কুশমন্ডি, 10 জুলাই: স্কুল চলাকালীন স্কুলের মধ্য়েই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডিতে ৷ বুধবার ঘটনাটি ঘটে কুশমণ্ডি কচড়া হাইস্কুলে ৷ মৃত ছাত্রের নাম অভিজিৎ সরকার (12) ৷ সে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জেরেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ৷
তাই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিবার ও গ্রামবাসীরা ৷ অভিযোগ, শিক্ষকদের স্কুলে আটকে রেখে চলে বিক্ষোভ । স্কুলে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব চালায় গ্রামবাসীরা । প্রধান শিক্ষক-সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে মারধর করা হয় ৷ স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । বেশকিছু স্কুল-শিক্ষকের বাইকেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । পুলিশ গিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি ৷ গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের সামনে কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে পুলিশ ।
ওই স্কুলের ছাত্র শুভঙ্কর সরকার বলে, ‘‘মিড ডে মিল দেওয়ার সময় অভিজিৎ সরকার হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । আমরা সঙ্গে সঙ্গে ওই ছাত্রকে নিয়ে যাই প্রধান শিক্ষকের ঘরে । কিন্তু সেখানে অভিজিতের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি ৷ স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেউই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি । কিছুক্ষণের মধ্যেই স্কুলের ভিতরেই মারা যায় অভিজিৎ ৷’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিজিৎ অসুস্থ হওয়ার পরই হইচই শুরু হয় ৷ স্কুলের বাইরে খবর চলে আসে ৷ গ্রামবাসীরা পৌঁছে যায় ৷ অভিজিতের পরিবারের লোকও আসেন ৷ তাঁরাই অভিজিৎকে ইটাহার গ্ৰামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় ৷
মৃত্যুর খবর আসতেই স্কুল চত্বরের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ কচড়া উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফলতির অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখায় ৷ বিভিন্ন শিক্ষক-সহ প্রধান শিক্ষকের জবাবদিহি চাওয়া হয় ৷ অভিযোগ, তাঁরা সদুত্তর দিতে না পারায় স্কুলের সামনে থাকা একটি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা ৷ স্কুলে ভাঙচুর চালানো হয় ৷ মারধর করা হয় শিক্ষকদের ৷
এই পরিস্থিতির খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে যায় কুশমণ্ডি থানার পুলিশ ৷ তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ৷ পরে গঙ্গারামপুরের এসডিপিও দীপাঞ্জন ভট্টাচার্যর নেতৃত্বে আরও পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে ৷ তার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে ৷
স্থানীয় বাসিন্দা ভোলানাথ দাস বলেন, ‘‘টিফিন চলাকালীন বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে যায় ৷ কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেনি । আমরা প্রধান শিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষকের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি ।’’ গঙ্গারামপুরের এসডিপিও দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ এই নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কারও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি ৷ মেলেনি মৃতের পরিবারের প্রতিক্রিয়াও ৷