কেশপুর, 17 জুলাই: দীর্ঘদিন ধরে ভগ্ন দশায় পড়ে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ। ঘরের মধ্যে ক্লাস করা তো দূরের কথা, ভিতরে ঢোকার মত পরিবেশও নেই। বারবার এসআই অফিস, ডিআই অফিস, পঞ্চায়েত সমিতি ও সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি। অবশেষে হরি মন্দিরে পড়ুয়াদের বসিয়ে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের 4 নম্বর গোলাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পালংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলের বেহাল দশায় প্রশ্ন উঠছে সরকারের বিরুদ্ধে।
প্রাথমিক এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা 80 জন। শিক্ষকের সংখ্যা 3 জন। তবে এই মুহূর্তে পড়াশোনা নয়, স্কুলের বেহাল দশায় আতঙ্কিত শিক্ষক, পড়ুয়া-সহ অভিভাবকরা। মূলত এই বিদ্যালয়ের অফিস রুমের ছাদ ঝুলে রয়েছে ৷ একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে নীচে বৃষ্টির জল প্রবেশ করছে রুমের মধ্যে। ভয়ে ভয়ে অফিসে কাজ করতে হয় শিক্ষকদের। আর ছাত্রছাত্রীদের বসার শ্রেণিকক্ষ, তা কার্যত মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোনও কক্ষে দেওয়ালের চাঙড় ভেঙে মেঝেতে পড়ে রয়েছে, আবার কোনও কক্ষে দেওয়ালের অংশ ভেঙে ঝুলছে। ঝুলে রয়েছে ইলেকট্রিকের তার ও সিলিং ফ্যান ৷ দরজা জানালাও ভেঙে চৌচির ! সাপে বাসা বেঁধেছে শ্রেণি কক্ষের মধ্যে। পড়ুয়ারা ভয়ে ঢুকতেই চাইছে না স্কুলে । শিক্ষকরাও কোনও কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে নদীর পাড়ে হরি মন্দিরে বসে ক্লাস করাচ্ছেন ৷
এক অভিভাবক সুজিত মন্ডল বলেন, "আমরা ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি। বিল্ডিংয়ের এমনই দুরবস্থা, যে কোনও সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে। সরকারের কাছে আবেদন, অবিলম্বে বিদ্যালয়ের প্রাচীর-সহ শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দেওয়া হোক। এখন হরি মন্দিরে ক্লাস হচ্ছে, সেখান থেকে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা অনেক সময় নদীর কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। নদীতে পড়ে গিয়েও বিপদ ঘটতে পারে যে কোনও সময়ে। পাঁচটি ক্লাস, রয়েছেন তিনজন শিক্ষক। তাঁদের পক্ষেও ছাত্রছাত্রীদের দেখে রাখা অসম্ভব হয়ে উঠছে । তাই যাতে দ্রুত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের মধ্যে ক্লাসের পরিবেশ তৈরি হয়, সেই দিকে সরকারকে নজর দিতে বলব ৷"
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার মাইতি বলেন, "আমি আসার পর থেকেই দেখছি বিদ্যালয়ের বিল্ডিংয়ের খুব খারাপ অবস্থা। এই সমস্যা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ৷ কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি এখনও পর্যন্ত। বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি ক্লাস রয়েছে । ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় 80 জন ৷ কম বেশি সকলেই প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসে। এখানকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে পড়াশোনায় আগ্রহও রয়েছে যথেষ্ট । পড়াশোনায় আগ্রহ থাকলেও সেই ভাবে আমরা পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারিনি।"
এই বিষয়ে কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিত্তরঞ্জন গরাই বলেন, "ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানতে পেরেছি । আমি এসআই এবং ডিআই-কেও জানাব। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে । গত বছর বর্ষার সময় বিল্ডিংটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতি দ্রুত নতুন বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।"