কোতুলপুর (বাঁকুড়া), 2 সেপ্টেম্বর: কোতুলপুরের দেশড়া কোয়ালপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের স্বামীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল ৷ পরিবারের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষকে ছেলে এবং 2 আত্মীয়ের সরকারি চাকরির জন্য 20 লাখ টাকা দিয়েছিলেন মৃত ধর্মদাস মণ্ডল ৷ কিন্তু, চাকরি দূরের কথা, 20 লাখ টাকাও ফেরত পাননি ধর্মদাস ৷ সেই কারণে, মানসিক অবসাদ থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের ৷
পরিবারের দাবি, সাত বছর আগে তৃণমূলের তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান এবং তাঁর স্বামীকে তৃণমূল নেতা সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে তাঁর হাতে বেশ কয়েকটা চাকরি আছে ৷ কিন্তু, তার জন্য দিতে হবে মোটা অংকের টাকা ৷ যিনি পরবর্তী সময়ে পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষও হন ৷ সেই সময় ছেলে এবং দুই আত্মীয়ের চাকরির জন্য 20 লাখ টাকা দিয়েও ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান রূপা মণ্ডল এবং তাঁর স্বামী ধর্মদাস মণ্ডল ৷ কিন্তু, সাতবছর পেরিয়ে গেলেও, চাকরি হয়নি ৷
চাকরি না-পাওয়া এবং টাকা খোয়ানোর জেরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ধর্মদাস মণ্ডল ৷ রবিবার দুপুরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে ৷ পরিবারের অভিযোগ সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের টাকা আত্মসাৎ করায়, ধর্মদাস মণ্ডল মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেছেন ৷ বাঁকুড়ার কোতুলপুরের দেশড়া কোয়ালপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনায় পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন মৃত ধর্মদাসের ছেলে ৷ কোতলপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হতেই, অভিযুক্ত সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন বলে খবর ৷
এই ঘটনা নিয়ে দেশড়া কোয়ালপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রূপা মণ্ডল জানান, 2013-18 সাল পর্যন্ত তিনি পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন ৷ 2017 সালে তিনজনের চাকরি দেওয়ার নাম করে সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁদের থেকে 20 লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন ৷ অভিযোগ, এসএসসি গ্রুপ-সি ও ডি-তে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৷ আত্মীয়দের থেকে এবং ঋণ নিয়েছিলেন ধর্মদাস ৷ কিন্তু, চাকরি তো দূরের কথা টাকাও ফেরত পাননি তাঁরা ৷ 2018 সালে রূপা মণ্ডল পঞ্চায়েত নির্বাচনে হারেন ৷ আর সেবারই ভোটে জিতে পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ হন সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
এরপর একাধিকবার টাকা চাইলেও, তা ফেরত পাননি ৷ অভিযোগ, প্রথমদিকে আজ নয় কাল বলে এড়িয়ে গেলেও ৷ শেষের দিকে টাকা চাইলে হুমকি দিতেন সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তারপর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ধর্মদাস মণ্ডল ৷ তাঁর ভাইয়ের দাবি, ছেলে ও আত্মীয়দের চাকরি তো দূর, ঋণের টাকা মেটাতে জমি বিক্রি করতে হয়েছে ধর্মদাসকে ৷ এই ঘটনায় মৃতের ছেলে কোতলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ তারপর থেকেই অভিযুক্ত সন্দীপ পলাতক ৷
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে পড়েছে, তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্ব ৷ এনিয়ে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সহ-সভাপতি দাবি করেছেন, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যদি এমনটা করে থাকেন, তাহলে আইন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ৷ দলের তরফেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্য়বস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা ৷ বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, তৃণমূলের ভিতরের লোকজনের এমন পরিস্থিতি হলে, সাধারণ মানুষ কতটা দুর্বিসহ অবস্থায় রয়েছে ৷ তা ভালোই বোঝা যাচ্ছে ৷
(বিঃ দ্রঃ - আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয় ৷ যদি আপনার মধ্যে কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দেয় বা আপনার কোনও বন্ধু বা পরিচিত এই সমস্যায় জর্জরিত হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না ৷ জানবেন, এমন কেউ আছে যে আপনার যন্ত্রণা, আপনার হতাশা ভাগ করে নিতে সদা-প্রস্তুত। আপনার পাশে দাঁড়াতে তৎপর। সাহায্য পেতে দিনের যে কোনও সময়ে 044-24640050 এই নম্বরে কল করুন স্নেহা ফাউন্ডেশনে ৷ টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সের হেল্পলাইন নম্বরেও (9152987821) কল করতে পারেন। এখানে ফোন করতে হবে সোমবার থেকে শনিবার সকাল 8টা থেকে রাত 10টার মধ্যে।)