ETV Bharat / state

অধিক শ্রম ও নামমাত্র আয়, হারিয়ে যাচ্ছে সন্দেশের ছাঁচ তৈরির শিল্প - Sweet Mold Making Industry

Sweet Mold Making Industry in Kolkata: দুর্গাপুজোর পর দশমীর মিষ্টি মুখ হোক বা লক্ষ্মী পুজোয় নারকেল দিয়ে ছাঁচে সন্দেশ তৈরি ৷ বাঙালির মিষ্টি রসনায় ছাঁচের মিষ্টির কদর বহু যুগ ধরে রয়েছে ৷ কিন্তু, ধীরে ধীরে সন্দেশের ছাঁচ তৈরির শিল্পই এখন হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ কারণ, আগামী প্রজন্ম এখন আর এতে আগ্রহ দেখায় না ৷ এমনটাই জানালেন কলকাতার সন্দেশের ছাঁচ তৈরির কারিগর অসীম দাস ৷

Sweet Mold Making Industry in Kolkata
সন্দেশের ছাঁচ তৈরির শিল্প ৷ (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 17, 2024, 9:13 PM IST

কলকাতা, 17 অগস্ট: বয়স বাড়লেও, আধুনিক হচ্ছে তিলোত্তমা ৷ আর আধুনিকতার মাঝেই বাঙালির ঐতিহ্যের বহু জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ৷ সেই হারিয়ে যাওয়ার তালিকায় এবার জুড়েছে, সন্দেশের ছাঁচ তৈরির শিল্প ৷ উত্তর কলকাতার গণেশ টকিজ, নতুন বাজার এলাকার হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে বিক্রি হয় সন্দেশ তৈরির নানা ছাঁচ ৷ তবে, সেই ছাঁচ তৈরির শিল্পীর সংখ্যা এখন মেরে কেটে দুই কি তিন ৷

সন্দেশের ছাঁচ তৈরির শিল্প ৷ (ইটিভি ভারত)

রবীন্দ্র সরণির উপর মর্ডান আর্ট কোম্পানি ৷ প্রায় 70 বছরের পুরোনো দোকান। বোর্ড লরঝড়ে হয়ে গেছে। আগেকার দিনের টিনের পাতে উপর রং দিয়ে লেখা ৷ সেই রং উঠে গেছে ৷ বছর 60-এর অসীম দাস এক মনে সেই দোকানে কাজ করে চলছেন ৷ সেগুন কাঠের উপর কলকা করে খোদাই করে চলেছেন ৷ তিনি হলেন, কলকাতার লুপ্তপ্রায় সন্দেশের ছাঁচ শিল্পী ৷

এই পেশায় দ্বিতীয় প্রজন্ম ৷ বছর 70 আগে তাঁর বাবা কিশোরী মোহন দাস এই কাজ শুরু করেন ৷ এই দোকানেই দাদা সুভাষচন্দ্র দাস বহুদিন কাজ করে গিয়েছেন ৷ সম্প্রতি তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ এখন অসীম দাস একা ৷ তিনি বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন ৷ অসম্ভব ফুটবল খেলতে ভালোবসতেন ৷ ইচ্ছে ছিল ফুটবলার হওয়ার ৷ তবে, বাবার চাপে দাদার সঙ্গেই এই কাজে বছর 30 আগে হাতেখড়ি ৷ এই ছাঁচ তৈরির কাজে তাঁর 30 বছর হয়ে গেল ৷ দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৷ দাদার ছেলে এই পেশায় আসেননি ৷ তিনি চাকরি করেন ৷

জানালেন এই কাজের জন্য অসীম ধৈর্য, নিখুঁত মাপ, নজর তীক্ষ্ণ রাখতে হয় ৷ প্রতিটি কাজ মনোসংযোগ দিয়ে করার পর নামমাত্র আয় হয় ৷ আর তার জেরেই পরবর্তী প্রজন্ম বিমুখ ৷ আগে কলকাতার একাধিক শিল্পী এই কাজ করতেন ৷ এখন শিল্পী বলতে তিনি আর এক-দু’জন ৷ তাও বাকিরা অনিয়মিত ৷

তিনি ঘণ্টাখানেক সময়ে অনায়াসে বানিয়ে ফেলছেন মনোরঞ্জন, কস্তুরি, জলভরা, আম সন্দেশের ছাঁচ ৷ সময়ের সঙ্গে শিল্পী কমে যাওয়ায় বাজার কিছুটা ভালো হয়েছে ৷ এখন শহরের ছোট বড় বা নামজাদা মিষ্টির দোকান তাঁর কাছ থেকেই সন্দেশের ছাঁচ তৈরি করায় ৷ শুধু কলকাতা নয়, পুরো রাজ্য ও ভিন রাজ্যের বহু মিষ্টি বিক্রেতা নিয়ে যান তাঁর এই মিষ্টি তৈরির ছাঁচ ৷ দেশের সীমা পেরিয়ে তাঁর হাতের তৈরি সন্দেশের ছাঁচ গেছে কানাডা ও আমেরিকাতেও ৷ মূলত, পুজোর আগে, ভাইফোঁটার আগে বরাত বারে ৷

অসীম দাস সেগুন কাঠের টুকরো কেটে তৈরি করতে হয় এই ছাঁচ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নিখুঁত ভাবে তৈরি করে ফেলেন ৷ 70-80 টাকা থেকে শুরু করে, 1500-2000 টাকা পর্যন্ত এক একটি ছাঁচ তৈরির খরচ ৷ তবে, এত খেটেও নামমাত্র লাভ হয় ৷ এখন এই পেশার প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছেন ৷ কিন্তু, আগ্রহী নয় আগামী প্রজন্ম। ফলে তাঁর অবর্তমানে দোকানে তালা ঝোলা ছাড়া উপায় নেই ৷ আর তেমনটা হলে, কলকাতা শহরে অন্তত এই ছাঁচ শিল্প অবলুপ্তির পথে হাঁটবে ৷

কলকাতা, 17 অগস্ট: বয়স বাড়লেও, আধুনিক হচ্ছে তিলোত্তমা ৷ আর আধুনিকতার মাঝেই বাঙালির ঐতিহ্যের বহু জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ৷ সেই হারিয়ে যাওয়ার তালিকায় এবার জুড়েছে, সন্দেশের ছাঁচ তৈরির শিল্প ৷ উত্তর কলকাতার গণেশ টকিজ, নতুন বাজার এলাকার হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে বিক্রি হয় সন্দেশ তৈরির নানা ছাঁচ ৷ তবে, সেই ছাঁচ তৈরির শিল্পীর সংখ্যা এখন মেরে কেটে দুই কি তিন ৷

সন্দেশের ছাঁচ তৈরির শিল্প ৷ (ইটিভি ভারত)

রবীন্দ্র সরণির উপর মর্ডান আর্ট কোম্পানি ৷ প্রায় 70 বছরের পুরোনো দোকান। বোর্ড লরঝড়ে হয়ে গেছে। আগেকার দিনের টিনের পাতে উপর রং দিয়ে লেখা ৷ সেই রং উঠে গেছে ৷ বছর 60-এর অসীম দাস এক মনে সেই দোকানে কাজ করে চলছেন ৷ সেগুন কাঠের উপর কলকা করে খোদাই করে চলেছেন ৷ তিনি হলেন, কলকাতার লুপ্তপ্রায় সন্দেশের ছাঁচ শিল্পী ৷

এই পেশায় দ্বিতীয় প্রজন্ম ৷ বছর 70 আগে তাঁর বাবা কিশোরী মোহন দাস এই কাজ শুরু করেন ৷ এই দোকানেই দাদা সুভাষচন্দ্র দাস বহুদিন কাজ করে গিয়েছেন ৷ সম্প্রতি তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ এখন অসীম দাস একা ৷ তিনি বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন ৷ অসম্ভব ফুটবল খেলতে ভালোবসতেন ৷ ইচ্ছে ছিল ফুটবলার হওয়ার ৷ তবে, বাবার চাপে দাদার সঙ্গেই এই কাজে বছর 30 আগে হাতেখড়ি ৷ এই ছাঁচ তৈরির কাজে তাঁর 30 বছর হয়ে গেল ৷ দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৷ দাদার ছেলে এই পেশায় আসেননি ৷ তিনি চাকরি করেন ৷

জানালেন এই কাজের জন্য অসীম ধৈর্য, নিখুঁত মাপ, নজর তীক্ষ্ণ রাখতে হয় ৷ প্রতিটি কাজ মনোসংযোগ দিয়ে করার পর নামমাত্র আয় হয় ৷ আর তার জেরেই পরবর্তী প্রজন্ম বিমুখ ৷ আগে কলকাতার একাধিক শিল্পী এই কাজ করতেন ৷ এখন শিল্পী বলতে তিনি আর এক-দু’জন ৷ তাও বাকিরা অনিয়মিত ৷

তিনি ঘণ্টাখানেক সময়ে অনায়াসে বানিয়ে ফেলছেন মনোরঞ্জন, কস্তুরি, জলভরা, আম সন্দেশের ছাঁচ ৷ সময়ের সঙ্গে শিল্পী কমে যাওয়ায় বাজার কিছুটা ভালো হয়েছে ৷ এখন শহরের ছোট বড় বা নামজাদা মিষ্টির দোকান তাঁর কাছ থেকেই সন্দেশের ছাঁচ তৈরি করায় ৷ শুধু কলকাতা নয়, পুরো রাজ্য ও ভিন রাজ্যের বহু মিষ্টি বিক্রেতা নিয়ে যান তাঁর এই মিষ্টি তৈরির ছাঁচ ৷ দেশের সীমা পেরিয়ে তাঁর হাতের তৈরি সন্দেশের ছাঁচ গেছে কানাডা ও আমেরিকাতেও ৷ মূলত, পুজোর আগে, ভাইফোঁটার আগে বরাত বারে ৷

অসীম দাস সেগুন কাঠের টুকরো কেটে তৈরি করতে হয় এই ছাঁচ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নিখুঁত ভাবে তৈরি করে ফেলেন ৷ 70-80 টাকা থেকে শুরু করে, 1500-2000 টাকা পর্যন্ত এক একটি ছাঁচ তৈরির খরচ ৷ তবে, এত খেটেও নামমাত্র লাভ হয় ৷ এখন এই পেশার প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছেন ৷ কিন্তু, আগ্রহী নয় আগামী প্রজন্ম। ফলে তাঁর অবর্তমানে দোকানে তালা ঝোলা ছাড়া উপায় নেই ৷ আর তেমনটা হলে, কলকাতা শহরে অন্তত এই ছাঁচ শিল্প অবলুপ্তির পথে হাঁটবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.