কলকাতা, 1 অগস্ট: নয়া তিন ফৌজদারি আইনের বিরুদ্ধে রাজ্য বিধানসভায় আলোচনার পাশাপাশি এনআরসি ও লাভ জিহাদ নিয়ে আইনের দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ বৃহস্পতিবার নয়া তিন ফৌজদারি আইন নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার শেষ দিন ছিল । বুধবার দেড় ঘণ্টা এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার পর এদিনও বাকি দেড় ঘণ্টাও আলোচনা হয় ৷
সেই আলোচনায় বলতে গিয়ে কৌশলে এনআরসি ও লাভ জিহাদের মতো বিষয়ে আইনের দাবি তুললেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ দাবির বিষয়টি বিধানসভার কার্যপ্রণালীতে রেকর্ড করে রাখলেন ৷ জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) বা লাভ জিহাদ- দু'টি ক্ষেত্রেই সমর্থন রয়েছে রাজ্য বিজেপির ৷ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, বিরোধী দলনেতার এই দাবি অবশ্য বিধানসভার কার্যপ্রণালী থেকে বাদ দেওয়া হয়নি ৷ ফলে এই প্রস্তাবের আলোচনার সঙ্গেই লিখিতভাবে তা বিধানসভার কার্যপ্রণালীতে রেকর্ড হয়েছে ৷
রাজ্য রাজনীতিতে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে শাসক এবং বিরোধীর দুই ভিন্ন মেরুর অবস্থান রয়েছে ৷ বিজেপি মনে করে রাজ্যে অন্য দেশ থেকে অনুপ্রবেশ রুখতে এনআরসি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ৷ অন্যদিকে প্রথম দিন থেকেই সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সরাসরি এনআরসির বিরোধিতা করেছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তিনি কোনওভাবেই এ রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না ৷ লাভ জিহাদ নিয়েও তৃণমূলের বিরোধিতা সর্বজনবিদিত ৷ সেই জায়গা থেকে বিরোধী দলনেতার এই দাবি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ৷
এদিন এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় শাসক দলের তরফে বলেন দেবব্রত মজুমদার, তরুণ মাইতি, দেবাশিস কুমার, নাসিরুদ্দিন আহমেদ, হুমায়ুন কবির এবং মলয় ঘটক ৷ অন্যদিকে বিরোধী দলের পক্ষে বক্তৃতা দেন বিবেকানন্দ বাউরী, রবীন্দ্রনাথ মাইতি, অগ্নিমিত্রা পল, বঙ্কিম ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারী ৷
এদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "এই তিন আইন লোকসভায় পাস হয়ে গিয়েছে ৷ এখন তা সারা দেশে লাগু হয়ে গিয়েছে ৷ তাই তা নিয়ে এভাবে প্রস্তাব এনে আলোচনা অর্থহীন ৷ এই প্রস্তাব এনে হাউজের সময় নষ্ট ছাড়া, কোনও লাভ হবে না ৷ এখানে বলা হচ্ছে, যে বিরোধীদের বাইরে রেখে একদিন লোকসভা এবং রাজ্যসভায় এই বিল পাস করা হয়েছে, তা সত্যের অপলাপ ছাড়া অন্য কিছু নয় ৷"
নয়া তিন ফৌজদারি আইন নিয়ে বিজেপি বিধায়ক বলেন, "ভারতীয় আইন কমিশন বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ আমলে তৈরি আইনগুলি বদলে ফেলার জন্য সুপারিশ করেছে ৷ সেইমতো এই আইন আনা হয়েছে ৷ সংসদের আইন বিষয়ক স্থায়ী কমিটিও এই তিন আইন বদলের জন্য সুপারিশ করেছিল ৷ সেই সুপারিশগুলি মাথায় রেখেই এই তিন আইনে বদল আনা হয়েছে ৷" তিনি আরও বলেন, "এই আইন তৈরি করার আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে ৷ এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর লেখা চিঠিতে যে সুপারিশগুলি করেছিলেন, তাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে ৷ এরপরেও বিরোধীদের এড়িয়ে এই তিন আইন লাগু করা হয়েছে বলাটা মিথ্যাচার ৷"
এদিন শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, "আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বলছি তিনটি আইন আনুন ৷ উত্তরাখণ্ড সরকার এনেছে এনআরসি নিয়ে আইন ৷ রাজ্যে অনুপ্রবেশ রুখতে, রোহিঙ্গাদের আটকাতে এনআরসি আইন আনুন ৷ উওরপ্রদেশের সরকার লাভ জিহাদ নিয়ে আইন নিয়ে এসেছে৷ ৷ ধর্মান্তকরণ রুখতে এই আইন নিয়ে আসুন ৷ আমরা সবাই সমর্থন করব ৷ 1947 সালের 27 জুন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ও জ্যোতি বসু আমাদের এই বাংলা দিয়ে গিয়েছেন ৷ আমরা সেই বাংলাকে রক্ষা করতে চাই ৷"
এদিন সরকার পক্ষে তরফ মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার একদিকে বলছে ব্রিটিশ হ্যাংওভার থেকে বেরতে এই তিন আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে ৷ আবার নতুন আইনে হ্যান্ডকাপ পরানোর বিষয়টি ফিরিয়ে এনে ব্রিটিশ কলোনিয়াল হ্যাংওভার কি ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না ?" তাঁর মতে, নতুন এই তিন আইন অধিকাংশই পুরনো আইনের কপি পেস্ট ৷ মাত্র পাঁচ শতাংশ পরিবর্তন করা হয়েছে ৷ পুরনো ধারাগুলিকে এদিক-ওদিক করে দেওয়া হয়েছে ৷
আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক আরও বলেন, "ওরা বলছে তিনটি আইন ব্রিটিশ কলোনিয়াল আইন ৷ কিন্তু সিআরপিসি স্বাধীনতার পরে তৈরি হয়েছে ৷ পরবর্তীতে অনেকবার তা পরিবর্তনও হয়েছে ৷ আইন তৈরি হওয়ার পর এই নিয়ে আলোচনা অর্থহীন বলছেন বিরোধী দলনেতা ৷ কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের সাবজেক্ট ৷ রাজ্য সরকারের আইন তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে ৷ এমনকী রাজ্য চাইলে কেন্দ্রীয় আইনেও সংশোধনী আনতে পারেন ৷ সেই অধিকার এই আইনসভার রয়েছে ৷ ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একটি কমিটি গড়া হয়েছে ৷ সেখানে আমরা এই তিন আইন নিয়ে আলোচনা করছি ৷ কোনটা মানুষের পক্ষে কোনটা নয় ৷ কাজেই এই নিয়ে আলোচনা অর্থহীন বলার সঠিক নয় ৷"