আসানসোল, 30 অগস্ট: রাজ্য তথা দেশজুড়ে সর্বত্র আরজি করে মহিলা চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ চলছে ৷ যে যার নিজের মতো করে সেই প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে ৷ এবার নিজেদের পদক আরজি করে নির্যাতিতাকে উৎসর্গ করল যমজ তিন বোন ৷
একই সঙ্গে জন্মজাত (ট্রিপলেট) এই তিন কন্যে আবারও রাজ্য তাইকোন্ডো চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে 6টি সোনা ও দুটি রুপো জয় করেছে । তবে পদক জিতেও তাদের মনে আনন্দ নেই ৷ রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে সুবিচারের দাবিতে তারা সেই পদক উৎসর্গ করেছে নির্যাতিতাকে । পাশাপাশি সমস্ত ছাত্রীদের কাছে তাদের আবেদন নিজের সুরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট শিখে রাখা অত্যন্ত জরুরি । তবে শুধু এই তিন বোন নয়, রাজ্য তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতায় পশ্চিম বর্ধমান জেলা থেকে মোট 43টি পদক জয় করেছে ছাত্রছাত্রীরা । পদকজয়ী প্রত্যেকে মোমবাতি মিছিল করে আরজি করের ঘটনায় দোষীদের বিচার চেয়েছে ।
কুলটির সাঁকতোড়িয়ার এই তিন বোন সুচেতা, সুপ্রিতা ও রঞ্জিতা । তিনজনের জন্ম একসঙ্গেই । বাবা বামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় গৃহশিক্ষক । মা সুনেত্রা চট্টোপাধ্যায় স্বামীর পড়ানোর কাজে সহায়তা করেন । 13 বছর বয়সি এই তিনকন্যে একটি সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া । কিন্তু ছোট থেকেই তারা কোরিয়ান মার্শাল আর্ট তাইকোন্ডোতে নজর কেড়েছে । এর আগে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় সোনা পেয়েছে । সম্প্রতি বেঙ্গল তাইকোন্ডো অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা আয়োজিত খড়গপুরে রাজ্য তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতায় ফের 6টি সোনা ও দুটি রুপো জয় করেছে তারা । কিন্তু এই বিরাট জয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাস নেই কারও । বরং তারা জয়ের এই আনন্দ পালন করেছে নীরব হয়ে মোমবাতি হাতে । তাদের দাবি, উই ওয়ান্ট জাস্টিস । পাশাপাশি এই তিন বোন জানিয়েছে, জয় করা পদকগুলি তারা আরজি করে নির্যাতিতা চিকিৎসককে উৎসর্গ করেছে ।
তিন বোনের মধ্যে সুচেতা ও রঞ্জিতার কথায়, "মেডেল জিতেও বর্তমান যে সময়ের মধ্যে আমরা যাচ্ছি তাতে আমরা এবং আমাদের পরিবার খুশি নয় । আমরা চাইছি আরজি করের ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পাক ৷ এই মেডেল আমরা তাঁকেই উৎসর্গ করছি ৷ পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের কাছে আবেদন করব যে তোমরা মার্শাল আর্ট শেখো । মার্শাল আর্ট শিখলে নিজের সুরক্ষা অন্ততপক্ষে নিজেরা করতে পারবে ।"
কুলটি অঞ্চলের তাইকোন্ডোর কোচ শুভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আমরা এতগুলো পদক জিতেও কোনও আনন্দ উচ্ছ্বাস করতে পারছি না । তার কারণ হচ্ছে বর্তমানে এমন একটা সময়ের মধ্যে যাচ্ছি আমরা সবাই, যাতে মন বিষণ্ণ হয়ে আছে । তবে একটা বিষয়, মেয়েরা এগিয়ে আসছে মার্শাল আর্ট শিখতে । আত্মরক্ষার জন্য আরও বেশি বেশি করে মেয়েরা আসুক এই তাইকোন্ডো কিংবা যে কোনও মার্শাল আর্ট শিখতে । নিজের আত্মরক্ষার জন্যই মার্শাল আর্ট শিখে রাখা খুব প্রয়োজনীয় ।"