ETV Bharat / state

এখনও তাজা আয়লা-আমফানের স্মৃতি, দানার আগমনে ফের ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় সুন্দরবন

এর আগে সুন্দরবনবাসী সাক্ষী থেকেছেন আয়লা, আমফান, বুলবুলের মতো ঝড়ের ৷ এবার তাই ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে পড়ার আগেই আতঙ্ক তাঁদের চোখেমুখে ৷

Cyclone Dana
ঘূর্ণিঝড় দানা নিয়ে আতঙ্কে সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 23, 2024, 7:22 PM IST

হিঙ্গলগঞ্জ, 23 অক্টোবর: নদীপাড়ে বাস ! সবসময় মনে আতঙ্ক নিয়ে দিনযাপন করতে হয় বাসিন্দাদের । কখন কী হয়, এই ভেবে । তারই মধ্যে বাংলার আকাশে আরও এক দুর্যোগের ঘনঘটা । আর তা শোনার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় দানা'র কালো মেঘের আতঙ্ক গ্রাস করেছে সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ।

বিশেষ করে দানা'র ঝাপটার ক্ষতির আশঙ্কায় তটস্থ হয়ে রয়েছেন উত্তর 24 পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁ-সহ একাধিক নদীপাড়ের বাসিন্দারা । আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের । তাই তো ঘরবাড়ি ছেড়ে নদীর তীরে এসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধুই ভাবছেন, এ যাত্রায় কী হবে ? নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে আবারও ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে না তো ? এই প্রশ্নই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে সুন্দরবনবাসীকে।

ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় তটস্থ সুন্দরবনবাসী (ইটিভি ভারত)

ইতিমধ্যে দানা'র প্রভাবে উপকূলবর্তী জেলাতে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত । প্রশাসনও সক্রিয়, যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে । বিশেষত, উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে । তারপরও আশঙ্কা এবং আতঙ্ক নিয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের । আতঙ্কের নেপথ্যে রয়েছে বেহাল নদী বাঁধ ।

হিঙ্গলগঞ্জের রায়মঙ্গল, কালিন্দী, ডাসা, বেতনী-সহ একাধিক নদী বাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে । যার ফলে আশঙ্কা বেড়েছে বাসিন্দাদের । তবে, ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে পড়ার আগেই সেই সমস্ত নদী বাঁধ মেরামতে তৎপর হয়েছে সেচ দফতর । এমনটাই জানা গিয়েছে প্রশাসন সূত্রে । এর আগে আয়লা, আমফান, বুলবুল, যশ - একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের 'আঘাত' এসেছে সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকায় । যার সাক্ষী থেকেছেন সেখানকার বাসিন্দারা । আর তা প্রত্যক্ষ করতে পেরেই ঘূর্ণিঝড় 'দানা' চোখ রাঙাতে শুরু করায় শঙ্কিত সুন্দরবনবাসী । আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা ৷

Cyclone Dana
নদী বাঁধের বেহাল দশা (নিজস্ব ছবি)

উপকূলবর্তী সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জের উপরেও এই ঘূর্ণিঝড় যথেষ্ট আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে । তাই এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগেই আতঙ্কিত হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি, সাহেবখালি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ । এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, "দীর্ঘদিন ধরে নদী বাঁধ সংস্কার হয়নি । তাই একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় এলাকা । হিঙ্গলগঞ্জের রায়মঙ্গল অথবা কালিন্দী । একের পর এক নদী বাঁধের বেহাল দশা । কোথাও নদীবাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে । কোথাও আবার নদী বাঁধের বেশিরভাগ অংশই ধুয়ে চলে গিয়েছে নদীতে । আর এই পরিস্থিতিতে যদি ঘূর্ণিঝড় এই এলাকায় আছড়ে পড়ে তাহলে নদীর জলের চাপে বাঁধ ধরে রাখতে পারবে না । বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা ।"

Cyclone Dana
আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে সুন্দরবনবাসীর (নিজস্ব ছবি)

এ দিকে, নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে শুধু ঘরবাড়িরই ক্ষতি হবে না, ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষিরাও । সূত্রের খবর, এই সময় আমন ধানের মরশুম । এলাকার চাষিরা সবে আমন ধানের চাষ করেছেন । নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবনের পরিস্থিতি তৈরি হলে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাঁদেরও ।

এই বিষয়ে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা মলয় মণ্ডল বলেন, "আমরা নদীর পাড়ে বসবাস করি । খুব আতঙ্কে রয়েছি । রাতে ঘুম নেই । নদীর ভাঙনে চিন্তায় থাকতে হয় আমাদের । দীর্ঘদিন নদী বাঁধের কোনও সংস্কার হয়নি । সেকারণে যেকোনও সময় নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে । প্রশাসন নদী বাঁধ মেরামতের দিকে যদি নজর দেয়, তাহলে খুব উপকার হয় । আমরা চাই, এর একটা স্থায়ী সমাধান হোক ।"

Cyclone Dana
আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে সুন্দরবনবাসীর (নিজস্ব ছবি)

একই সুর শোনা গিয়েছে কালিন্দী নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা অনিল কয়ালের গলাতেও । তাঁর কথায়, "আয়লা, আমফান, বুলবুলের মতো ঘূর্ণিঝড় প্রত্যক্ষ করেছি । সেসব ভয়াবহ দিনের কথা আজও ভুলিনি । আমরা চাই, পরিবার নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বসবাস করতে । কংক্রিটের বাঁধ কিছু জায়গায় হয়েছে ঠিকই । কিন্তু, বেশিরভাগ জায়গায়, বালির বস্তা, মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নড়বড়ে বাঁধ । সেই নড়বড়ে বাঁধ যে কোনও সময় ভেঙে বাড়িঘর প্লাবিত হতে পারে ।"

Cyclone Dana
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মাইকিং করছে (নিজস্ব ছবি)

যদিও হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমরা সবসময় যোগাযোগ রেখে চলেছি । তাঁদের নির্দেশ মতোই যাবতীয় প্রস্তুতি এবং উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । ফ্লাড শেল্টারে শুকনো খাবার, জলের পাউচ যেমন মজুত রাখা হয়েছে, তেমনই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলার টিমও । নদী বাঁধের দিকে আমরা তীক্ষ্ণ নজর রেখেছি । সেরকম কিছু হলে সেচ দফতর ব্যবস্থা নিচ্ছে ।"

Cyclone Dana
নদী বাঁধ মেরামতে কাজ চলছে (নিজস্ব ছবি)

অন‍্যদিকে, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালির নদী তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করার কাজ শুরু করেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ।

হিঙ্গলগঞ্জ, 23 অক্টোবর: নদীপাড়ে বাস ! সবসময় মনে আতঙ্ক নিয়ে দিনযাপন করতে হয় বাসিন্দাদের । কখন কী হয়, এই ভেবে । তারই মধ্যে বাংলার আকাশে আরও এক দুর্যোগের ঘনঘটা । আর তা শোনার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় দানা'র কালো মেঘের আতঙ্ক গ্রাস করেছে সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ।

বিশেষ করে দানা'র ঝাপটার ক্ষতির আশঙ্কায় তটস্থ হয়ে রয়েছেন উত্তর 24 পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁ-সহ একাধিক নদীপাড়ের বাসিন্দারা । আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের । তাই তো ঘরবাড়ি ছেড়ে নদীর তীরে এসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধুই ভাবছেন, এ যাত্রায় কী হবে ? নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে আবারও ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে না তো ? এই প্রশ্নই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে সুন্দরবনবাসীকে।

ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় তটস্থ সুন্দরবনবাসী (ইটিভি ভারত)

ইতিমধ্যে দানা'র প্রভাবে উপকূলবর্তী জেলাতে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত । প্রশাসনও সক্রিয়, যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে । বিশেষত, উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে । তারপরও আশঙ্কা এবং আতঙ্ক নিয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের । আতঙ্কের নেপথ্যে রয়েছে বেহাল নদী বাঁধ ।

হিঙ্গলগঞ্জের রায়মঙ্গল, কালিন্দী, ডাসা, বেতনী-সহ একাধিক নদী বাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে । যার ফলে আশঙ্কা বেড়েছে বাসিন্দাদের । তবে, ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে পড়ার আগেই সেই সমস্ত নদী বাঁধ মেরামতে তৎপর হয়েছে সেচ দফতর । এমনটাই জানা গিয়েছে প্রশাসন সূত্রে । এর আগে আয়লা, আমফান, বুলবুল, যশ - একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের 'আঘাত' এসেছে সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকায় । যার সাক্ষী থেকেছেন সেখানকার বাসিন্দারা । আর তা প্রত্যক্ষ করতে পেরেই ঘূর্ণিঝড় 'দানা' চোখ রাঙাতে শুরু করায় শঙ্কিত সুন্দরবনবাসী । আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা ৷

Cyclone Dana
নদী বাঁধের বেহাল দশা (নিজস্ব ছবি)

উপকূলবর্তী সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জের উপরেও এই ঘূর্ণিঝড় যথেষ্ট আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে । তাই এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগেই আতঙ্কিত হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি, সাহেবখালি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ । এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, "দীর্ঘদিন ধরে নদী বাঁধ সংস্কার হয়নি । তাই একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় এলাকা । হিঙ্গলগঞ্জের রায়মঙ্গল অথবা কালিন্দী । একের পর এক নদী বাঁধের বেহাল দশা । কোথাও নদীবাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে । কোথাও আবার নদী বাঁধের বেশিরভাগ অংশই ধুয়ে চলে গিয়েছে নদীতে । আর এই পরিস্থিতিতে যদি ঘূর্ণিঝড় এই এলাকায় আছড়ে পড়ে তাহলে নদীর জলের চাপে বাঁধ ধরে রাখতে পারবে না । বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা ।"

Cyclone Dana
আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে সুন্দরবনবাসীর (নিজস্ব ছবি)

এ দিকে, নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে শুধু ঘরবাড়িরই ক্ষতি হবে না, ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষিরাও । সূত্রের খবর, এই সময় আমন ধানের মরশুম । এলাকার চাষিরা সবে আমন ধানের চাষ করেছেন । নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবনের পরিস্থিতি তৈরি হলে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাঁদেরও ।

এই বিষয়ে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা মলয় মণ্ডল বলেন, "আমরা নদীর পাড়ে বসবাস করি । খুব আতঙ্কে রয়েছি । রাতে ঘুম নেই । নদীর ভাঙনে চিন্তায় থাকতে হয় আমাদের । দীর্ঘদিন নদী বাঁধের কোনও সংস্কার হয়নি । সেকারণে যেকোনও সময় নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে । প্রশাসন নদী বাঁধ মেরামতের দিকে যদি নজর দেয়, তাহলে খুব উপকার হয় । আমরা চাই, এর একটা স্থায়ী সমাধান হোক ।"

Cyclone Dana
আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে সুন্দরবনবাসীর (নিজস্ব ছবি)

একই সুর শোনা গিয়েছে কালিন্দী নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা অনিল কয়ালের গলাতেও । তাঁর কথায়, "আয়লা, আমফান, বুলবুলের মতো ঘূর্ণিঝড় প্রত্যক্ষ করেছি । সেসব ভয়াবহ দিনের কথা আজও ভুলিনি । আমরা চাই, পরিবার নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বসবাস করতে । কংক্রিটের বাঁধ কিছু জায়গায় হয়েছে ঠিকই । কিন্তু, বেশিরভাগ জায়গায়, বালির বস্তা, মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নড়বড়ে বাঁধ । সেই নড়বড়ে বাঁধ যে কোনও সময় ভেঙে বাড়িঘর প্লাবিত হতে পারে ।"

Cyclone Dana
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মাইকিং করছে (নিজস্ব ছবি)

যদিও হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমরা সবসময় যোগাযোগ রেখে চলেছি । তাঁদের নির্দেশ মতোই যাবতীয় প্রস্তুতি এবং উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । ফ্লাড শেল্টারে শুকনো খাবার, জলের পাউচ যেমন মজুত রাখা হয়েছে, তেমনই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলার টিমও । নদী বাঁধের দিকে আমরা তীক্ষ্ণ নজর রেখেছি । সেরকম কিছু হলে সেচ দফতর ব্যবস্থা নিচ্ছে ।"

Cyclone Dana
নদী বাঁধ মেরামতে কাজ চলছে (নিজস্ব ছবি)

অন‍্যদিকে, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালির নদী তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করার কাজ শুরু করেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.