কলকাতা, 6 জানুয়ারি: রাসবিহারী, চেতলা এলাকার এক সময়ের খ্যাতনামা স্কুল চেতলা বয়েজ এবার হাজির নতুন রূপে । হারানো সুনাম ফেরাতে শতবর্ষ পুরনো এই স্কুল সেজে উঠেছে নবকলেবরে । সেখানে চালু হল ইংরেজি মাধ্যম পঠন পাঠন । প্রতিটা শ্রেণিকক্ষ এখন স্মার্ট ক্লাসরুম । এদিন এই নতুন মাধ্যম চালু করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম । উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়-সহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ।
প্রথম শ্রেণি থেকে একেবারে দ্বাদশ শ্রেণি । দু হাজারেরও বেশি ছাত্র । তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই জরাজীর্ণ হয়েছে এই স্কুল ভবন । ছাত্র কমছে । সার্বিক ভাবে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল । এই স্কুল থেকেই অনুপ ঘোষাল থেকে বাপ্পী লাহিড়ী-সহ আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উত্তীর্ণ হয়ে বেরিয়েছেন । মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেও এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন । নিজের স্কুলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে উদ্যোগ নেন তিনি ।
সম্প্রতি চেতলা এলাকায় পুরসভার একটি প্রাথমিক স্কুল ইংরেজি মাধ্যম করা হয়েছে । যেহেতু এই সমস্ত স্কুলে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা বা প্রান্তিক ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে, তাই প্রশ্ন উঠেছিল চতুর্থ শ্রেণির পর কোথায় ভর্তি হবে তারা ? ফের কি ফিরতে হবে বাংলা মাধ্যমে ? সেই সমস্যার সমাধানও হল । প্রান্তিক ঘরের ছেলেমেয়েরাও এখন এই স্কুলে নিখরচায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়বে । স্কুলের গোটা ভবনটি নতুন করে রং করে ঝাঁ চকচকে করা হয়েছে ৷ প্রতিটি ক্লাসঘরে থাকছে এসি, কাঁচের জানলা, আধুনিক মানের লোহার টেবিল-চেয়ার, আছে ইলেকট্রনিক্স স্মার্ট বোর্ড ।
এদিন এই স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমের উদ্বোধন করতে এসে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, "দীর্ঘ বছর ধরে একটা চিন্তাধারা চলে আসত ৷ তা হল বাংলা বনাম ইংরেজি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর সেই ভাবনাচিন্তায় বদলে এসেছে, 'বনাম'-এর পরিবর্তে হয়েছে 'এবং'। বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হবে পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমেও পড়ানো হবে । সাম্প্রতিক সময়ে স্টার থিয়েটার হলের নাম বদল করে মুখ্যমন্ত্রী রাখেন বিনোদিনী থিয়েটার । যুগ যুগ ধরে চলে আসা আক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে তিনি নটী বিনোদিনীকে তাঁর যোগ্য সম্মান জানান ৷ একইভাবে আজকের এই নতুন মাধ্যম শুরু করার মধ্যে দিয়ে চেতলা বয়েজ বাংলার সঙ্গেই ইংরেজি ভাষা - এই দুই ভাষারই শিকড় শক্ত করবে এখন থেকে ।"
এদিনের অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "এখান থেকে অনেক কৃতী ছাত্র উত্তীর্ণ হয়ে বেরিয়েছে । একটা সময়ে রাজ্যে স্কুল থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া হয়েছিল । যাঁরা এই নীতি নিয়েছিলেন, তাঁদের ছেলেমেয়েরা কেউই বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেননি । তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময় ইংরেজি এবং বাংলাকে সম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গজিয়ে উঠেছে, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সম্পূর্ণভাবে প্রশিক্ষিত নন । অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ইংরেজি শব্দ বলেন ও শেখান । আর মোটা অংকের টাকা খরচ করে সেখানে পড়াশোনা করতে হয় ছেলেমেয়েদের । আমাদের এই সরকারি স্কুল ও কর্পোরেশনের স্কুল ইংরেজি মাধ্যম হওয়ায় এখানে বিনা খরচায় ইংরেজি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে যে কোনও ছেলে মেয়ে ।"