কলকাতা, 29 অক্টোবর: 2011 সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসার পর থেকে কী কী উন্নয়নের কাজ করেছেন, সেই খতিয়ান বারবার তুলতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ৷ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সামনে মমতার সেই দাবিকে কার্যত সরাসরি চ্যালেঞ্জ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷
এ দিন তিনি দাবি করেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে এই রাজ্যে সমস্তরকম উন্নয়নের কাজ বন্ধ রেখেছেন ৷’’ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এই দাবি ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে ৷ প্রশ্ন হল, তিনি কেন এই দাবি করেছেন ?
আসলে এ দিন বিরোধী দলনেতা আবাস যোজনার দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হন ৷ সেই সময়ই তিনি এই কথা বলেন ৷ আবাস যোজনা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘আবাস যোজনার যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, 11 লক্ষের, এই তালিকা সম্পূর্ণভাবে ভুলে ভরা ৷ সাধারণ মানুষ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, বিরোধী দল, এমনকী তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতও অভিযোগ করেছিল ৷ 17টা টিম পাঠিয়েছিল ভারত সরকার ৷ কেন্দ্রীয় সরকার তদন্ত করে দেখেছিল, বাড়ি পাওয়ার যারা যোগ্য নয়, তাদের রাখা হয়েছে ৷ যোগ্যদের নাম রাখা হয়নি ৷’’
এর পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলার উন্নয়ন স্তব্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ৷ বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে এই রাজ্যে সমস্তরকম উন্নয়নের কাজ বন্ধ রেখেছেন ৷...তিনি একটা উদ্যোগ নিয়েছেন যে আমরা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আবাস যোজনা দিতে চাই ৷ এই কারণে তিনি তাঁর সরকারি তন্ত্রকে কাজে লাগিয়েছেন ওই 11 লক্ষ লিস্টের উপরে ৷ এঁদের অভ্যন্তরীণ নির্দেশ দেওয়া আছে যে সংখ্যা যত পারো কমাও, টাকা বেশি নেই ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রথমত এই তালিকাতেই কয়েক লক্ষ যোগ্য লোকের নাম নেই ৷ দ্বিতীয়ত, যে নাম এসেছে, অধিকাংশই তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেদের নাম ৷ যাঁদের পাকাবাড়ি আছে, পাওয়ার যোগ্য নয় ৷ আমি অন্তত 100টা ছবি দেখাতে পারি ৷’’
এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা সমীক্ষা করতে যাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের চোর নেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ অন্তত 50 শতাংশ জায়গায় সমীক্ষক দলের সঙ্গে রফা হয়েছে এক লক্ষ টাকায় অযোগ্যদের নাম রেখে দেওয়ার জন্য ৷ সমীক্ষক দলের সদস্যরা দেখছেন যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোর ৷ তাহলে তাঁরা নিজেরা কেন লুটে নেবেন না !
শুভেন্দু জানিয়েছেন, এই ইস্যুতে বিজেপি আদালতের দারস্থ হবে এবং প্রতিবাদে রাজপথে নামবে । তাই তিনি সকলের কাছে আহ্বান করেছেন যে আবাসে দুর্নীতির খবর পেলে ইমেলে অভিযোগ জানানোর জন্য ৷ বিজেপি সেইসব অভিযোগগুলো নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবে ও প্রতিবাদেও পথে নামবে । মনে রাখতে হবে এটা জনগণের করের টাকা ।
তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেহাল দশার অভিযোগ তুলেছেন ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি এসএসকেএমে জং ধরা কাঁচি অপারেশন থিয়েটারে ভেঙে যাওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন ৷ তাঁর দাবি, 13 বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় স্বাস্থ্য বাজেট হয় না ৷ প্রশ্ন-উত্তর পর্ব হয় না । তাই স্বাস্থ্য নিয়ে বিরোধীদের কোথাও কিছু বলার সুযোগ হয় না । গিলোটিনে পাঠানো হয় স্বাস্থ্য বাজেট । আর এজন্য দায়ী রাজ্যের অপদার্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যাঁর হাত সন্দীপ ঘোষের মাথার ওপরে ছিল ।
তন্ময় ভট্টাচার্য প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, যদি এতোটুকু ক্ষমতা থাকে, তাহলে তন্ময় ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে অভিযোগকারীর সামনাসামনি বসানো হোক । আর যদি এই অভিযোগের সত্যতা না থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে আইনে যা আছে সেটাই হোক । যদি সত্যতা বিচার করতে হয়, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এটা একটা স্বতন্ত্র তদন্তকারী দলকে দিয়ে দেওয়া উচিত ৷ আর যদি সিবিআইকে তিনি এই মামলা দিতে না চান, তাহলে রাজ্যে অনেক মহিলা নিরপেক্ষ আইপিএস পুলিশ অফিসার আছেন, তাঁরা এই বিষয়টির তদন্ত করুন ।
তিনি আজাদী গ্যাং ও বাংলাপক্ষকে তৃণমূলের শাখা সংগঠন বলে কটাক্ষ করেন ৷ গুটকায় নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানান ৷ পাশাপাশি দেশি মদ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেন ৷