কলকাতা, 23 নভেম্বর: আরজি কর ইস্যু নিয়ে গত কয়েক মাস রাজ্য রাজনীতি উত্তাল থেকেছে । তারপর এটাই ছিল প্রথম নির্বাচন । লোকসভা নির্বাচনের কারণে বিধানসভার খালি হওয়া 6টি আসনে উপনির্বাচনে ফল ঘোষণা ছিল শনিবার । কিন্তু ছ'টা আসনেই প্রত্যাশামতো ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস । তাহলে আরজি করের ঘটনা কি শাসকদলের ভোটব্যাঙ্কে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি ? এই প্রশ্নই উঠছে রাজনৈতিক মহলে ৷
উপনির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলে আসছিলেন, উপনির্বাচনে 6-এ ছয় ফল করবে তৃণমূল । বাস্তব তাই হয়েছে । এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ আসনেই ছয় থেকে সাত রাউন্ড গণনা চলছে । তাতেই জয়ের পথে অগ্রসর হয়েছে ঘাসফুল শিবির । তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মের পর থেকে যে আসনে কখনও জয় পায়নি রাজ্যের শাসকদল সেখানেও এই উপনির্বাচনে সহজ জয় পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল । আর সেইখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে, গত কয়েক মাস ধরে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচিত সব থেকে প্রাসঙ্গিক ইস্যু আরজি কর কি তাহলে ভোটে কোনও ছাপ ফেলতে পারল না ?
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তথা নৈহাটির প্রাক্তন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক এদিন নির্বাচনের ফল নিয়ে বলতে গিয়ে আরজি কর প্রসঙ্গের কথা টেনে এনেছেন । তিনি বলেন, "দু-তিনটি সংবাদ মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কালিমালিপ্ত করার জন্য যে অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে, নৈহাটির মানুষ তার জবাব দিয়েছেন ।" তিনি এও বলেন, "আরজি কর কাণ্ডে রাজ্যের সরকারের কোনও দোষ ছিল না ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে যেভাবে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস হয়েছিল, এই জয় তার বিরুদ্ধেই জবাব ।"
প্রসঙ্গত, নির্বাচনী ভোটের ফলে আরজি করের ইস্যুর প্রভাব যে গ্রামীণ ভোটব্যাংকে পড়বে না, সে ব্যাপারে একরকম নিশ্চিত ছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । তবে আরজি কর আন্দোলনের সময় শহরের পাশাপাশি মফঃস্বল ও শহর লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় যে ব্যাপক জনসমর্থন দেখা গিয়েছিল, মনে করা হচ্ছিল তার প্রভাব উপনির্বাচনে পড়তে পারে । কিন্তু উত্তর 24 পরগনার যে দুটি আসন কলকাতা শহর লাগোয়া মূলত মফঃস্বল এলাকায়, সেখানে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে তৃণমূল । সেই জায়গা থেকেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে আরজি কর আন্দোলনের প্রভাব কি সত্যিই ভোটের ফলে পড়েনি ?
এর জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, "আরজি করের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই আমরা যে কথা বলেছি এই ঘটনা অত্যন্ত খারাপ । আমরা সবাই এর বিচার চাই । কলকাতা পুলিশ ধর্ষণ এবং খুনে অভিযুক্তকে ধরেছে । এই ঘটনাকে কেউ সমর্থন করছি না । আমরা সবাই এর প্রতিবাদ করছি । কিন্তু পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে বাম জমানায় ভরপুর এ ধরনের ঘটনা ঘটতো । এগুলি সামাজিক ব্যাধিও । বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যে এই কুৎসিত ঘটনাগুলি ঘটে । এখানে বাম এবং অতি বামেরা কিছু বিকৃত অডিয়ো-ভিডিয়ো বিবৃতি প্রকাশ করে মানুষের যে আবেগ, তাকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করেছিল । এরা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনাকে ঢাকতে এগুলি করার চেষ্টা করেছিল । সাধারণ মানুষ আরজি করকে নিয়ে যে প্রতিবাদ হয়েছে, তাকে সমর্থন করেছে । কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিকৃত রাজনীতি তাকে কোনওভাবেই সমর্থন করেনি । সেখানে সাধারণ মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিয়েছে । তাই ফলাফল এরকম হয়েছে ।"
এদিন রাজ্যে ভোটের ফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য হিংসা ও রাজ্যে ভোটের যে ইতিহাস তাকেই আরও একবার তুলে ধরেছেন । তিনি বলেন, "এ রাজ্যে ভোট কীভাবে হয় রাজ্যের মানুষ তা জানে । তবে একটা দল যখন জিতছে জয়টা জয়ই । তাকে অস্বীকার করা যাবে না । আরজি কর প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেছেন, আরজি কর নিয়ে বামেদের যে রাজনীতি তা আরও একবার ব্যর্থ হয়েছে । কারণ তিনি মনে করেন, এই নির্বাচনে আরজি কর আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি বামেরা ।