জলপাইগুড়ি, 14 মার্চ: দত্তক নেওয়া গ্রামে কোনও কাজই করেননি সাংসদ, অভিযোগ সেরকমই ৷ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ডা. জয়ন্তকুমার রায় সাংসদ হওয়ার পর একটি গ্রামকে দত্তক নিয়েছিলেন । স্থানীয়দের অভিযোগ গোটা গ্রামকে দত্তক নেওয়ার পর সেই গ্রামের জন্য কোনও কাজই করেননি সাংসদ ৷ কিন্তু সাংসদের দাবি, শাসকদল ও স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত তাঁকে কোনও কাজই করতে দেয়নি । শুধু তাই নয়, কাজ করার অনুমতি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি । যদিও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা আবার দাবি করেছেন যে, সাংসদ কোনও কাজই করেননি । বাধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই । উন্নয়ন হলে গ্রামেরই উন্নয়ন হত । শাসক ও বিরোধী শিবিরের তরজায় আপাতত শিকেয় গ্রামের উন্নয়ন ৷
জলপাইগুড়ি জেলায় ময়নাগুড়ি ব্লকের রামশাই গ্রামপঞ্চায়েতের চ্যাংমারির 16/5 ও 16/6 নং বুথকে আদর্শ গ্রাম করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাংসদ জয়ন্তকুমার রায় গ্রামটিকে দত্তক নিয়েছিলেন । কিন্তু সাংসদ হওয়ার পর কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া সেখানে কিছুই করা হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের ।
স্থানীয় বাসিন্দা সুশীল রায় বলেন, "সাংসদ তো বলেছিলেন আমাদের গ্রামকে আদর্শ গ্রাম করে দেবেন । কিন্তু করতে পারেননি । কেন করতে পারলেন না জানি না । আমরা সাধারণ মানুষ । গ্রামের উন্নতি হলে আমাদের সবারই ভালো হত । আদর্শ গ্রাম করতে চাইলেন, কোথায় আদর্শ গ্রাম । কোনও কাজ না করে সামনের ভোটে আবারও ভোট চাইতে আসবে ।"
আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা সুশীল খড়িয়া বলেন, "সাংসদ দত্তক নিয়েছিলেন আমাদের চ্যাংমারি গ্রামকে । কিন্তু কোনও উন্নয়নই হয়নি । সাংসদ কিছুই করেননি । দত্তক নিয়েছেন শুনেছি, তাই ভেবেছিলাম মালিপাড়ার সেতু হবে । রাস্তাঘাট খারাপ । পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই । রাস্তাঘাট হলে ভালোই হত । আমরা উন্নয়ন চাই ।"
সাংসদের দত্তক নেওয়া গ্রামের বাসিন্দা চন্দনা রায় ওড়াওয়ের কথায়, "কাজ করার সুযোগ নেই । রাস্তাঘাটে চলাও যায় না । শৌচাগার নেই । কীসের জন্য কাজ করেনি সেটা জানি না । এখানে আসে কিন্তু কাজ করে না ।"
যদিও যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে শাসকদলকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ডা. জয়ন্তকুমার রায় ৷ তিনি জানান, "আদর্শ গ্রামে বেশ কয়েকবার গেলাম । কী কী করা যেতে পারে তা দেখার জন্য সার্ভে করা হল । গ্রামের মানুষের কী চাহিদা আছে তার সার্ভে করল আমার টিম । কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতার স্ত্রী উপপ্রধান, তিনি কোনওভাবেই কাজ করতে দিলেন না । অনেক বুঝিয়েছিলাম । ওই গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যেই আমার নিজের গ্রামের বাড়ি । আদর্শ গ্রাম হোক আমি এটা চেয়েছিলাম । আমি তো সেখানে থাকব না । সেখানে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, সিপি আইএম সবাই থাকবে । আদর্শ গ্রামের উন্নয়ন হলে সবার উন্নয়ন হবে । বলেছিলাম, এর মধ্যে রাজনীতি আনবেন না। আমি সব প্রজেক্ট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি । আমি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ । আমি তাই গ্রামে গিয়ে সবাইকে বলেছি আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি । কে কাজ করতে দেয়নি তাঁকে নিয়ে এসে শুনুন কাজ কেন করতে দেয়নি । গ্রামের মানুষ বিষয়টা বুঝেছেন ।"
স্থানীয় বাসিন্দা নিশিকান্ত বিশ্বাসও বলেন, "এখানকার প্রধান কোনও অনুমতি দেননি বলেই আদর্শ গ্রাম করা যায়নি বলে জানতে পেরেছি । কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া কিছুই করা হয়নি । সাংসদ এসেছিলেন, এখানে সবাইকে নিয়ে আলোচনাও হয় । সে দিন তিনি বলেন, আমাকে কাজ না করতে দিলে টাকাগুলো কোথায় খরচ করব । 2400 সোলার লাইটও বসাতে দিল না । আদর্শ গ্রাম করতে না দিলে তিনি কী করতে পারেন ! দীর্ঘদিন ধরেই এই অবস্থা ।"
রাজ্যের শাসকদল তাঁকে কাজ করতে দেয়নি বলে সাংসদ যে অভিযোগ করেছেন, তা উড়িয়ে দিয়েছেন রামশাই গ্রামপঞ্চায়েতের চ্যাংমারি গ্রামের 16/5 নং বুথের পঞ্চায়েত সদস্যা রূমা রায় অধিকারী । তাঁর দাবি, বাধা কেউ দেয়নি ৷ গ্রামের উন্নয়ন হলে সবারই ভালো হবে । তিনি বলেন, "সাংসদ আমাদের গ্রামকে আদর্শ গ্রাম করবে বলেছিলেন কিন্তু করেননি । রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি । সেতু হয়নি । জলের সমস্যার সমাধান হয়নি । রাস্তাঘাট বেহাল । একটি রাস্তা আমিই করেছি পথশ্রীর প্রকল্পের মাধ্যমে । কিন্তু কিছুই করেননি সাংসদ ।"
আরও পড়ুন: