চন্দননগর, 30 অগস্ট: সরকারি হাসপাতালে হাজারো সমস্যার মধ্যে আশার আলো দেখাল চন্দননগর মহকুমা হাসপাতাল ৷ সীমিত পরিষেবা নিয়ে অসাধ্য সাধন করেছেন চন্দননগরের এই ছোট হাসপাতালের চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাস ৷ এক মহিলার দেহে ছ'বছর ধরে গড়ে ওঠা একটি বিশালাকায় টিউমারের সফল অস্ত্রোপচার হল তাঁর নেতৃত্বে ৷
হুগলির ভদ্রেশ্বর বিঘাটির বাসিন্দা মিতা রায় ৷ তাঁর পিঠে একটি টিউমার তৈরি হয়েছিল, যা বড় হতে হতে পাঁজর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল ৷ তাঁর সন্তান বিশেষভাবে সক্ষম ৷ তাই প্রথমে অস্ত্রোপচার করতে রাজি হননি মিতা রায় ৷ কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করার মতো পরিস্থিতি তাঁর ছিল না ৷ তাই তিনি অন্য রকম চিকিৎসা করিয়ে যাচ্ছিলেন ৷ তাতে কোনও সুরাহা না পেয়ে রোগী চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে যান ৷ সেখানে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাস ৷
কী বলছেন রোগী মিতা রায় ?
মিতা রায় এখন সুস্থ ৷ এই সফল অস্ত্রোপচারে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাসকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ৷ এই প্রসঙ্গে মিতা রায় বলেন, "আমার পিঠে একটি বড় টিউমার ছিল ৷ 6-7 বছর ধরে ভুগছিলাম ৷ চন্দননগর হাসপাতালে যোগাযোগ করি ৷ চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাস আমার অস্ত্রোপচার করেছেন ৷ এখন আমি সুস্থ ৷ যা হয়েছে, সব বিনামূল্যে হয়েছে ৷" তিনি আরও বলেন, "আমি প্রথমে অপারেশন করাতে চাইনি ৷ কারণ, আমার একটি 30 বছরের বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে রয়েছে ৷ আমার পক্ষে কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না ৷"
চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাসের বক্তব্য
এদিকে চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাস বলেন, "রোগী প্রায় ছ'বছর ধরে ভুগছিলেন ৷ ডানদিকে এক ফুট x এক ফুট জুড়ে বড় টিউমার ছিল ৷ পরীক্ষা করে দেখা যায়, টিউমারটি প্রায় পাঁজর পর্যন্ত ছিল ৷" তিনি জানান, এভাবে আরও কিছু দিন থাকলে ক্যান্সার হতে পারত ৷ তাই এই জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি ৷
রোগী মিতা রায় তাতে রাজি হননি ৷ তাই বাধ্য হয়ে চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচার করেন ৷ অ্যানাস্থ্যাটিক চিকিৎসক স্বরূপ পণ্ডিতের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে এই অস্ত্রোপচার হয় ৷ রোগীর শরীর থেকে যে টিউমার বের করা হয়েছে, তার ওজন 500 গ্রাম ৷
চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালের মতো তুলনামূলক ছোট হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার প্রসঙ্গে চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাস বলেন, "আমি রোগীকে প্রথমেই বলে ছিলাম জেলার হাসপাতালে অপারেশন করা ঝুঁকিপূর্ণ ৷" তিনি জানান, যে জায়গায় টিউমারটি ছিল, সেখান দিয়ে রক্তের শিরা-ধমনি রয়েছে, নার্ভগুলিও রয়েছে ৷ চিকিৎসক বলেন, "ছ'বছর ধরে টিউমারটি ছিল ৷ সেখানে ক্যান্সার হতে পারত ৷ ক্যান্সার হলে টিউমারটি বের করতে অসুবিধে হত ৷ সৌভাগ্যক্রমে ক্যানসার হয়নি ৷ সেই ঝুঁকিগুলি নিয়েই অস্ত্রোপচার করি ৷"
তিনি আরও বলেন, "এই ধরনের অস্ত্রোপচার সাধারণত মহকুমা হাসপাতালে হয় না ৷ মেডিক্যাল কলেজের প্লাস্টিক সার্জারি ডিপার্টমেন্টে হয় ৷ কিন্তু রোগীর পক্ষে তা সম্ভব ছিল না ৷ আর রোগী ছ'বছর ধরে ভুগছেন ৷ তাই চেষ্টা করেছিলাম এখানে অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করেছিলাম ৷ আমরা এতে সফল হয়েছি ৷"
চন্দননগর হাসপাতালের সুপার সন্টু ঘোষ বলেন, "স্বল্প পরিষেবার মধ্যেও চেষ্টা করেছি যাতে এই অস্ত্রোপচার করা যায় ৷ এত বড় টিউমার সাধারণত হয় না ৷ তার আগে সকলে চেষ্টা করেন অস্ত্রোপচার করে নেওয়ার ৷ এটা করে হাসপাতালের প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়ছে ঠিকই ৷ কিন্তু এই ধরনের অস্ত্রোপচারে আরও পরিকাঠামো দরকার ৷ অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসককে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ৷ তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছেন তাতেই আমরা খুশি ৷"