাতার বাইরে গেলে সেটা জানাতে হয় ৷ সেই কারণে এসেছি ৷ পাশাপাশি আরজি করের কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার, প্রাক্তনী, কয়েকদিন আগে থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ৷ কিছু বিষয়ে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছিলেন ৷ আমার কাছে আসার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, আপনি কর্মপ্রার্থীদের আন্দোলনে সময় দিয়েছিলেন তাই আপনার কাছে এসেছি ৷"
আরজি কর হাসপাতালের প্রতি কুণালের দুর্বলতা
আমার বাবা-মা দু'জনেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ছাত্রছাত্রী ছিলেন ৷ আমার জন্ম আরজি কর হাসপাতালে ৷ আমার ঠাকুরদার চেম্বার এবং ওষুধের দোকান আরজি করের গায়েই ছিল ৷ পরে তা উঠে যায় ৷ তাই আমার একটা দুর্বলতা আছে ৷
জুনিয়র ডাক্তারদের দেওয়া নথি
জুনিয়র ডাক্তাররা কিছু জরুরি বিষয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ৷ পুরোটা আমি বুঝতে পারিনি ৷ আমি তাদের বলেছিলাম, বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে ৷ এরই মধ্যে এই দুর্ভাগ্যজনক খুনের ঘটনাটি ঘটে ৷ আমরা সবাই দোষী বা দোষীদের ফাঁসি চাই, শাস্তি চাই ৷ এরপর ডাক্তাররা আমার সঙ্গে আবার যোগাযোগ করেন ৷ তাঁরা কিছু বিষয় জানিয়েছেন ৷ তাঁদের অনুরোধ, তাঁরা এই হত্যার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন ৷ তাই তাঁদের সিবিআই ডাকবে না ৷ তবে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত কিছু প্রেক্ষিত থাকলেও থাকতে পারে এই নথিতে ৷ আমি যেহেতু আসছি, তাই এই নথিগুলি নিয়ে এসেছি ৷ আমি সিবিআইকে অনুরোধ করব, তাঁরা যদি নেন ৷ সিবিআই যদি মনে করে এই নথিগুলি কাজে লাগবে, তাহলে আধিকারিকরা ওই চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ৷ তাঁরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ৷
এই নথি কি কোনও দুর্নীতি সংক্রান্ত ?
এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর না দিলেন কুণাল বলেন, "যাঁরা প্রতিবাদী, যাঁরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছেন, যাঁরা কোথাও কোনও গাফিলতি থাকলে, তা চিহ্নিত করছেন, নিশ্চিতভাবে সেগুলো ৷ যদি তাঁরা (সিবিআই) নিতে চান, তাহলে দিয়ে যাব ৷"
জুনিয়র ডাক্তারদের দেওয়া তথ্য কলকাতা পুলিশকে নয় কেন ?
দু'দু'বার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ ৷ একবার তিনি বলেন, "এটা যদি কলকাতা পুলিশের হাতে থাকত, তাহলে ওঁরা (জুনিয়র চিকিৎসকরা) নিশ্চয়ই আমায় অনুরোধ করতেন, ওটা কলকাতা পুলিশের হাতেই দিন ৷ যেহেতু তদন্তটা এখন সিবিআই-এর কাছে, তাই তাঁরা বলছেন আমরা তো সিজিওতে গিয়ে এভাবে দিতে পারব না ৷ তাই আমাকে অনুরোধ করেছেন ৷"
এছাড়াও তিনি বলেন, "প্রথমে কলকাতা পুলিশ যখন আরজি করের ঘটনার তদন্ত করছিল, তখন নথিটা পুরোটা ছিল না ৷ কারণ, প্রথমে যাঁরা বলেছিলেন, তাঁরা মুখে বলেছিলেন ৷ সেই তথ্য তো দিতে পারি না ৷ এখন হাতে লেখা পুরো তথ্য তাঁর কাছে এসেছে ৷ সেটা তিনি সিবিআইকে দিতে চান ৷ জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষে এসে এই নথি দেওয়াটা সম্ভব নয় ৷"
