মালদা, 12 সেপ্টেম্বর: তিনি প্রভাবশালী ৷ স্ত্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ৷ স্ত্রীকে সরিয়ে নিজেকেই পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে পরিচয় দেন তৃণমূল নেতা ৷ এছাড়া, এলাকায় ঘাসফুলের কাজকর্ম দেখার দায়িত্বও তাঁরই কাঁধে ৷ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারি খাস জমি বিনা বাধায় দখল করে রেখেছেন ৷ অবশ্য, ভাইকে সামনে রেখে ৷ তেমনই অভিযোগ গ্রামবাসীদের ৷
সম্প্রতি তৃণমূল নেতার ভাই সেই খাস জমি প্রাচীর দিয়ে ঘেরার কাজ শুরু করেছেন ৷ এদিকে, ওই খাস জমিই ছিল স্থানীয় কৃষকদের চাষের মাঠে যাওয়ার একমাত্র পথ ৷ এই নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিল না কারও ৷ শেষ পর্যন্ত এক গ্রামবাসী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন স্থানীয় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে ৷ তার ভিত্তিতে এদিন সরকারিভাবে ওই জায়গায় মাপজোখ চালানো হয় ৷ তাতেই মানুষের ক্ষোভ সামনে এসেছে ৷ সরকারি ওই জায়গা দখলমুক্ত করার দাবি তুলছেন স্থানীয়রা ৷ ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের তুলসিহাটার ৷
তুলসিহাটা পাওয়ার হাউসের পাশে 22 শতক (প্রায় পৌনে দু’বিঘা) সরকারি খাস জমি রয়েছে ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই জমি দখল করে রেখেছেন হরিশ্চন্দ্রপুর (বি) ব্লকের আইএনটিটিইউসি সভাপতি আব্বাস আলি ও তাঁর ভাই কয়েশ আলি ৷ আব্বাসের স্ত্রী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ৷ যে খাস জমি তাঁরা দখল করে রেখেছেন, তার পিছনেই কয়েশের বাড়ি ৷ আব্বাসের স্ত্রী আবার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ৷ স্থানীয়দের বক্তব্য, সেই প্রভাব খাটিয়েই আব্বাসের ভাই সরকারি ওই জায়গাটি নিজের দখলে নিয়েছেন ৷
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গ্রামেরই এক বাসিন্দা মঞ্জুর আলম ৷ তারই জেরে এদিন পঞ্চায়েতের আরআই অফিসার জমিটি মাপজোখ করতে যান ৷ এই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায় ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ওই জায়গা দিয়ে গ্রামের চাষিরা নিজেদের খেতে যাতায়াত করেন ৷ জমিতে যাওয়ার বিকল্প রাস্তা নেই ৷ তাই প্রশাসনকে দ্রুত ওই জায়গা খালি করাতে হবে ৷ এই ঘটনায় অভিযোগকারী মঞ্জুর আলম বলেন, "এই জায়গা দিয়েই গ্রামের সবাইকে জমিতে যেতে হয় ৷ এখানে থাকা মোট 22 শতক জায়গা দখল করে রেখেছে আব্বাস আলি এবং তাঁর ভাই কয়েশ আলি ৷ জায়গাটি সরকারি ৷ আমরা চাই, এই সরকারি জমি খালি করা হোক ৷ তাতে গ্রামের মানুষের সুবিধে হবে ৷ গ্রামবাসীরা যেমন মাঠে যেতে পারবেন, তেমনই প্রয়োজনে এখানে একটা টোটো স্ট্যান্ড করা যেতে পারে ৷"
ঘটনাস্থলে উপস্থিত তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের রেভিনিউ ইন্সপেকটর মহম্মদ মেহেন্দি মাসুদ জানান, "এখানে খাস জমি নিয়ে গণ্ডগোল বেধেছিল ৷ এখানে একটা সরকারি খাস জমি রয়েছে ৷ কাগজে কলমে তার পরিমাণ 22 শতক ৷ এক পক্ষ সেই জমি দখল করে রেখেছে ৷ তার জমির সামনে এর কিছুটা অংশ পড়ছে ৷ তাই সে এই জমি দখল করে রেখেছে ৷ একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বিএল অ্যান্ড এলআরও’র নির্দেশে এই জমি মাপজোখ করতে এসেছিলাম ৷ আমরা রিপোর্ট পেশ করব ৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে ৷"
এদিকে জায়গার দখলদার কয়েশ আলির দাদা তথা তৃণমূল নেতা আব্বাস আলির বক্তব্য, "আমরা যা দেখেছি, এখানে কাঠা খানেক জায়গা খাস রয়েছে ৷ 40 বছর ধরে ও এই জায়গা দখল করে রয়েছে ৷ তবে শুধু সে একা নয়, তুলসিহাটার অনেকেই সরকারি খাস জায়গা দখল করে রয়েছে ৷ এমনকী, যে অভিযোগ করেছে সে নিজেও খাস জমির উপর দোতলা বাড়ি বানিয়েছে ৷ ওর বাড়ি ভাঙা হলে এই জায়গাও সরকার দখল করতে পারে ৷ আমি পঞ্চায়েতের সদস্য ৷ তাই এখানে সম্পর্কের প্রশ্ন উঠছে ৷ কিন্তু, এখানে সম্পর্কের কোনও ব্যাপার নেই, যা ন্যায্য, সেটাই বলছি ৷"