বসিরহাট, 3 সেপ্টেম্বর: ক্লাসরুম থেকে টিচার্সরুম ! বাদ নেই শৌচালয়ও । বিদ্যালয়ের সর্বত্রই থই থই করছে জল । সেই জলে অর্ধেক ডুবে স্কুলের বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল ৷ শুধু কী তাই ! জমা জলে ডুবে মিড-ডে মিলের রান্নাঘরও । আর এই চরম ভোগান্তির মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে শিক্ষক শিক্ষিকাদের । গত এক মাস ধরে এমনই অবস্থা বসিরহাটের ভ্যাবলা এলাকার মোক্ষদা আদর্শ এফপি স্কুলের । স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সবকিছু জেনেও এই সমস্যা সমাধানের কোনও উদ্যোগ নেই প্রশাসনের । এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জল যন্ত্রণার কোনও সুরাহা না হওয়ায় দিন দিন পড়ুয়ার সংখ্যাও কমতে শুরু কমেছে স্কুলে ।
প্রতি বছর বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে বসিরহাট পুরসভার 18 নম্বর ওয়ার্ডের মহামায়া কলোনি । এবারও ব্যতিক্রম হয়নি তার । এই কলোনিতেই রয়েছে এফপি স্কুলটি ৷ ফলে এবারও বর্ষার জল ঢুকে পড়েছে স্কুল চত্ত্বরে । এদিকে বৃষ্টির জল জমতেই স্কুলের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিষধর সাপ ও বিভিন্ন পোকামাকড় ৷ সঙ্গে জমা জলের দুর্গন্ধের কারণে রোগ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে ৷ এই মুহূর্তে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা 130 জন ৷ তবে স্কুলের এই দুরাবস্থার কারণে হাতে গুনে 10 থেকে 12 জন স্কুলে আসছে ৷ সাপের কামড় থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে তাদেরকে নিয়ে স্কুলের দোতলায় চলছে পড়াশোনা ৷ একপাশে আবার মিড-ডে মিল রান্নার কাজও হচ্ছে ৷ ফলে কার্যত দুর্ভোগকে নিত্যসঙ্গী করেই স্কুলে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷
স্কুলের এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য এলাকার বেহাল নিকাশি ব্যবস্থাকেই দায়ী করছে কর্তৃপক্ষ । প্রতিবছর এলাকার একই ছবি ৷ এদিকে সবকিছু জানা সত্ত্বেও কোনও রকম উচ্চ-বাচ্চ করে না স্থানীয় প্রশাসন ৷ এমনকী, স্কুলের বিষয়েও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন বলে অভিযোগ ৷ রোজ এই জমা নোংড়া জল পেরিয়ে স্কুলে আসে রাজদীপ দেবনাথ ৷ ছোট এই ছাত্রের কথায়, "জলের মধ্যে সাপ, পোকামাকড় ঘুরে বেড়ায় । তাই, ভয়ে অনেকেই স্কুলে আসতে চাইছে না । জল ডিঙিয়ে স্কুলে আসতে আমারও খুব ভয় লাগে ৷"
স্কুলের এক শিক্ষিকা রিতা রায় বিশ্বাস বলেন, "বিগত পাঁচ বছর ধরে এই অবস্থা চলছে এখানে । ক্লাসরুম, মিড-ডে মিল রান্নাঘর, সমস্ত জায়গা জলমগ্ন । স্কুলের সামনের রাস্তাতেও এক হাঁটু জল । সেই জলে সাপ, পোকামাকড় ঘুরে বেড়াচ্ছে । ভয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসতে পারছে না । এটা দু-এক দিনের ঘটনা নয় । প্রতি বছরই একই সমস্যা । প্রধান শিক্ষক প্রশাসনের সব স্তরেই বিষয়টি জানিয়েছেন । কিন্তু, কোনও সুরাহা দেখছি না । আমরা চাই, রাস্তা ও নিকাশি নালা সংস্কার হোক ।"
বিষয়টি নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ প্রসাদ দাস বলেন, "জল তো দীর্ঘদিন ধরেই জমে রয়েছে । কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না । সমস্যা হচ্ছে সকলেরই । সব জায়গায় জানিয়েছি । কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয়নি ।" অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে বসিরহাট পুরসভার চেয়ারম্যান অদিতি মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ।