কলকাতা, 20 অক্টোবর: লাদাখ, হাসদেও-সহ দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে 12 ঘণ্টার প্রতীকী অনশন কলকাতায় । উল্লেখ্য, লাদাখকে পৃথক রাজ্য-সহ একাধিক দাবিতে দিল্লিতে লাদাখ ভবনের সামনে অর্নিষ্টকালের জন্য অনশনে বসেছিলেন জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুক এবং তাঁর কিছু সমর্থক ৷ যদিও পরে তাঁদের সেখান থেকে আটক করা হয় ৷ তিনি ওই অনশন মঞ্চ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে 12 ঘণ্টার প্রতীকী অনশনের ডাক দিয়েছিলেন ৷
সোনম ওয়াংচুকর ডাকে ও লাদাখবাসীর স্বার্থে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে রবিবার প্রতীকী অনশনে সামিল হলেন পরিবেশ কর্মীরা । সকাল ন'টা থেকে এই প্রতীকী অনশন শুরু হয় ৷ চলবে রাত নটা পর্যন্ত । পরিবেশকর্মী ছাড়াও ছাত্র-শিক্ষক থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই অনশনে সামিল হন । তাঁদের মূল বক্তব্য, "প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে তৈরি হও, পরিবেশকে বাঁচাও এবং নিজে বাঁচো ।"
পরিবেশকর্মী সুরজিৎ চক্রবর্তী বলেন, "হাসদেও, অরুণাচল, আন্দামান-সহ বিভিন্ন জায়গায় সকল প্রাণ প্রকৃতির উপর আঘাতের প্রতিবাদে লাদাখবাসী ও সোনম ওয়াংচুক অনশনরত ৷ সেই আন্দোলনের সমর্থনে আমাদের এই প্রতীকী অনশন । মধ্য ভারতের ফুসফুস ছত্তিশগড়ের হাসদেও-তে অরণ্য ধ্বংস চলছে । আদিবাসী মানুষের হাজারো প্রতিরোধ, সাংবিধানিক সমস্ত অধিকারকে নস্যাৎ করে আদানি গোষ্ঠী ও ছত্তিশগড় সরকার এই অরণ্যের হাজার হাজার গাছ কাটতে উদ্যত । প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য তথা মানুষের জীবনকে উপেক্ষা করে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে ।"
প্রকৃতি ধ্বংসের ফলে মানব শরীরে তো বটেই, বিশেষ করে মহিলাদের শরীরে নানারকম প্রভাব পড়ছে। মহিলাদের শ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে । এছাড়াও নানা বায়োলজিক্যাল সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আর এক পরিবেশকর্মী কাজরী মজুমদার ।
তাঁর কথায়, "এই পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সরকার বা গভর্নিং বডির গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল । কিন্তু তারা উলটো পথে হাঁটছে । গ্রামবাসী আদিবাসীদের সই জাল করে নানা রকম প্রজেক্ট করছে । আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে উড়িয়ে দিয়ে একটা শহর বানানোর চেষ্টা করছে । সেখানকার বাস্তুতন্ত্র, হাজার হাজার দুর্লভ গাছ কেটে সেখানে কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি করার বিষয়টি হাস্যকর । এটাকে উন্নয়ন বলে মানতে রাজি নই । স্থানীয় মানুষের অনুমতি ছাড়া এই ধরনের প্রজেক্ট করা বেআইনি বলেই মনে করি ।"
নদী অ্যাক্টিভিস্ট তাপস দাসও এই অনশনে সামিল হয়েছেন । এ রাজ্য-সহ গোটা দেশে নদী সংস্কার তো দূরের কথা নদীকে ঘিরে নানা রকম ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তিনি সরব হয়েছেন ।
তিনি বলেন, "অরুণাচল প্রদেশে বিভিন্ন নদীর উপরে 13টি বড় বাঁধ নির্মাণের জন্য হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্টকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে । নদীর গতিপথ আটকে নদী সংলগ্ন সবুজকে, মানব জীবনকে বিধ্বস্ত করতে উদ্যত হয়েছে সরকার ও পুঁজি গোষ্ঠী । আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ গাছ কেটে উন্নয়ন চলছে । নদী, নালা, খাল, বিল সবুজ না-থাকলে আমরা কীভাবে বাঁচব ? সেটা সকলের বোঝা উচিত । তার জন্য আমাদের আন্দোলন ।"