নয়াদিল্লি/কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর: সুপ্রিম কোর্টের প্রবল রোষের মুখে পড়ল রাজ্য সরকারের 'রাত্তিরের সাথী' কর্মসূচি ৷ আরজি কর-কাণ্ডের পর মহিলাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ যেখানে রাতে মহিলাদের ডিউটি নিয়ে নানা বিধিনিষেধ রাখা হয়েছিল ৷ তবে রাতের ডিউটিতে মহিলাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না-করে, কেন তাঁদের কর্মক্ষেত্রে গণ্ডি টেনে দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্নে সরব হয় বিভিন্ন মহল ৷ এবার সেই একই যুক্তি শোনা গেল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের গলায় ৷
আরজি করে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের মামলার শুনানিতে আজ 'রাত্তিরের সাথী' কর্মসূচি নিয়ে শীর্ষ আদালতের কটাক্ষের মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে ৷ এক আইনজীবী এদিন বলেন,"রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, মহিলা চিকিৎসকরা 12 ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না এবং রাতে ডিউটি কম করানো বা না করানোর কথা বলা হয়েছে ।" একথা শুনে রুষ্ট দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, "এটা কী করে হতে পারে ? রাতে মহিলারা কাজ করবেন না ?"
বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ বলে, "পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচিত বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন করা । আপনার দায়িত্ব নিরাপত্তা প্রদান করা, আপনি বলতে পারেন না যে, মহিলারা (ডাক্তার) রাতে কাজ করতে পারবেন না । পাইলট, সেনাবাহিনী-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবাই রাতে কাজ করে । এটি তাঁদের (ডাক্তারদের) কেরিয়ারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টতা হবে । ডিউটির সময়সীমা সব ডাক্তারের জন্য যুক্তিসঙ্গত হওয়া উচিত ৷" শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেঞ্চকে বলে যে, তারা মহিলা ডাক্তারদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করবে ।
সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণে খুশি আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা ৷ তাঁরা এদিনও 'রাত্তিরের সাথী' কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন ৷ জুনিয়র চিকিৎসক রুমেলিকা কুমার বলেন, "একজন মহিলা চিকিৎসক হয়ে আমার কাছে এটা অত্যন্ত অপমানজনক বিষয় । নিরাপত্তার কথা বলে রাজ্য সরকার যে ব্যবস্থাগুলি নিয়েছিল, সেগুলো মূলত আমাদেরকে আটকে রাখার জন্য ।"
একই কথা শোনা যায় জুনিয়র চিকিৎসক লহরী সরকারের মুখে । তিনি বলেন, "এই বিষয়টা অনেকটা হয়েছিল মিনি স্কার্ট পরলেই ধর্ষণ হবে, তেমন । এটা আমাদের নিরাপত্তার জন্য বলা হয়েছিল, কিন্তু আমার মনে হয় না রাতের বেলায় একজন মহিলাকে কাজ থেকে সরিয়ে দিলে তাঁর নিরাপত্তা থাকছে । আমরা কাজ করতে চাই । নারী পুরুষ সমান ভাবে কাজ করতে চাই । আমরা শুধু নিরাপত্তা চেয়েছি, এর মানে আমরা ঘরে বসে থাকব তা নয় ।"
হাসপাতালের ডাক্তার এবং অন্যান্য কর্মীদের সুরক্ষার জন্য চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত । বেঞ্চ বলেছে, "আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে ডাক্তারদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে । রাজ্য সরকারের অন্ততপক্ষে সরকারি হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা উচিত । আমরা তরুণ ইন্টার্ন এবং ছাত্রদের সঙ্গে কাজ করছি যাঁরা কাজের জন্য কলকাতায় আসছেন ৷"
পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বেঞ্চকে আশ্বস্ত করেছে যে, প্রতিবাদী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না ৷ জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষে দুঁদে আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেন । তিনি আরও বলেন যে, অকুস্থলে যাঁরা ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের চেনেন এবং সেই তথ্য সিবিআইকে তাঁরা সিল করা খামে জানাবেন ৷