কলকাতা, 16 অগস্ট: শক্তি তেমন নেই, শুধুমাত্র ইচ্ছেশক্তি আর জেদকে সম্বল করে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন এবং তার পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাবলির প্রতিবাদে শুক্রবার 12 ঘণ্টার বাংলা বনধ ডাকে এসইউসিআই ৷ এ দিন দিনভর পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দলের কর্মীরা ৷ বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে অবরোধ ৷ যেটুকু সমর্থন মিলেছে, তাকেই স্বাগত জানাচ্ছে দলীয় নেতৃত্ব ৷
ধর্মঘট সফল করতে এ দিন সকাল থেকেই কলকাতার পথে নামেন এসইউসিআই-এর নেতা-কর্মীরা ৷ সকালে দক্ষিণ কলকেতার যোগমায়া দেবী ল’ কলেজের সামনে পিকেটিং করেন দলের ছাত্র সংগঠন, এআইডিএসও-এর কর্মীরা ৷ কলেজের গেটের সামনে সংগঠনের ঝান্ডা আর প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা ৷ তাঁদের স্লোগানে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারি ও কঠোর শাস্তির দাবি উঠে আসে ৷ শুধু তাই নয়, বুধবার মধ্যরাতে মহিলাদের ‘রাতের দখল’ কর্মসূচি ভাঙতে আরজি কর মেডিক্যালে যে ভয়ঙ্কর দুষ্কৃতী তাণ্ডব চলেছে, তারও ধিক্কার জানান আন্দোলনকারীরা ৷ এই দুষ্কৃতীদেরও গ্রেফতারির দাবি তোলেন তাঁরা ৷
শুধু যোগমায়া দেবী ল’ কলেজ নয়, এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এআইডিএসও-এর নেতা-কর্মীরা ৷ পিকেটিং করা হয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে ৷ এসইউসিআই-এর তরফেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল বের করা হয় ৷ শ্যামবাজার থেকে একটি মিছিল বিধান সরণি ধরে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত যায় ৷ সকালের দিকে বাস-সহ অন্যান্য যানবাহনে ভিড় কিছুটা কম থাকলেও পরে শহরের রাস্তায় ভিড় বাড়ে ৷ অনেক জায়গায় বনধ সমর্থকরা পথ অবরোধও করে ৷ তবে বনধ প্রতিরোধে ব্যস্ততা দেখা যায় পুলিশেরও ৷ বহু জায়গায় বনধ সমর্থকদের মিছিল ভেস্তে দেয় পুলিশ ৷ গ্রেফতার করা হয় বনধ সমর্থকদের ৷
আরজি কর মেডিক্যালের ঘটনা নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় গোটা রাজ্য ৷ শুধু বিরোধীরা নয়, নৃশংসতার বিরুদ্ধে সরব রাজ্যের আট থেকে আশি ৷ ঘটনার প্রতিবাদে 14 অগস্ট মধ্যরাতে দলমত নির্বিশেষে আমজনতা পথে নেমে রাজপথের দখল নিয়েছিল ৷ সেই জন আন্দোলনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতেই সেই রাতে আরজি করে তাণ্ডব চালিয়েছিল দুষ্কৃতী বাহিনী ৷ হাসপাতালের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, তছনছ করে দিয়েছিল সমস্তটাই ৷ এনিয়ে বিরোধীদের চাপ আরও বাড়ছিল ৷ বাড়ছিল আমজনতার প্রতিবাদের ঝাঁঝ ৷ পরিস্থিতি বুঝে শুক্রবার পথে নামতে হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ৷ তিনিও দোষীদের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন ৷ গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ নিশ্চিতভাবেই রাজ্য সরকারকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছিল ৷ এ দিন সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের ৷
মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন এবং আরজি করে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের প্রতিবাদেই এদিন 12 ঘণ্টার বাংলা বনধ ডাকে এসইউসিআই ৷ ধর্মঘট নিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য এক বিবৃতিতে জানান, “আজকের ধর্মঘটে জেলা থেকে বিপুল সমর্থন পেয়েছি ৷ সমর্থন পেয়েছি কলকাতাতেও ৷ ধর্মঘট সফল করার জন্য সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি ৷ আরজি করের নৃশংস ঘটনা, পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে তার প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা এবং যখন চিকিৎসক সমাজ, মহিলা থেকে শুরু করে আমজনতা এই ঘটনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে সরব, যখন সবার গলায় একটাই দাবি, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ঠিক তখনই দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব সেই আরজি করেই ৷ তারা প্রতিবাদকারী চিকিৎসক ও নার্সদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে, ইমার্জেন্সিতে হামলা চালিয়েছে, রোগীদের অক্সিজেনের সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে ৷ এই ঘটনা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে স্তম্ভিত করেছে ।”
চণ্ডীদাসবাবু আরও বলেন, “এই পরিস্থিতিতে কোনও আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই আমরা একদিনে সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম ৷ আমরা তো বটেই, আমার ধারণা, এভাবে একদিনে কোনও দল সাধারণ ধর্মঘট ডাকেনি ৷ তবু আজ আমরা জেলায় জেলায় বিপুল সমর্থন পেয়েছি ৷ কলকাতা শহরেও যেটুকু সমর্থন পাওয়া গিয়েছে তার জন্য আমরা মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি ৷ আজ আমাদের 266 জন কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন ৷ তাঁদের মধ্যে 70 জন মহিলা ৷ আহত হয়েছেন 33 জন ৷ তাঁদের মধ্যে ন’জনের আঘাত গুরুতর ৷ পুলিশ নিজেই কলকাতা মেডিক্যালে আহত দু’জনকে ভর্তি করেছে ৷ আহতদের মধ্যে আমাদের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নবেন্দু পাল, এআইডিএসও-এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সিদ্ধার্থ ঘাঁটা, রাজ্য কমিটির সদস্য সুজিত জানাও রয়েছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী আজ ধর্মঘট করতে দেবেন না বলে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা পুরোপুরি গণতন্ত্রবিরোধী ৷ ধর্মঘটে সরকারি কর্মীরা অংশগ্রহণ করলে বেতন কাটা যাওয়ার ঘোষণাও চূড়ান্ত গণতন্ত্রবিরোধী ৷ আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি ৷ প্রতিবাদ সর্বস্তরে হওয়া প্রয়োজন ৷”