মালদা, 7 মে: ভোট মিটতেই অগ্নিগর্ভ হবিবপুরের রাধাকান্তপুর ৷ ছাপ্পা ভোটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জও করল পুলিশ ৷ ফাটানো হয়েছে কাঁদানো গ্যাসের সেলও ৷ তেমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের ৷ পালটা পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ উঠেছে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে ৷ আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীও ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে গেলেন পুলিশ সুপার ৷
দক্ষিণ দিনাজপুর থেকেও পুলিশকর্মী আনা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ সবমিলিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রণক্ষেত্র হবিবপুর ব্লকের মঙ্গলপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধাকান্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের 122 নম্বর বুথ সংলগ্ন এলাকা ৷ উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাকা রাস্তা ও সেতুর দাবিতে গ্রামে কোনও রাজনৈতিক দলকে রাধাকান্তপুরে প্রচার চালাতে দেননি গ্রামবাসীরা ৷ এবারও তাঁরা ভোট বয়কটের ডাক দেন। কিন্তু তারপরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি ৷
এদিন ভোর পাঁচটা থেকে রাধাকান্তপুর-সহ তিন গ্রামের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে বুথের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে ভোট বয়কটের ডাকে বসে পড়েন ৷ পাকা রাস্তা আর স্থায়ী ব্রিজের দাবি ছিল তাঁদের ৷ তাঁদের বিক্ষোভ সামাল দিতে ছুটে আসতে হয় প্রশাসনের কর্তাদের ৷ অভিযোগ, প্রশাসনের কর্তারা যখন স্থানীয় বাসিন্দাদের বোঝাতে ব্যস্ত, সেই সময় স্থানীয় তৃণমূল নেতা রঞ্জিত সরকার ছল করে বহিরাগত দুই মহিলাকে বুথে ঢুকিয়ে দেন ৷ ওই দুই মহিলা যখন ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছিলেন, সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের আটক করেন ৷ দেখা যায়, তাঁদের হাতের আঙুলে ভোট দেওয়ার কালি লেগে ৷ এরপরই ক্ষোভ ফেটে পড়েন তাঁরা ৷ দীর্ঘক্ষণ ওই দুই মহিলার পরিচয় প্রকাশ অথবা ভোটকেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানোর দাবিতে ভোটকেন্দ্র ঘেরাও করে চলছে থাকে বিক্ষোভ ৷
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় নামানো হয় ব়্যাফ ৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানোর পাশাপাশি ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ ৷ রেহাই পাননি স্থানীয় মহিলারাও ৷ এরপরেই ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে ৷ গ্রামবাসীদের পাশাপাশি আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী ৷ এক মহিলা বলেন, “কেন জেলাশাসক এখানে এসে ছাপ্পা ভোট করালেন ? কেন জেলাশাসক কোনও কাজ করলেন না ? সারাদিনে আমাদের বুথে কোনও ভোট পড়েনি ৷ আমাদের রাস্তা, ব্রিজ তৈরির করার কত টাকা চুরি হয়েছে ? আমরা তার কৈফিয়ত চাই ৷ সে সন না বলে আমাদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে ৷”
আরও এক গ্রামবাসী সীমা সরকার বলেন, “আমাদের সরিয়ে দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে ৷ আমাদের কয়েকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ আমরা রাস্তার জন্য পঞ্চায়েত ভোট বয়কট করেছি ৷ এই লোকসভা ভোটও বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৷ সারাদিন আমরা রোদের মধ্যে বুথের সামনে বসেছিলাম ৷ বিডিও এবং জেলাশাসক বাইরে থেকে তিনজন লোক নিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলার আছিলায় চোরাই ভোট করেছেন ৷” এই নিয়ে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি ৷ কিন্তু এই খবর লেখা পর্যন্ত গ্রামে আটকে থাকা ভোটকর্মী কিংবা ভোটের সামগ্রী উদ্ধার করা যায়নি ৷
আরও পড়ুন
শ্লীলতাহানি কাণ্ডে রাজ্যের মুখ্যসচিব-কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি রাজ্যপালের
কলকাতা উত্তর দখলে শাসক-কাঁটা 20 ওর্য়াড, চাপ কাটাতে উদ্যোগী জোড়াফুল শিবির